কথার সুত্র ধরে হাটতে আছি | বেলায়েত মাছুম

 

Bangla poetry, Bengali poetry, Bangla poem, Bangladeshi contemporary poetry

পৃথিবীতে আরও এক জুলাই যায়। আর আমি আমাকে নিয়ে এই পৃথিবীতেই ঘুরতে আছি,— আনন্দ-ব্যথা নিয়ে।  তীব্র রোদে হাটতে থাকি,  আবার হিম শীতল সন্ধ্যায় গা'য়ে কম্বল জড়িয়ে বসে রই। 

পৃথিবীর কোথাও এখন বর্ষা। তুমুল বৃষ্টির ভেতর ছাতা ধরা আমি নাই। হয়তো আছি! হয়তো আরও বেশি করেই আছি।


১.

যত আনন্দ আজকে রাতেই হোক
কাল ভোর হবে কি না আমার
কে জানে—

হয়তো জানালায় ভোরের আলো
হয়তো বাতাসে প্রিয়তমার হাসি
আমার শরীল ছুয়ে যাবে—
কে জানে—


কে জানে কোথায় যাব
কে জানে কোন বনের ভিতর
পোষা পাখিটি গাইতে আছে—
শুনতে পাই বধির কানে, কে জানে—


দুপুরের রোদ উঠোনে থামেনা
মায়ের হাসেরা সন্ধ্যায় ফিরে আসে—
আমিও ফিরে যাব?
পথহারা লোকও কারো ঘরে থামে
কে জানে—



‌ওল্ডহাম
২৮/০১/২৩





২.

অর্ধেক রাত পড়ে আছে বিছানায়—
দেয়ালে ঘড়ির কাটা ঘুরছে,
তন্দ্রাল চোখে অশরীল ছায়া
কে হেটে যায় গোপন বারান্দা ধরে—


তোমার মাতাল চুলেরা হাওয়ায়
নাম ধরে ডাকে যদি—
বধির কানে যদি শব্দের রেওয়াজ
আর দেয়াল ঘামতে থাকে
আর জানালা ওড়ে যায় ভয়ে
অর্ধেক রাত পার হয়ে দাড়াবো হেসে—


আমি বুঝি উড়ালে আছি
গাঙ ধরে, পাখিটির ভাঁজে—
তেমন শব্দের ঝাঁঝ আমার ঠোঁটে নাই
অর্ধেক রাত পেরিয়ে ঘুমাবো শেষে।



ওল্ডহাম
০৯/০২/২০২৩






৩.

কোথায় তোমার নিঝুম দ্বীপেরা—
হাঠতে হাঠতে পাথুরে বাগান—
ফুলের কলি ঝরে যাওয়া পথে
হাত ঘড়িটি হারিয়ে ফেলেছি আজ।


কোথায় আমার কোলাহলে দুপুর
উড়াল থামেনা এমন পাখিটির গান—
আওয়াজে মুখর মাতাল ঘড়িটি বুঝি
ফেলে গেছে নিজ্ শব্দের তার।



ওল্ডহাম
০১/০২/২০২৩






৪.

বাকী রাত নদীটি— নদী তীর ধরে
আমার পায়ের কাছে, বসে তন্দ্রায়—
ঘুমাবো বলে হাটতে হাটতে থামি
যদি খেয়ালে তোমার চোখ জেগে ওঠে।


তুমি কি নদীটারে ডাকো
উষ্ণ তাপে শুকাবে আলনায়—
যদি ডুবে যাও
আর চোখের পাতায় তৃণ লেগে থাকে—
আমি শূন্য বালুকণা হয়ে
নদীর অতলে ডুবে যাব— হায়।


বাকী রাত নদীটি— নদী তীর হয়ে
গত সন্ধ্যার আলো অচিন রারান্দায়।



ওল্ডহাম
১২/০২/২০২৩







৫.

কেন এত দীর্ঘ হচ্ছে হাওয়া—
কেন ছায়া পেরিয়ে যাচ্ছে মায়া হরিণের দল?
ভাবতে ভাবতে একটা মৃত সমুদ্র
দাড়াতো চাইলো, সবুজ ঘাস ফড়িঙের পাশে।


পায়ের পর পা রেখে চমকে উঠছি আমি
পাঠশালা থেকে অদূর গোলাপের বন,
এক দীর্ঘ হাওয়া —
মাছ সংক্রান্ত বিলাপ নিয়ে হাজির হলো ঘর।


মৃত পাখিটির মত আমি—
হাওয়া ভুলে পড়ে রইলো ভোর,
মায়া হরিণেরা চলে গেলো বনের দিকে—
এমন আশংকা—
এমন ফুল ঝরা গোলাপের বন
ইশারা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে পায়।




ওল্ডহাম
১৯/০২/২০২৩




৬.

মরমি ধ্বনিরা পুড়ে যাচ্ছে আলনায়
কন্ঠ জুড়ে মাতাল সরোদ তার—


ঘড়ির তিনটি মাত্র পা—
আমার দিকে সেই মিতালী মুখর চোখ,
তাপের আলিঙ্গন ভেঙে,
উঠে যাচ্ছে শরীলের আসক্ত লোম।


কোথায় রেখে আসি পথ —
পাশ কেটে ওড়ে যাচ্ছে বনেলা ঘোড়ার দল
মরমি ধ্বনিরা ডাকছে সন্ন্যাস বনে
এমন শীতল—
এমন উষ্ণ কোলাহল ভেঙে—
উড়ালে আমার ভবঘুরে দুই পা।



ওল্ডহাম
০৩/০৩/২৩





৭.

যেন বুনো শৈবাল হাতে দাড়িয়ে আছি
যেন উদ্বাস্তু হাওয়া নিয়ে যাচ্ছে কোথাও,
রোদাক্রান্ত চোখ—
তন্দ্রামাখা ভোরে ভাবছি তোমারে, হায়—
আমার অসংকোচে হাত।


কোথায় ছুঠে চলেছে নিরালা নদীটি
পড়ে আছে উৎসব ভাঙা জামা—
তোমার হাতের থেকে দূর
উদগ্রীব হয়ে আছে অসংখ্য ছোয়া।




ওল্ডহাম
০৫/০৩/২০২৩




৮.

ইশারার মাদক ভুলে কোথায় চলে যাব?
যদি এমন তুষার বন থাকে—
মেঘেরা এত উষ্ণ হয়ে ঝরে যায় কেন?


কেন পাতার পল্লব ঘিরে আছে হাওয়া
সহজ ঢেউগুলো ভেঙে পড়ছে ঝড়ে—
আসক্ত মৌমাছিরা
গিয়েছিলো প্রথম কোন গোলাপ ভ্রমণে?


ইশারার মাদক ভুলে কোথায় পড়ে আছি আমি
কান্নারত শিশিরেরা বুঝি জানে।



ওল্ডহাম
০৭/০৩/২০২৩





৯.

কথার সুত্র ধরে হাটতে আছি
এমন মরমীয়া পথ—
সুরের আলনা নিয়ে তুমি আজ নাই
কোথায় এমন ভোর আলগা হয়ে আছে।


দূরে মানচিত্র—
আঙ্গুল নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে হাত—


সেই গোপন সুত্র ধরে
কথার দেরাজ—
হাওয়ার দাপট নিয়ে শূন্য হয়ে আছে।



ওল্ডহাম
২১/০৫/২০২৩







১০.

নিশানা ভুলে ওড়ে যাচ্ছে তীর—
দরজার আড়াল নিয়ে দাড়াবো
যদি এমন ফুল আমার দিকে—
আমার দিকেই থাক করা থাকে।


সুদর্শন তীক্ষ্ণ ফলাগুলো
বুকের পাঁজর ছুয়ে যদি ঘুমাতে চায়—


কার নিশানায় বুক পেতে রাখি
সকাল সকাল সূর্যের সাথে দেখা হয়।
একটা কালো বিড়াল যদি থাকতো
হয়তো তারে গল্পটা বলা শেষে
নিশানার দিকে—
ধীর, সেই বক পাখিটির মত
ওড়ে যেতাম নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায়।



ওল্ডহাম
৩০/০৫/২০২৩





বেলায়েত মাছুম
প্যারিস/জুলাই/২৩