বেলায়েত মাছুম
,
  • বাড়ি
  • কবিতা
  • গদ্য
  • প্রযোজনা
  • সংযুক্তি
    • অ-কথা
    • সংকলন
      • অঞ্জন দত্তের গান
      • শাহ্ আব্দুল করিমের গান
      • কল্পকান্ত সদাই'র গান
      • অ-সংযোগ
    • ভ্রমণ
    • আমি
  • ISSUU
  • ছবি
  • বই
    • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে
    • পাখীদের পানশালায়


১.
গতকাল আমার মৃত্যু হলো ভাবি
স্বর্গ কিংবা নরকের দিকে না গিয়ে ঘাসের দিকে যাই
আমার দেহভার ঘাসগুলো পরম যতনে আগলে রাখে
আর রাত হলে কুয়াশারা চুপি চুপি গতর ভিঁজিয়ে দেয়
মাতাল বনের পাখিরা ঝাকে ঝাকে ফিরে আসে
কোন কোন পাখির বিলাপে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়
ভাবি গতকাল আমার মৃত্যু হলো।

২.
আমার সংসার নাই এ কথা পাখিরাও জানে
মানুষ না থাকা ঘরের জানালার গ্রীল ক্ষয়ে যায়
দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়ে
সংসার নাই এমন মানুষ তবু কোথাও যেতে পারেনা
খোলা দরজায় কেউ যেন আলপিন গেঁথে রাখে
আমার পায়ে জুতা পরা আছে
গতবার ভ্রমণের দাগ এখনো ঝলমলে করুণ
আমার সংসার নাই এই স্মৃতি মানুষ ভুলে গেছে।

৩.
অন্ধ চোখে রোদ-চশমা লাগিয়ে ঘুরছি
পাখিদের কলতান, শিশির ঝরার শব্দ
পাতার উপর শিশুর হেটে চলে যাওয়া
মৃত্যু উন্মুখ পাথরের উপকথা শুনছি।

৪.
সাইকেলে  চড়ে আমি কোথাও চলে যাবো একদিন
বাড়ি ফেরার তাড়া থাকবেনা
সকল দরজা আমার দিকে চেয়ে রবে
উদাস পাখিরা গান গাইতে গাইতে দূরের বনে চলে যাবে
মনে হবে একদিন আমি ঘরগামী ছিলাম
জানালায় জানালায় হাওয়ার উৎসব
মৃত ঘাসেরা উড়তে উড়তে ক্লান্ত আমার উঠোনে থামে
একদিন আমি কোথাও চলে যাবো দূরে
তোমার ঈর্ষার বাগানে তবু কিছু ফুল
আমার অন্ধ চোখে আনন্দ নিয়ে আসবে।

৫.
ডাকছে কোথাও জোনাকি, শুনতে পাচ্ছি না শব্দ
ফুরিয়ে যাচ্ছে রাত, কোথায় দাড়াবো
শব্দ টানছে বোবা সুরে,
কোথায় ফুলেরা থাকে, কোথায় মায়া হরিণ?
হরিৎ বনের কিনারে জ্বলছে আগুন
আমার ঘরে, শূন্য তাপে দেয়াল ঘেমে উঠে
আয়ুর মতন কোথাও পুড়ি যাচ্ছি।

৬.
দেখার দিন প্রায় শেষ
শরতের মগ্ন পাখিটা ওড়ে যায় যায়
জানালার গ্রীল ভেঙে উপচে পড়ছে হাওয়া।
আমাদের এমন সন্ন্যাস লাগা ভোর
পালিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের গলি-গালা ধরে।

৭.
কোন তদবির ছাড়াই পৌছে যাচ্ছে হাওয়া—
কোন আশংকা ছাড়াই আঁতকে উঠছে হৃদয়—
এমন কাকতাল চারিপাশে—
হেমন্তের নাতিউষ্ণ ধুলেরাও বুঝি
গেয়ে উঠবে তোমার নামটি ধরে।

৮.
হাওয়া এমন অন্ধ— জানালা বুঝে না।
কার বাড়ি থেকে কার বাড়ি যায়
দুয়ারে ওৎপেতে রয়
শংকা হয়ে বেঁজে ওঠে সুরে।
এমন হাওয়া তোমারে ছুয়ে যায়
সংকোচ ভুলে।

৯.
তোমাকে ডাকার নাম নাই আর
কথার সরোবর ধরে
তলিয়ে যাচ্ছে অর্ধেক রাত—
আর বাকী অন্ধকার— নেশার পেয়ালা হয়ে
ডাকছে নিরালা ঝড়ের ভেতর।

১০.
কানে বাঁজছে গুনগুন আওয়াজ
পাখিটার নাম জানি না—
জানালা খুলে পড়ে যাচ্ছে হাওয়া
উড়তে উড়তে মনে হয়
পাতা হয়ে যাচ্ছি শুধু আমি।



বেলায়েত মাছুম
প্যারিস/২০২৩


 

Bangla poetry, Bengali poetry, Bangla poem, Bangladeshi contemporary poetry

পৃথিবীতে আরও এক জুলাই যায়। আর আমি আমাকে নিয়ে এই পৃথিবীতেই ঘুরতে আছি,— আনন্দ-ব্যথা নিয়ে।  তীব্র রোদে হাটতে থাকি,  আবার হিম শীতল সন্ধ্যায় গা'য়ে কম্বল জড়িয়ে বসে রই। 

পৃথিবীর কোথাও এখন বর্ষা। তুমুল বৃষ্টির ভেতর ছাতা ধরা আমি নাই। হয়তো আছি! হয়তো আরও বেশি করেই আছি।


১.

যত আনন্দ আজকে রাতেই হোক
কাল ভোর হবে কি না আমার
কে জানে—

হয়তো জানালায় ভোরের আলো
হয়তো বাতাসে প্রিয়তমার হাসি
আমার শরীল ছুয়ে যাবে—
কে জানে—


কে জানে কোথায় যাব
কে জানে কোন বনের ভিতর
পোষা পাখিটি গাইতে আছে—
শুনতে পাই বধির কানে, কে জানে—


দুপুরের রোদ উঠোনে থামেনা
মায়ের হাসেরা সন্ধ্যায় ফিরে আসে—
আমিও ফিরে যাব?
পথহারা লোকও কারো ঘরে থামে
কে জানে—



‌ওল্ডহাম
২৮/০১/২৩





২.

অর্ধেক রাত পড়ে আছে বিছানায়—
দেয়ালে ঘড়ির কাটা ঘুরছে,
তন্দ্রাল চোখে অশরীল ছায়া
কে হেটে যায় গোপন বারান্দা ধরে—


তোমার মাতাল চুলেরা হাওয়ায়
নাম ধরে ডাকে যদি—
বধির কানে যদি শব্দের রেওয়াজ
আর দেয়াল ঘামতে থাকে
আর জানালা ওড়ে যায় ভয়ে
অর্ধেক রাত পার হয়ে দাড়াবো হেসে—


আমি বুঝি উড়ালে আছি
গাঙ ধরে, পাখিটির ভাঁজে—
তেমন শব্দের ঝাঁঝ আমার ঠোঁটে নাই
অর্ধেক রাত পেরিয়ে ঘুমাবো শেষে।



ওল্ডহাম
০৯/০২/২০২৩






৩.

কোথায় তোমার নিঝুম দ্বীপেরা—
হাঠতে হাঠতে পাথুরে বাগান—
ফুলের কলি ঝরে যাওয়া পথে
হাত ঘড়িটি হারিয়ে ফেলেছি আজ।


কোথায় আমার কোলাহলে দুপুর
উড়াল থামেনা এমন পাখিটির গান—
আওয়াজে মুখর মাতাল ঘড়িটি বুঝি
ফেলে গেছে নিজ্ শব্দের তার।



ওল্ডহাম
০১/০২/২০২৩






৪.

বাকী রাত নদীটি— নদী তীর ধরে
আমার পায়ের কাছে, বসে তন্দ্রায়—
ঘুমাবো বলে হাটতে হাটতে থামি
যদি খেয়ালে তোমার চোখ জেগে ওঠে।


তুমি কি নদীটারে ডাকো
উষ্ণ তাপে শুকাবে আলনায়—
যদি ডুবে যাও
আর চোখের পাতায় তৃণ লেগে থাকে—
আমি শূন্য বালুকণা হয়ে
নদীর অতলে ডুবে যাব— হায়।


বাকী রাত নদীটি— নদী তীর হয়ে
গত সন্ধ্যার আলো অচিন রারান্দায়।



ওল্ডহাম
১২/০২/২০২৩







৫.

কেন এত দীর্ঘ হচ্ছে হাওয়া—
কেন ছায়া পেরিয়ে যাচ্ছে মায়া হরিণের দল?
ভাবতে ভাবতে একটা মৃত সমুদ্র
দাড়াতো চাইলো, সবুজ ঘাস ফড়িঙের পাশে।


পায়ের পর পা রেখে চমকে উঠছি আমি
পাঠশালা থেকে অদূর গোলাপের বন,
এক দীর্ঘ হাওয়া —
মাছ সংক্রান্ত বিলাপ নিয়ে হাজির হলো ঘর।


মৃত পাখিটির মত আমি—
হাওয়া ভুলে পড়ে রইলো ভোর,
মায়া হরিণেরা চলে গেলো বনের দিকে—
এমন আশংকা—
এমন ফুল ঝরা গোলাপের বন
ইশারা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে পায়।




ওল্ডহাম
১৯/০২/২০২৩




৬.

মরমি ধ্বনিরা পুড়ে যাচ্ছে আলনায়
কন্ঠ জুড়ে মাতাল সরোদ তার—


ঘড়ির তিনটি মাত্র পা—
আমার দিকে সেই মিতালী মুখর চোখ,
তাপের আলিঙ্গন ভেঙে,
উঠে যাচ্ছে শরীলের আসক্ত লোম।


কোথায় রেখে আসি পথ —
পাশ কেটে ওড়ে যাচ্ছে বনেলা ঘোড়ার দল
মরমি ধ্বনিরা ডাকছে সন্ন্যাস বনে
এমন শীতল—
এমন উষ্ণ কোলাহল ভেঙে—
উড়ালে আমার ভবঘুরে দুই পা।



ওল্ডহাম
০৩/০৩/২৩





৭.

যেন বুনো শৈবাল হাতে দাড়িয়ে আছি
যেন উদ্বাস্তু হাওয়া নিয়ে যাচ্ছে কোথাও,
রোদাক্রান্ত চোখ—
তন্দ্রামাখা ভোরে ভাবছি তোমারে, হায়—
আমার অসংকোচে হাত।


কোথায় ছুঠে চলেছে নিরালা নদীটি
পড়ে আছে উৎসব ভাঙা জামা—
তোমার হাতের থেকে দূর
উদগ্রীব হয়ে আছে অসংখ্য ছোয়া।




ওল্ডহাম
০৫/০৩/২০২৩




৮.

ইশারার মাদক ভুলে কোথায় চলে যাব?
যদি এমন তুষার বন থাকে—
মেঘেরা এত উষ্ণ হয়ে ঝরে যায় কেন?


কেন পাতার পল্লব ঘিরে আছে হাওয়া
সহজ ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে ঝড়ে—
আসক্ত মৌমাছিরা
গিয়েছিলো প্রথম কোন গোলাপ ভ্রমণে?


ইশারার মাদক ভুলে কোথায় পড়ে আছি আমি
কান্নারত শিশিরেরা বুঝি জানে।



ওল্ডহাম
০৭/০৩/২০২৩





৯.

কথার সুত্র ধরে হাটতে আছি
এমন মরমীয়া পথ—
সুরের আলনা নিয়ে তুমি আজ নাই
কোথায় এমন ভোর আলগা হয়ে আছে।


দূরে মানচিত্র—
আঙ্গুল নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হাত—


সেই গোপন সুত্র ধরে
কথার দেরাজ—
হাওয়ার দাপট নিয়ে শূন্য হয়ে আছে।



ওল্ডহাম
২১/০৫/২০২৩







১০.

নিশানা ভুলে ওড়ে যাচ্ছে তীর—
দরজার আড়াল নিয়ে দাড়াবো
যদি এমন ফুল আমার দিকে—
আমার দিকেই থাক করা থাকে।


সুদর্শন তীক্ষ্ণ ফলাগুলো
বুকের পাঁজর ছুয়ে যদি ঘুমাতে চায়—


কার নিশানায় বুক পেতে রাখি
সকাল সকাল সূর্যের সাথে দেখা হয়।
একটা কালো বিড়াল যদি থাকতো
হয়তো তারে গল্পটা বলা শেষে
নিশানার দিকে—
ধীর, সেই বক পাখিটির মত
ওড়ে যেতাম নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায়।



ওল্ডহাম
৩০/০৫/২০২৩





বেলায়েত মাছুম
প্যারিস/জুলাই/২৩
Sylheti poetry by Belayat Masum



১.
দরজা খুইল্লা উবাই
শীতর হাওয়া আমারে ছইয়া যায়
কত দূর থাকি ই হাওয়া আয়, জানি না
কত দুর আমার চউখ যাইত চায়
ইতা ভাবতে ভাবতে বেইল পুরায়।

হাওয়া ঘরো ঢুকি পড়ি থাকে
বিছনাত গড়াগড়ি করে,
আমার শরীল ধইরা নাচতে নাচতে
নাই অইযায়, আর
আমি উড়ি উড়ি সাকিন খুজি ।

কই থাকি ই হাওয়া আয়।


২.
কে উবাইয়া ডাকে আমারে
দুরই থাকি, ইশারায়,
দরজাত তালা নাই
লাগে আমার মন যাই যাই করে
আমি বুঝি না
কেনে ইলা দিন আমার যায়।


৩.
আমি গাছর বায় চাই
দেখি কউচ্ছা পাতা লতা লটকি আছে,
মনো অয় আমিও যাই
তারার লাকান আসমানোর গাওত
লটকি লটকি ঘুরাত থাকি!

ইতা দিন পরবাস অইগেছে
আইলর ঘাস
পথর কান্দাথ ফুল
মুড়াইল আশি লাগা ঢেউ
আমারে তইয়া কই গিয়া লটকি আছে।


৪.
আতও বেইল নাই
উঠানোও

পাও লইয়া পড়িগেছি
অলা মনে অয়

তুমি কত দূর থাকি আইলায়
ঘরো মধু নাই

আমি শরম মুখে মাততে আছি
তোমার খোজ নাই।



বোনাস: সিলেটি ভাষায় প্রেমের কবিতা

১.
লাগের হাওয়াত তোমার গন্ধ পাই
যে হাওয়া আমারে ছইয়া যায়
মনো অয় তার খরে খরে আমি ঘুরি
মনো অয় ঘুরতে ঘুরতে তোমার জানালত উবাই

ইলা দিন আমার নাই আর
তবু মনো অয় হাওয়া যদি তোমারে ছইয়া আয়
আমি মাতাল মাইনশর লাখান উড়তে থাকমু

হাওয়া যদি তোমার গন্ধ লইয়া আইত
দিন রাইত হাওয়ার লগে তোমার মাত অও মাত্তাম।


২.
কেনে আমি দূরই দূরই থাকি
তোমার ছায়া থাকি
তোমার মায়া থকি
ইলা অবুঝ কেনে আমার হৃদয়।


৩.
মনো অয় হিব্বার তোমার মাত হুনি
গাছর পাতারা যেলা দুলতে দুলতে মাতে
ঝড়র রাইত
যেলা স্বপ্নর ঘোরে উঠ পাখি উড়ে
তোমার মাত হুনতে হুনতে আমি বুঝি উড়ি।

দূর থাকি হুনা যায় কত কত গান
কত কত পাখি গাইতে গাইতে যায়
ইলা শব্দ কই আমি পাই
তোমার মাতার সুরে যেলা মাতাল অই।


৪.
দুনিয়াত কত ফুল ফুটে
সকল ফুলর থাকি তোমারে সুন্দর লাগে।

৫.
হিলা দিন কই গেল আইজ
খোয়াব তুমি আর নাই
ইলা কেনে আমার লাগে
হাওয়াত তোমার গন্ধ পাই।

৬.
যেলা সর্নলতা লটকি থাকে
লাগে তুমিও আছো

আমার চাইরো বায় তোমার মায়া ভরা চোখ
যেবায় চাই, যেবায় যাই
দেখি তোমারে,

আমি আটতে গেলে আটিনা
পড়তে গেলে পড়িনা
লাগে টাল মাইনশর লাখান
তুমি সর্নলতাত লটকি আছি।




©বেলায়েত মাছুম
ওল্ডহাম/২০২৩

 

Bangla love poems by Belayat Masum



কবিতা লেখতে গিয়ে কিছু প্রেমের কবিতাও লেখা হয়েছে। কবিতা আসলে প্রেমেরই হয়, প্রেম ছাড়া কবিতা হয় না কিন্তু প্রেমের বাইরে দাড়িয়েও কবিতা লেখা যায়। যেভাবেই বলি, ঘুরে ফিরে কবিতা আর প্রেম একই বৃত্তেই থাকছে। প্রেম থাকা সকলকেই অভিনন্দন। 


আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে


আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার পর্ব বলতে শীতকালটা ছিল
পৌষের আগে আগে যে রকম সন্ধ্যা নামে
ভেঁজা কুয়াশা ঠোঁটে মেখে ঘর ফেরত পাতি হাসের দল;
শুকনো ধুলো উড়তে উড়তে আমাদের জানালায় উল্টে যেত
ঘরের পর্দা আরো বেশি ভারি হয়ে উঠলে-
আকাশের রঙটা একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে গেলে
আমাদের সাক্ষাত বলতে ঐ সময়টাই ছিল।

দরজার বাইরে ঘুমিয়ে পড়তো মেটো আলো
খরচার ভয় ছিল
তবু সঙ্গম মুখর হাওয়া আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে উঠলে
দেয়ালে লেপ্টে থাকা হাস্নাহেনার গন্ধ শুকে শুকে ভ্রমণে যাওয়া যেত
আমাদের সাক্ষাত পর্ব বলতে ঐ সময়টুকুই ছিল।

গতবার যখন আলোটা নিভে গেল ভোরের আগে
দেয়াল ঘামতে ঘামতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো,
সূর্যটা এত আলসে ছিল যে জোনাকিরা গাইল নাদাইর গীত
আমরাও জড়তা ভেঙে শুনতে থাকলাম শিশির ঝরার শব্দ;
এইভাবে আমাদের সাক্ষাত শেষ হয়ে এল বলে
দারুণ শীতকালটা জমে গেলো।




উড়াউড়ির গল্প

আমাদের উড়াউড়ি নিয়ে কোন গল্প নেই কিংবা কোন চিত্রকর্ম; প্রাসাদের দেয়াল যত দীর্ঘ হয় অন্ধকারে- তার চেয়ে প্রশস্ত বুকের মাপে কোন মানচিত্র আঁকা হলোনা পাথর খুদে। ঘড়ির বয়স বেড়ে গেলো শুধু; তুমুল হাওয়া একদিন ছুয়ে দিলো আমাদের বিষন্ন চুলগুলো। 

গাছের পাতা হতে ঝরে গেলো টুপটুপ জল, আমাদের চোখ, পায়ের পাতা ভিঁজলো আসন্ন শীতের ধুলোয়। আরো অনেক হেমন্তী সন্ধ্যার মতো, অপার অন্ধকারে ডুবে গেলো আলোক রশ্মি। আর দূর হিমলায় শান্ত কুহকের ছায়ায় চুপচাপ, চুপচাপ মেতে রইল নিজের ভেতর। তবু আমাদের জন্য কোন গান, নৃত্যে সম'গীত গাইলোনা ঝি ঝি পোকার দল।

গত হওয়া দিনের বাড়তি স্মৃতি সমুহ নিয়ে একদিন আমরা মুখোমুখি হলে- আবার হয়তো বলা যাবে কোন্ কোন্ দুপুর আমাদের ঘামিয়ে দিলো; যাযাবর পাখিদের ঠোঁট কেন ফিরে গেলো নিজেদের ডেরায়, ঘড়ির কাঁটার অগুনতি ঘুর্ণন শব্দে কেমন করে মাঝ রাত ঝিমুতে থাকে।

আমাদের উড়াউড়ির শব্দে তন্দ্রাসক্ত কুয়াশা ঝরে যায়- এমন গল্প আর চিত্রের আগাম কল্পনা নিয়ে ভ্রমণে যাই। জরাগ্রস্ত দুপুরে শোকগান গাইতে গাইতে যখন সন্ধ্যা নামে, যখন প্রজাপতি আর উড়তে চায়না নিজের ডানায়- মনে হয় সকল শব্দেরা উৎকন্ঠা নিয়ে ফিরে আসে ঘড়ির ভেতর। 



আপনাকে/ ৩

আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে; এমন কিছু দিন- রোদ আর বৃষ্টির মাঝে ভাগাভাগি করে- আমি আর কোথায় দাড়াবো। একা তারার মতো দূর থেকে শুধু ধারনা নিয়ে আপনার থেকে-  আপনার ছায়ার থেকে- ছোয়ার থেকে- নিরুপায় দূরে থেকে যাবো।

ধারনা হয়- আপনার হাত সম্পর্কে আমার ভুল ধারনা আছে। এমন কথা আমি কারে আর বলি? ফুলেদের কাছে এ কথা বলতে পারিনা। আপনি বৃষ্টিতে ভিঁজে ঘরে ফিরে আসেন আর আলতো করে পশমী তোয়ালে ধরে ভেঁজা চুল শুকাতে থাকেন- দূরের তারা দূরে হাসতে থাকে।

আপনার হাত সম্পর্কে আরো ভুল ধারনা আছে- এমন কিছু কল্পনা আমি পোষী।


আপনাকে/৭

আপনারে আমি পাখির কথা বলি-
নরোম পালকে ঢাকা সাদা বক পাখির কথা;
তারা কেমন মৌন- 
হেটে যায় একা ধীর সেই মাছের দিকে।

আপনারে সেই ফুলের কথা বলা যায়
পাতার ভাঁজে শুয়ে মনে পড়ে যার-
একদিন এমন ছিলো-
অসম প্রেমের মতো
আপনার হাত ছুয়ে- সারা দুপুর ঘুরে
নিজেরে লুকিয়ে ফেলার স্মৃতি- সন্ধ্যার আলোয়।

এমন করে হয়তো বলে ফেলা যায় আপনারে
দূর থেকে দেখা দূরের স্মৃতি
অগণন তারার ভিতর একটি যে তারা
সন্ধ্যার আলোয় মুখোমুখি হয় নিঃসঙ্গ জানালায়।

একদিন জানবেন শব্দের ভেদাভেদ
সেই একা হৃদয় নিয়ে বসবেন পুরুষ-পাথরের কাছে;
ফুলেল স্মৃতি আর নদীর ঢেউ
বলবেন তারে এক এক করে;
স্বচ্ছ কাচের ভেতর আপনার পরিচিত অবয়ব
মুখোমুখি বসে একদিন আমার কথা শোনেন—
আমি আপনারে শুধু পাখির কথা— ফুলের কথা বলি।


যে শহরে তুমি নাই/২

মনে হয় বনের ভিতর বসে তসবি গুনি
কার নামে? তোমার, না তার—

আকাশ ভরা তারা
আমি গুনতে গেলেই শূন্য থেকে শুরু হয়
শেষ হওয়ার কোন দিন তারিখ থাকেনা—

আমার স্মৃতির যদি মরণ আসে
হিজলের ডাল থেকে সেই পাখি —
তোমার তদবির নিয়ে পৃথিবীর জানালা ঘুরে
আরো এক দিন — কার্তিকের ঝড়ের মত

তোমার নাম ধরে ডাকতে রবে—


যে শহরে তুমি নাই/৮

কোথাও সেই ইশারা পড়ে আছে
ঝড়ের রাতের মতন;
অন্ধ বাদুর গান গেয়ে ফিরে এমন রাত—
দেয়ালে কথার কাকলী মিশে আছে—

কোথায় তোমার চোখেরা আজ?
কোথায় হেটে চেলে গেছে চঞ্চল দুটি পা—
নীরব নদী তীর বুঝি ডাকবে নাম ধরে

এমন সুর হয়ে যদি উড়ে আসো
যদি আমি বর্ষার তুমুল ঢেউয়ে মাতাল হয়ে
ডুবতে থাকি—
ইশারা ভুলে—
কোথায় পালাবো আজ এমন তীব্র জ্বরে।



পাখিদের পানশালায়/১২

আমি যেন সেই হাওয়া
যেন কোন এক নারীর
কোমল হাতের নিচে
দাড়াই—

যেন আমি ঝরে যেতে পারি
তুমুল ঝড়ের সময়
কোন কোন জানালায়
নিজের মতো করে—

সেই দিন সেই রাত নাই
যখন পাখিদের পানশালায়
আমি এক নবিশ—

জোড়া চোখে দারুন ঘুম
তবু কিছু আলো
কিছু অন্ধকার
আমায় নিয়ে মেতে আছে যেন—

সেই হাওয়া
ঝড়ের সময়
মুখোমুখি বসি
শোনায় কথা
মনে হয় দূর
মনে হয় নারী
আমি এক লোক
বাসি দিন যায়
আঙ্গুল গুণে

পাখিদের পানশালায় যেন
আমি সেই লোক
বসে বসে ভাবি, যদি একদিন
হারাই ডানা— 

সহজ গল্প

সহজে গল্পটা বলা যায় তারে, দেখা হলে মুখোমুখি বসবার কালে, মেঘের মতন উড়া চুলের গন্ধ মেখে- পুরনো গল্প ভেবে আবার বলা যায় তারে; চশমার আভে ঢাকা চোখের ছবি, নদীর ঢেউ গুনা খাতায় রেখা টেনে টেনে। রাত নেমে এলে কুয়াশায় ডুবে, দেয়াল নাইতে নামে আমাদের জলে, ঘুরে ঘুরে একা একা নিজেদের ভিতর ব্যাকুলে ডুবতে থাকি গোলাপ বনে।

নগর উঠলে মেতে আলোর ছলে, অমীমাংসার রাত ভেবে কুহক ডাকে। পাথর বললে কথা জোছনাও মাতে; টগর, বকুল, জবা কত হিজল ঝরে; বর্ষার তুমুল গীত কর্তাল সুরে - আমাদের বাঁজায় আর দুলতে থাকি।

আমাদের গল্পটা বলা গেলে আর কাঁচের শরীর ভেবে শহরের ঘর, শ্যাওলার আল্পনায় আরো কিছু কাল- মাতম গাইতে থাকুক ঝরনা ধারায়। কাঠের জটর থেকে  বহুতল আওয়াজ, ফেরার পথ ধরে ধুলোর গরজ। আবার দেখা হলে  গল্পের পর, তার চোখ মুখ বৈঠার তালে -বেহাল সেতার ধ্বনি হাওয়ার ভরে- কতকাল থাকে আর ডুবুরীর ভাবে। সনাতন জলের কল শব্দে ঘুরে, আনন্দে মেতে রয় রুপসী রাতে।



বাকি রাত

বাকি রাতটুকু কেটে যাক নার্সারি বাগানে, চোখের পাতার কাছে
এক লাশকাটা ঘরে, অধল হয়ে গেলে পুরনো রুপার চামচ
পুকুর পাড়ের ঘাসে শুয়ে পড়া যাক-
এই রাতে ফুটে উঠুক দুধেল ফুল, সোনার দেরাজ খুলে
জুতোজোড়া পায়ে- পৌছার পথ ধরে কিছু আলো নিভুক;
ভাড়াটে ঘুমের বহর পুরিয়ে এলে, নিজেও পৌছে যাই ভ্রুণের শহর।

দখিন দুয়ার খুলে এক আলতার বরজ, আর সহজিয়া সুরভী মাখা
খুনের করাত। ভুলে ভরা দেয়ালিকায় রঙ কিছু লেপে-
হারানো গানের সুরে আমরাও মাতি।

বাকি রাত শুয়ে থাকি চাষার ঘরে, ফসল কাটার দিন
গনিয়ে এলে- কিছু বীজ বপন করি নদীর ধারে
আর কিছু পাকা ফুলের কুসুম শুকিয়ে রোদে-
নিজের দোকানেই সদাই সারি;
কুহুকাল ডুবে থাকি সিঁথি রেখা ধরে, নরম জাজিম ছুয়ে
ভেসে উঠা ভোরে, কেটে যাক আরো কিছু আবাদ সময়।



তোমায় ছুয়ে আসা হাওয়া

তোমায় ছুয়ে আসা হাওয়া, হয়তো
আমায় ছুয়ে যায়— আমি বুঝতে পারিনা প্রিয়;
মনে হয়— হই নিরুপায়।

গত হয় ফুলে রাঙা দিন
মরমে বাঁজে এই সুর— তুমি আমি পুরনো
সেই গত হওয়া ভোর— পাখির গানের মতো এখনো মলিন।
ডাকে কে, কে যাবে দূর— বুঝাতে পারিনা আর
এই যে দারুণ সময় নিদারুণ চলে যায়।

সূর্যের আলোয় আছে ঋণ
যদিও চাঁদ থাকে দূর দূর— এমন আপন আছে কোন
শোনায় সেই চেনা সুর— পাখির গানের মতো হয়েছো লীন।
কে আমায়, কে তোমায় ডেকে  গেছে বারেবার
একবার মোহিত করে—  আর না পায়।





নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

Translate

বেলায়েত মাছুম

নির্বাচিত লেখা

মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই | বেলায়েত মাছুম

১. মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই। আব্বার কবরের পাশে অচেনা এক লোকের মতো বসে থাকি। ধীরে- দূর পাহাড় থেকে ভেসে ঘোরা মেঘের সাথে চলতে থাকি। ঘাসের সাথে ...

সেরা পাঁচ

  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বেলায়েত মাছুম
      ১. তুমার আত থাকি কুন্তা খাইলে তুমার চউখো চউখ পড়লে  আমি টাল অইজাই পাতা যেলা পরি থাকে ঘাসর উপরে মনো অয় আমিও পরি থাকি হারাদিন, বিয়ান থাকি হাই...
  • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
      হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে  নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক। ১....
  • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    নৈশ সভা নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা; নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে- তার কথা কোন...
  • দিনলিপি | বেলায়েত মাছুম
    ১. এইভাবে একদিন লিখে রাখি জানালার কথা, দক্ষিণের হাওয়ায় ভাসা ফুলের রেণু,পাখির পালক হতে গুনগুন আওয়াজ; শব্দের ভেতর কাঁপা শোভন আলো, পা...
  • গত হওয়া শীত কিংবা বসন্তের কবিতা গুচ্ছ | বেলায়েত মাছুম
    আজ ১লা ফাল্গুন। দেশে শীত শেষ হলেও শীতল ভাবটা নিশ্চয় রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডেও শীত শেষ হয়ে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা আর ঝিরঝির তুষার...

গোলা । উগাড়

  • ▼  2023 (4)
    • ▼  সেপ্টেম্বর 2023 (1)
      • দেখার দিন প্রায় শেষ | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুলাই 2023 (1)
      • কথার সুত্র ধরে হাটতে আছি | বেলায়েত মাছুম
    • ►  এপ্রিল 2023 (1)
      • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমি শরম মুখে মাততে আছি | বেলা...
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2023 (1)
      • প্রেমের কবিতা | তোমায় ছুয়ে আসা হাওয়া ও অন্যান্য কব...
  • ►  2022 (6)
    • ►  ডিসেম্বর 2022 (1)
    • ►  নভেম্বর 2022 (1)
    • ►  অক্টোবর 2022 (1)
    • ►  জুলাই 2022 (1)
    • ►  মে 2022 (1)
    • ►  এপ্রিল 2022 (1)
  • ►  2021 (7)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2021 (1)
    • ►  জুলাই 2021 (2)
    • ►  জুন 2021 (1)
    • ►  মার্চ 2021 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2021 (2)
  • ►  2020 (9)
    • ►  অক্টোবর 2020 (1)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2020 (1)
    • ►  জুলাই 2020 (1)
    • ►  জুন 2020 (1)
    • ►  মে 2020 (1)
    • ►  মার্চ 2020 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2020 (2)
    • ►  জানুয়ারী 2020 (1)
  • ►  2019 (3)
    • ►  অক্টোবর 2019 (1)
    • ►  জুলাই 2019 (1)
    • ►  মে 2019 (1)
  • ►  2018 (5)
    • ►  ডিসেম্বর 2018 (1)
    • ►  জুন 2018 (1)
    • ►  মে 2018 (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2018 (1)
  • ►  2017 (6)
    • ►  আগস্ট 2017 (1)
    • ►  জুলাই 2017 (1)
    • ►  জুন 2017 (1)
    • ►  মার্চ 2017 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2017 (1)
    • ►  জানুয়ারী 2017 (1)
  • ►  2016 (8)
    • ►  ডিসেম্বর 2016 (3)
    • ►  জুলাই 2016 (1)
    • ►  জুন 2016 (1)
    • ►  মে 2016 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2016 (2)
  • ►  2015 (30)
    • ►  ডিসেম্বর 2015 (3)
    • ►  নভেম্বর 2015 (2)
    • ►  জুলাই 2015 (2)
    • ►  জুন 2015 (3)
    • ►  মে 2015 (7)
    • ►  এপ্রিল 2015 (6)
    • ►  মার্চ 2015 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2015 (3)
    • ►  জানুয়ারী 2015 (3)
  • ►  2014 (8)
    • ►  নভেম্বর 2014 (4)
    • ►  অক্টোবর 2014 (4)
  • ►  2010 (17)
    • ►  আগস্ট 2010 (5)
    • ►  জুন 2010 (1)
    • ►  এপ্রিল 2010 (11)

বিষয়

অ-কথা অ-গদ্য কবিতা গান ছবি প্রেমের কবিতা ভ্রমণ English Poetry
Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বেলায়েত মাছুম
  • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
  • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমি শরম মুখে মাততে আছি | বেলায়েত মাছুম
  • কথার সুত্র ধরে হাটতে আছি | বেলায়েত মাছুম

অন্যজন

  • মীর রবি
  • মুনিরা মেহেক
  • মুরাদুল ইসলাম
  • সুহান রিজওয়ান

যোগাযোগ

নাম


ইমেল *


বার্তা *


Copyright By Belayat Masum | Designed By OddThemes | Distributed By Blogger Templates