দেখার দিন প্রায় শেষ | বেলায়েত মাছুম



১.
গতকাল আমার মৃত্যু হলো ভাবি
স্বর্গ কিংবা নরকের দিকে না গিয়ে ঘাসের দিকে যাই
আমার দেহভার ঘাসগুলো পরম যতনে আগলে রাখে
আর রাত হলে কুয়াশারা চুপি চুপি গতর ভিঁজিয়ে দেয়
মাতাল বনের পাখিরা ঝাকে ঝাকে ফিরে আসে
কোন কোন পাখির বিলাপে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়
ভাবি গতকাল আমার মৃত্যু হলো।

২.
আমার সংসার নাই এ কথা পাখিরাও জানে
মানুষ না থাকা ঘরের জানালার গ্রীল ক্ষয়ে যায়
দেয়ালের পলেস্তার খসে পড়ে
সংসার নাই এমন মানুষ তবু কোথাও যেতে পারেনা
খোলা দরজায় কেউ যেন আলপিন গেঁথে রাখে
আমার পায়ে জুতা পরা আছে
গতবার ভ্রমণের দাগ এখনো ঝলমলে করুণ
আমার সংসার নাই এই স্মৃতি মানুষ ভুলে গেছে।

৩.
অন্ধ চোখে রোদ-চশমা লাগিয়ে ঘুরছি
পাখিদের কলতান, শিশির ঝরার শব্দ
পাতার উপর শিশুর হেটে চলে যাওয়া
মৃত্যু উন্মুখ পাথরের উপকথা শুনছি।

৪.
সাইকেলে  চড়ে আমি কোথাও চলে যাবো একদিন
বাড়ি ফেরার তাড়া থাকবেনা
সকল দরজা আমার দিকে চেয়ে রবে
উদাস পাখিরা গান গাইতে গাইতে দূরের বনে চলে যাবে
মনে হবে একদিন আমি ঘরগামী ছিলাম
জানালায় জানালায় হাওয়ার উৎসব
মৃত ঘাসেরা উড়তে উড়তে ক্লান্ত আমার উঠোনে থামে
একদিন আমি কোথাও চলে যাবো দূরে
তোমার ঈর্ষার বাগানে তবু কিছু ফুল
আমার অন্ধ চোখে আনন্দ নিয়ে আসবে।

৫.
ডাকছে কোথাও জোনাকি, শুনতে পাচ্ছি না শব্দ
ফুরিয়ে যাচ্ছে রাত, কোথায় দাড়াবো
শব্দ টানছে বোবা সুরে,
কোথায় ফুলেরা থাকে, কোথায় মায়া হরিণ?
হরিৎ বনের কিনারে জ্বলছে আগুন
আমার ঘরে, শূন্য তাপে দেয়াল ঘেমে উঠে
আয়ুর মতন কোথাও পুড়ি যাচ্ছি।

৬.
দেখার দিন প্রায় শেষ
শরতের মগ্ন পাখিটা ওড়ে যায় যায়
জানালার গ্রীল ভেঙে উপচে পড়ছে হাওয়া।
আমাদের এমন সন্ন্যাস লাগা ভোর
পালিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের গলি-গালা ধরে।

৭.
কোন তদবির ছাড়াই পৌছে যাচ্ছে হাওয়া
কোন আশংকা ছাড়াই আঁতকে উঠছে হৃদয়
এমন কাকতাল চারিপাশে
হেমন্তের নাতিউষ্ণ ধুলেরাও বুঝি
গেয়ে উঠবে তোমার নামটি ধরে।

৮.
হাওয়া এমন অন্ধজানালা বুঝে না।
কার বাড়ি থেকে কার বাড়ি যায়
দুয়ারে ওৎপেতে রয়
শংকা হয়ে বেঁজে ওঠে সুরে।
এমন হাওয়া তোমারে ছুয়ে যায়
সংকোচ ভুলে।

৯.
তোমাকে ডাকার নাম নাই আর
কথার সরোবর ধরে
তলিয়ে যাচ্ছে অর্ধেক রাত
আর বাকী অন্ধকার— নেশার পেয়ালা হয়ে
ডাকছে নিরালা ঝড়ের ভেতর।

১০.
কানে বাঁজছে গুনগুন আওয়াজ
পাখিটার নাম জানি না—
জানালা খুলে পড়ে যাচ্ছে হাওয়া
উড়তে উড়তে মনে হয়
পাতা হয়ে যাচ্ছি শুধু আমি।



বেলায়েত মাছুম
প্যারিস/২০২৩