বেলায়েত মাছুম
  • বাড়ি
  • কবিতা
  • গদ্য
  • সংযুক্তি
    • অ-কথা
    • সংকলন
      • অঞ্জন দত্তের গান
      • শাহ্ আব্দুল করিমের গান
      • কল্পকান্ত সদাই'র গান
      • অ-সংযোগ
    • ভ্রমণ
    • আমি
  • ISSUU
  • বই
    • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে
    • পাখীদের পানশালায়
বাংলা প্রেম, বিরহের কবিতা। বেলায়েত মাছুম



১.
যে শহরে তুমি নাই, কোকিল ডাকবে কেন?
এমন প্রশ্ন আমি কোকিলরে করতে পারি না।


২.
মনে হয় বনের ভিতর বসে তসবি গুনি
কার নামে? তোমার, না তার—

আকাশ ভরা তারা
আমি গুনতে গেলেই শূন্য থেকে শুরু হয়
শেষ হওয়ার কোন দিন তারিখ থাকেনা—

আমার স্মৃতির যদি মরণ আসে
হিজলের ডাল থেকে সেই পাখি —
তোমার তদবির নিয়ে পৃথিবীর জানালা ঘুরে
আরো এক দিন — কার্তিকের ঝড়ের মত

তোমার নাম ধরে ডাকতে রবে—


৩.
আর তোমার কোন নাম নাই
ডাকার মত কোন নাম আর স্মরনে নাই
এমন দিন বুঝি আমার হলো—
আর তোমারে ডাকতে গেলে বোবা হয়ে যাই।

পৃথিবীর কোথাও আমিও থাকি
শব্দের কলতান নিয়ে—
পৃথিবীর কোথাও তুমি হাটতে আছো
হাওয়া বুঝি সে গল্প বলে যায়।

তোমার আর কোন নাম নাই—


৪.
এ দেশের হাওয়ারে হয়তো তুমি চেনো
হয়তো হাওয়া তোমার দেশ ঘুরে আসে
এমন স্মৃতি কি'বা হাওয়াও জমিয়ে রাখে
কতকাল ভ্রমণ ভুলে দূরে থেকে যাবো—


৫.
আমি তো মাতাল হলাম না আর
পৃথিবীতে আর কোন নেশা নেই আজ—
দেয়ালে দেয়ালে শব্দের প্রতিধ্বনি গেল কই
তোমার হৃদয় থেকে যেন খসে পড়ে আছি।

এমন নিদান বুঝি আমার একা হয় শুধু—
দেয়াল এখনো ঘামতে থাকি শুনি,
পড়শির কানে তাল-পাকা দুপুর
মাতাল হলাম না এমন দিন যায় চলে।

বাতাসে উড়ে আমি যেতে পারি না দূর
পায়ে নেই বেড়ি, নেই শংকা ডুবার—
তবু যেন সেই মাতাল নাবিকের মতো
ঘোর কাটা ভোরে লোকেরে তোমার গল্প শোনাই।


৬.
গল্প শেষ হলেই, উঠে চলে যাব ঘর
এমন প্রতিজ্ঞা হয়তো করতে পারি;
হয়তো অসুখের নিরাময় জানা আছে তার—

ফুলেরা ফুটে আছে গ্রীষ্মের রোদে
বাতাসে উড়ছে কিছু পয়মন্ত রেণু,
সবুজ পাতাদের গায়ে উৎসব আজো—
তার না হওয়া অসুখ নিয়ে ঘুরছি আমি।

গল্পের হলে— বিরহের রাত ফুরায় সহজ
অসুখ হলো— নিরাময় নাই, কথক সময়

গল্প শেষ হলেই চলে যাব দূর
ফেরার তাড়া নিয়ে ফিরে আসব ভাবি;
এমন অসুখ যদি তোমারও হয়—
এমন অসুখ নিয়ে কোথায় যাব আমি।


৭.
হয়তো কোথাও হাটতে আছি অসুখ নিয়ে
বুধবার যায়—
শনিবার আসে—
জানালায় উঁকি দিতে চাই,
আমার চোখ যেন অন্ধ
আর বধির কান দু'টো শব্দে মাতাল—
এমন অসুখ নিয়ে তারে খুঁজতে থাকি
শহরের দেয়ালে—
পাখির ডানায়—
সে কোথায় হাটে হাওয়া মাতিয়ে
এদিকে আসেনা;
এমন কোন ঝড়—
এমন কোন বাগান—
যেখানে ফুল আছে ঝরবার আশায়।


৮.
কোথাও সেই ইশারা পড়ে আছে
ঝড়ের রাতের মতন;
অন্ধ বাদুর গান গেয়ে ফিরে এমন রাত—
দেয়ালে কথার কাকলী মিশে আছে—

কোথায় তোমার চোখেরা আজ?
কোথায় হেটে চেলে গেছে চঞ্চল দুটি পা—
নীরব নদী তীর বুঝি ডাকবে নাম ধরে

এমন সুর হয়ে যদি উড়ে আসো
যদি আমি বর্ষার তুমুল ঢেউয়ে মাতাল হয়ে
ডুবতে থাকি—
ইশারা ভুলে—
কোথায় পালাবো আজ এমন তীব্র জ্বরে।


৯.
মাছেরা ডুবে আছে জলে
গভীর জলের ভিতর হয়তো আমিও নামতে পারি—

জাল মেলে আছে জেলেরা
আষাঢ় মাস শেষ হয়ে এলে হয়তো ফিরে যাবে বাড়ি;

হয়তো তোমার বাগানে আছে পোষা গাছ
বিড়ালেরা রোজ বিকেলে বসে থাকে—
তুমি হাত বুলিয়ে, ডেকে নিতে পারো ঘরে
এমন শব্দ যদি আমার কানও শুনতে পাই—

আমি হাটতে আছি সেই নদী কিনারে
যে পথ তোমারে ডাকতে গেলে—
বোবা হাসি ছলকে ওঠে ভুলে।


১০.
যে শহরে তুমি নাই, কোকিল ডাকবে কেন
এমন শব্দবলী লেখা নেই শহরের দেয়ালে—
হয়তো আমি কোথাও হাটতে হাটতে যাব
হয়তো পথ ফুরিয়ে যাবে বাড়ি ফেরা হলে;
শব্দের কাকলী ঘিরে আছে আমার চারপাশ
তবু ফুল ঝরার শব্দ বুঝি আমিই শুনতে পাই।

যেন আমি হাওয়া, কেবল উড়ে যেতে চাই
সন্ধ্যায় ফেরা পাখিদের মত, ক্লান্ত ডানা নিয়ে—

শহরের কোকিল হয়তো নাম ধরে ডাকে
আমি কোথায় যাবো? এমন পথ চেয়ে আছে
ঘরের জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে পড়ে
সেই সুরভিতে তোমার ঘ্রাণ নাই।



ওল্ডহাম
জুলাই, ২০২২



কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা, বেলায়েত মাছুম



আবার শব্দ, আবার গুলি


হয়তো গুলির শব্দ
—
হয়তো আবার মৃত—
পাখির পালকে লেগে থাকে স্মৃতি বিভ্রম—

কূপ জলে ভেসে উঠে অরণ্য
গহীন খাঁদের কিনারে বসে পান করি;
এক মাতাল গদ্যকার
প্রিয় বন্ধুর মতো

ডেকে তুলে অমাবস্যা রাতে
—
ডুবতে থাকি মৃতের চোখে
আবারো গুলির শব্দে
অরণ্য থেকে অরণ্যে
—

এবঝাক কবুতর
— সাদা আর খয়েরী
এক গ্লাস জল-ঘোলা, ভীষন লাল

পান করি ডুবতে ডুবতে শব্দের ঝাঁঝ
পাথর খসে পড়ে
উদ্বীগ্ন জল প্রপাত;
মেতে উঠি ঠোঁটের শব্দে
—
আরো, আরো বেশি গুলির শব্দে
—
পৃথিবীর শরীরে বুনতে থাকি নকশায় ক্ষত
আলোর মুখোমুখি অন্ধ চোখে
—


ওল্ডহাম
১৫/১২/২০১৫



শহরের কোন দেয়ালে


শহরের কোন দেয়ালে তার নাম লেখা নেই
অজস্র তারার সাথে সে জেগে আছে কি না, জানি না;
অদৃশ্য হাওয়ায় হয়তো ভেসে বেড়ায়
আমি তার চুলের ঘ্রান পাই— 
এই পথে যে চলে গেছে
একদিন তার ছবি জলের ভেতর দেখি


ঠোঁটের ভাঁজে কতদিন পুড়ে গেছে ফুল
হৃদয় শ্বশানে পড়ে থাকলাম পুড়বার আশায়—
শালিক পাখির মতো গেয়ে চলে হাওয়া


শহরের কোন দেয়ালে তার নাম লিখিনি
কেবল পাথর আর জল ভাঙার শব্দে জেগে উঠি
কতদিন হেটে যাই বুকের পাড়ে—
কতদিন ঘুরতে গেলাম ভীষন একা—
দিন গুলো আর রাতের গন্ধ নিয়ে;
একদিন তার ছবি জমাট বাঁধে বরফ শহরে।



ওল্ডহাম
২৯.১০.২০১৫




রাত্রিরে ফোটা কোন ফুলের প্রতি


কেন এভাবে ঝরে যাও তুমি
আমায় একা রেখে অগোছালো বিছানায়—


এভাবে আমিও যাই বিকেলে
প্রত্যেক দিন যেমন করে ডেকে উঠে
একটা শালিক পাখি—
তোমাকে আর কোথাও খুঁজে পাইনা
কিংবা আমাকে তুমি যেমন করে বুঝো—


এক সন্ধ্যায় তুমিও থাকবে জানি
যেমন করে বালিশ মিশে রয় চুলের ঘ্রানে মজে—


কেন এভাবে আমাকেও যেতে হয়
জানালার থেকে অনেক— বহুদূরে—


তুমি আর আমি
অনেক দিন হলাম গত—
গাছের থেকে ফুল, পাখির থেকে পালক
কত ঝরে গেল আমাদের এই নির্জন শহরে;


আরো কতকাল কেটে যাবে, এভাবে
রোদের ভেতর নিজেদের শুকাবো
তীব্র তাপদাহে পুড়তে পুড়তে একদিন—
এমন দিনে তুমি আর আমি ঝরে যাবো।



ওল্ডহাম
০১.১০.২০১৫





কোন এক পাহাড়ি বর্ষায়


একরাতে আমি বৃষ্টি হবো, অন্ধকারে
একা একা ঘুরে বেড়াবো তোমার শহর;
হলুদ আলোয় ভিজে ভিজে ঘুরব
পাহাড়ি শহরের নগ্ন চুমোয়।


আমাকে ছুয়ে দেয়ার কোন হাত নেই,
কিংবা উষ্ণ অধরে আটকে রাখার
কোন মানবীয় কারণ-স্মরণ—


আমি ফুল হাতে ঘুরে যাবো তোমার দুয়ারে
জানালায় আটকে রবে পাহাড়িয়া হাওয়া—
কপালে কপাল ঘষে ঝুলে থাকবো হলুদ আলোয়;
আমি আবারো সংসারী হবো,
তোমার শহরে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
কোন এক পাহাড়ি বর্ষায়।



বার্সকপ, ওর্মস্ক্রিক
২০.০৭.২০১৫





একদিন যাবো ভ্রমণে


একবার সুন্দরবন ঘুরে আসি, চলো—
সমুদ্রের কাছে মাঠ হয়ে শুয়ে থাকে
জল আর জল, নোনা শরীর নিয়ে।


আমরা ওদিকটায় যাবো, বাঘের গুহায়
চোখ বুজে দেখব কেমন খেলে ওরা,
বনের সন্তান, আমাদের মতো ঘুমিয়ে পড়ে
সরিসৃপ দ্বীপে নিজেদের ভেতর।
হরিণীর বেগে দৌড়ে পাড় হব
সবকটি সবুজ ঘাসের বিছানা,
আমাদেন পায়ে লেগে থাকবে হাওয়া—
শামুকের চুমুর মত লেপ্টে থাকবো
আমরা আমাদের লবণ পানে।


সমুদ্রের স্বাদ নিয়ে সুন্দরবন বসে থাকে
আমাদের আশায়— একদিন ভ্রমণে যাবো।



ওল্ডহাম
০৪.০৭.২০১৫




আমাদের খাওয়া-দাওয়া


আমরা ঘুড়ি, এখানে সেখানে শুয়ে পড়ি
ঘাসের মুখে চুমু খাই গাই গরুর মত
উড়তে উড়তে পাঠ করি আকাশী জল
আমাদের উড়ার সীমানা নাই, ডানা নাই।
জল এবং মাটির সাথে খেলা-খেলা করি
আমরা আমাদের চুষে মাতাল হই
ধুলোর শরীরে আঁচরে কত কি যে আঁকি
পাখির সুরে কেবল আমাদের গন্ধ পাই।
সাদা সাদা ভেঁড়ার পালের সাথে ঘুরি
বেড়াতে গিয়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলি
নদীর জলে নেমে, গেয়ে উঠি ডাহুকের মত
পলাতক আসামির রুপে আমরা পালাই।
আমরা ঘুড়ি, ইচ্ছে সোহাগে যত্রতত্র উড়ি
দুপুর রোদে ঘুমিয়ে থাকি নিজেদের ভেতর
সন্ধ্যায় পড়তে বসি আপন আপন বই
খিদে পেলে রাত্রিরে, আমরা আমাদের খাই।



ওল্ডহাম
০৪.০৭.২০১৫





সমস্ত কিছু ভুলে শুয়ে থাকি


সমস্ত কিছু ভুলে শুয়ে থাকি রাত্রির বুকে
জল সমান আকুতি নিয়ে
কাঁচের দেয়াল ছুয়ে নেমে আসে মেঘের শরীর
প্রেমিকার চোখের দিকে।


গোলাপী রঙের জামা পরে শহর প্রদক্ষিণ
হত্যার পুর্বে মেরে ফেলার কি প্রয়োজন।


জামার হাতা গুটিয়ে, বুকের কাছে রাখি
সর্ষে ফুলের গল্পটা, ঘোড়ায় টানা ঘানির ভেতর
দেখেছি মানুষও ঘুরে, ঘুরাঘুরি করে
ঝুলে থাকে ঘোড়ার লাগাম হয়ে
একদিন ফুলের কাছে প্রার্থনা দিয়ে— পাখনা চাইবে বলে।


হয়তো এই সব সর্ষে ফুলে মৌমাছি বসেনি
সুরক্ষায় কোন মালিরও প্রয়োজন ছিলনা
এরা কোনদিন কোন বাগানে ফোটেনি
তবু যৌন বাতির সুরভী নিয়ে ঘুরে ফিরে, একদিন ঝরে যায়।


ভুলে থাকার তাবুতে ভোর নেমে আসে, আলো হাসেনা
প্রেমিকার বুকে চিকচিক ধোঁয়া, ঠোঁটের পাড়ে ঝলসানো জল
আহত সঙ্গম নিয়ে বিলাসী রাত, বুকের মরুতে হেটে
পৌছে যায়, যেখানে ঝুলে থাকে প্রেমের এপিটাফ।



ওল্ডহাম
১৪.০৬.২০১৫




উন্মাদ


শহরে এক উন্মাদ এসেছে
আজ শহরে এক বদ্ধ উন্মাদ এসেছে
তার খোচা খোচা দাড়ি, লাল সাদা চুল
ধূলোর কবলে পড়েছে
এই শহরে বেশ বেমানান লেগেছে
তারে কোন খেয়ালে ধরেছে।


শহুরে উন্মাদ
বিষন্ন হাসি খুশি উন্মাদ এক
তার জ্বলে উঠা চোখ নিভে যায়
নিভে যায় শহরের আলোয়
বাতিঘরে কোন ঘর নেই বলে
ঘুমিয়ে পড়ে তার বুকের কাছে।


তার দরপর করা বুকে
এই শহরের বেকুব হাওয়া লেগে থাকে।



ওল্ডহাম, 
০১.০৫.২০১৫





হয়তো


মনে হয় আবার সেদিনের মতো
খুড়াবো হিজল ফুল কুয়াশায় যত
হেটে যাবো বহুদূর সবুজের ভেতর
অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষন ব্যস্ত শহর


না হয় আবার ডাকবে শালিকের দল
কিংবা একঝাক হাঁসের ভেঙে যাবে ঘুম
হয়তো পানকৌড়ি আবার দিবে ডুব
কেবল মনে পড়ে যাবে খুব
সূর্য কেমন দিয়েছিল জলের বুকে চুম


হয়তো সন্ধ্যা পার হয়ে যাবে
কিংবা লাল সূর্যটা তখনো জেগে রবে
ঘরে ফেরা হাঁসের দলের সাথে
লাল মোরগের আবার দেখা হবে


পেরেস্টন, ল্যাঙশায়ার
২৩.০১.২০১৪



চুক্তিনামা

এরকম আমারো একটা চুক্তি ছিল
নিঃশব্দতার।
জল ঘোলা নদীর মতন ঘুরে
একদিন পাথর
একদিন সর্ষে ফুল
আর তোমরা যেভাবে ভেবে থাকো
এমন ছায়ার।

রাতে কোন কিছু দিতে নেই
মা বকে ছিলেন
এমন দিন তারও ছিল
তার প্রমাতার মুখে।

কবি ছায়া শঙ্কায় ভুগেন
হয়তো ইশ্বরও
দিনকে আলোয়
সূর্য্য আর জড়তায় প্রচ্ছদ এঁকে।


একদিন শেষ হয় সকল শপথ
চুক্তিনামার
সড়ক পথে কোথাকার আলো
নিমেষে তলায়
আলেয়ার বাগান
দূপছায়া রাতে
মুছে দিতে হয়, যত ছিল
সব অঙ্গিকার।


ওল্ডহাম
০৩/০১/২০১৬


পড়তে পড়তে কিছু দৃশ্য | বেলায়েত মাছুম | বাংলা গদ্য।


 ক.

একটা পাখি বাড়ির উপর উড়ছে। এমন দৃশ্য প্রতিদিনই আমি দেখি। উড়তে উড়তে পাখিটা উপরে উঠে যায়, নিচে নেমে আসে। পাখি উড়তেই থাকে আর আমি দেখতে থাকি। দেখতে দেখতে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে, সেই পাখি আস্তে আস্তে কোথাও চলে যায়। আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে থাকি। ঘুম কত গভীর হলে মানুষ অন্য জগতে চলে যায়? সেখানে হাটতে থাকে, দৌড়াতে থাকে? যেন এমন ভাবতে ভাবতে আমি হাটতে থাকি পরিচিত এক রাস্তা দিয়ে, মানুষের পায়ে হাটা রাস্তা বিশাল বড় মাঠের মধ্য দিয়ে,  আমি হাটতে হাটতে দৌড়াতে থাকি আর হঠাৎ করে রাস্তাটা শেষ হয়ে যায় আর আমি ফুটা বেলুনের মতো পড়তে থাকি।

আমি পড়তে থাকি পৃথিবীর দিকে। যেন এই পৃথিবীই আমাকে ডাকছে, দ্রুত নামতে নামতে দেখতে পাই একটা ছেলে বাড়ির সিড়ি ঘরের ছাদে বসে আছে। তার বয়স অনুমান করা যায় কিন্তু আমি ভাবতে পারছিনা। দ্রুত, কোথাও পড়তে পড়তে আমি থেমে যাই অথবা থামানো হয়। এসবে আমার কিছু যায় আসেনা, ছেলেটাকে দেখতে থাকি, তার হাতে একটা আইসক্রিম, লাল টুকটুক। কোথা থেকে সে এটা পেল আমার জানা না থাকলে হবে কিন্তু মনে হয় আমি জানতে চাই। দেখতে থাকি- একটা লোক বাড়ির উঠানে বসে আছে।

টাকওয়ালা এক আইসক্রিম বিক্রেতা বাড়ির উঠানে বসে আছে। দুই জন ছেলে তার সামনে বসা, তারা হয়তো দরদাম করছে। একজন একটা লাল আইসক্রিম নিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে এলো, এদিক ওদিক থাকিয়ে সিড়ি ঘরের ছাদে উঠে বসলো আর পা দুলিয়ে লাল আইসক্রিমটা চাটতে লাগলো। পড়তে পড়তে আমি ভাবতে থাকি দৃশ্যটা আরো দীর্ঘ করা দরকার, হাতে অনেক সময়। আবার প্রথম থেকে দেখা যাক।

আমি পড়ছি, একটা ছেলে লাল আইসক্রিম নিয়ে বাড়ির সিড়ি ঘরের ছাদে বসে আছে। আরেক জন টাকওয়ালা আইসক্রিম বিক্রেতার সামনে বসা, সেও একটা লাল আইসক্রিম নিয়ে ছাদে ফিরে এলো। দৃশ্যটা এখানেই শেষ, কিন্তু আমার হাতে অনেক সময়। দৃশ্যটা আরো দীর্ঘ হলে ভাল হয়। আমি পড়ছি আর ভাবছি, ভাবছি আর দেখছি। 

বড় ছেলেটা লাল আইসক্রিম নিয়ে ছাদে ফিরে এলো। সে সিড়ি ঘরেরে ছাদে উঠার জন্য একটা বেতের পিড়ি টেনে আনলো এবং পলকেই পা টাঙিয়ে বসে পড়লো। আমি আনন্দ নিয়ে দেখছি, ছোট ছেলেটাও আইসক্রিম নিয়ে এলো ছাদে, সেও বসতে চায় পা দুলিয়ে কিন্তু বড় ছেলেটা তারে উঠতে দিলো না, পিড়িতেই বসে পড়লো। এমন সময় আমার চোখে পড়লে দু'টি মেয়ে চুল টানাটানি করছে।

খ.

এক দরজার বাইরে একটা বিড়াল ডাকছে। ঠিক ডাকছে বললে হয়তো ভুল হবে। হয়তো কাঁদছে? কেন? তা আমি বুঝতে পারি না। আমার বুঝার দরকার নাই, কিন্তু বুঝতে পারলে হয়তো ভাল হতো। হয়তো আমি তার জন্য কিছু একটা নিয়ে আসতে পারতাম, আমারতো ডানা আছে, উড়তে উড়তে বাজারে চলে যাই। দোকান থেকে চকলেট কিনবো ভাবি কিন্তু ফিরে এলাম দু'টি লাল আইসক্রিম নিয়ে। বিড়াল কি আইসক্রিম খায়? এমন চিন্তা করতে করতে আমি পড়তে থাকি। পড়তে থাকি পৃথিবীর দিকে।

পৃথিবীতে আমার কে থাকে?

পড়ছি আর দেখছি। মেয়ে দু'টি চুল টানাটানি করছে। তাদের বয়স কত হবে? কোন মেয়ে বড় আর কোন মেয়ে ছোট? এসব দিয়ে আমার কী হবে? এমন চিন্তার ফাঁকে দেখি আরো একজন দাড়িয়ে আছ। সেও মেয়ে, আগের দু'জনের চেয়ে বড়। মনে হচ্ছে মাত্র গোছল থেকে ফিরেছে। বাতাসে চুল শুকাতে শুকাতে হাওড়ের দিকে চেয়ে আছে। এখন কোন মাস? এমন মনোরম হাওয়া বয়ে যাচ্ছে যে কোন মাস চলে তা না জানলেও হবে।

এখন হয়তো চৈত্র? হয়তো কার্তিক? হয়তো। আমার কোন মাস প্রিয় ছিল? আষাঢ় না পৌষ? ভুলে গেছি। পাখি হয়ে গেলে আর মনে রাখার প্রয়োজন থাকে না। যে মাসই হোক আমার ভাল লাগছে এমন হাওয়া ভেঙে পৃথিবীর দিকে নামতে।

গ.

বড় মেয়েটা চুল শুকাতে শুকাতে কার কথা ভাবছে? এমন প্রশ্ন আমার মনে জাগছে। আর এমন উদাস হয়ে কেনই বা তাকিয়ে আছে বুঝতে পারছি না। মানুষ কেন যে কেবল মানুষের কথাই ভাবে, কেন যে তারা ভাবতে ভাবতে উদাস হয়ে যায়, এমন ভাবতে ভাবতে দেখি আমি পুথিবীর কাছাকাছি চলে এসেছি।

আমি কেন পাখি হয়ে গেলাম? কিংবা পাখি আমার মতো হয়ে গেল কেন? এমন প্রশ্ন আমি কার কাছে করব? আর যদি পাখি হয়েই গেলাম তবে কেন মাটির দিকেই পড়ছি? ছেলে দু'টির আইসক্রিম প্রায় শেষ, চুলাচুলি করা মেয়ে দু'টি কি যেন করছে, দেখতে পারছি না। যতই পৃথিবীর কাছে চলে আসছি চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। উপরের দিকে উঠতে চেষ্টা করেও পারছি না, হঠাৎ খেয়াল হলো আমার ডানা নাই। উধাও হয়ে গেছে, ওগুলো কী তবে মোমের তৈরি ছিল?

পৃথিবীর দিকে দ্রুত পড়ছি। পাখিরতো ডানা থাকে, এমন স্মৃতি কথা অন্য পাখিরা আমায় বলে ছিল। যখন তারা পৃথিবীতে ছিল না, যখন তারা পৃথিবীর বাহিরে ছিল, একেক জোড়া ডানা নিয়ে তারা উড়তে পারতো।

পৃথিবীর বাহিরে পাখিরা কেমন থাকে?


ওল্ডহাম/২০২২



আরও গদ্য পড়ুনঃ মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই
আরও গদ্য পড়ুনঃ কিছু দৃশ্য তবু ভাবা যায়
























আমি ঘুমাতে পারিনা


একী হলো দশা— আমি ঘুমাতে পারি না
চোখ দু'টো বন্ধ হলেও ঘুমাতে পারি না
চারদিক ঘিরে নেমে আসে আঁধার
আমার ছায়া নিয়ে মেতে থাকে আয়না

কে আমি পাই না খুজে তারে
কে আমায় চেনে রয় দূরে
আমি পাই না খুজে তারে
আমি যাই না খুজতে তারে
আমার ভিতরে হয় লীন পুরনো সে বায়না।

অন্ধ চোখে ডাকতে থাকি ইশারায়
চোখ দু'টো আলোতে কেন ঝলসায়
আমি কার থেকে থাকি দূরে
আমি যার থেকে রই দূরে
সে কেন আমায় খুজে তার মাঝে পায় না।


২০/০৬/২০২১
সুইন্টন



শব্দের শব্দেরা যেন ডাকছে


শব্দের ভিতরে যেন বসে থাকি আমি
শব্দের উছল ধ্বনি কোথায় হারিয়ে যায়
এলোপাতারি— এলোমেলো যেন আমি
তোমার দুয়ারে দাড়াই, সঙ্গে কেউ নাই।

আমার মাথার ভিতর বাঁজে শব্দের ঢাক
— মাথার ভিতর এলোমেলো কত শব্দ,
শব্দের শব্দেরা যেন ডাকছে
যেন তারা মাথার ভিতর এলোমেলো নাচছে।

[ সা-গা, সা-গা, সা-গা-মা
সা-গা, সা-গা, সা-গা-মা-ধা-নি
সা-গা-মা-পা-ধা-নি-সা
সা-গা-মা ]

পালিয়ে যাওয়া হাঁসেরা আবার বর্ষায় হারালো
ঝড়ের শব্দ বাড়ির দিকেই আসছে
শব্দের ভিতর যেন বসে আছি আমি
আমার থেকে দূরে তোমার হাসির শব্দ।


২১/০৬/২১
সুইন্টন



একটা প্রজাপতি


আমার ঘরে একটা প্রজাপতি ঢুকে পড়েছে
অসংখ্য প্রজাপতির মধ্যে একটি
পৃথিবীতে হয়তো আরো জানালা খোলা আছে
হয়তো আরো অনেক চোখ
উচ্ছাস নিয়ে কোন এক প্রজাপতি দেখছে।

এক কাপ চা নিয়ে আয়নায় মুখোমুখি বসি
বিড়ি টানতে টানতে মনে পড়ে শৈশবের গান
কত প্রজাপতি আমায় ফেলে গেছে
এখনো আমি পৃথিবীর হাওয়ায় হাটছি।

পৃথিবীর একটা প্রজাপতি আমার ঘরে বসে আছে
বঁধির কান তবু কিছু শব্দ শুনতে পায়
অন্ধ চোখে প্রজাপতি পালকের রং পড়ে আছে।


২৭/০৬/২১
সুইন্টন


মনে হয় তেমন দূর নয়


কাপের চা ফুরিয়ে যায়— আমি বসে থাকি
আয়নায় দেখি মুখ—
তুমি হেসে ওঠো, গুন্জন শুনি
মনে হয় হাওয়া, ছায়া ছুয়ে গেল।

তীর থেকে তীরে পালের নৌকা
বাঁধা পড়ে থাকে
জলের উপর
পায়ে হাটা ধ্বনি
পরিচিত নগর জুড়ে ছড়ায়।

কাপের চা ফুরিয়ে যায়, চোখে তন্দ্রার ঢেউ
তোমার মুখের দিকেই আমার মুখ
পৃথিবী থেকে দেখা তারার মতন
হাতে পোষা দূরবীন—
মনে হয় দূর, মনে হয় তেমন দূর নয়
এমন কোলাহল নিয়ত ডাকছে যেন
ডুবে যেতে আয়নার ভিতর।


০৫/০৭/২১
সুইন্টন



হাত ফসকে যাচ্ছে হাত


হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে আলো
হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে হাত
আমার চোখে তন্দ্রা
নিকটে ভোর—
হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে আলো
কোথায় ঠিকানা তার
ঘর বাঁধে যে দূর।

কত সহজ হয়ে নামছে কুয়াশা
কান্নার রং মেখে
তোমার হাত ছুয়ে
আমি ধরতে পারছি না এমন দশা।

হাত ফসকে হাত পড়ে যাচ্ছে যেন
তন্দ্রার ঘোর ভেঙে
দেহভার নিয়ে।


১২/০৭/২১
সুইন্টন


আমার হাত নাই


আমার হাত নাই প্রিয়, আছে উৎসব
আছে জানালায় চেয়ে থাকা রোদ্দুর
সংসার ঘুরে তপস্যার রাত
ভেঙে পড়ছে দূরে তারার মত—

কোথায় এমন দিন নির্ঘাত শংকা হয়ে
দাড়াবে ভাঙা পা নিয়ে—

তোমার চোখ নাই প্রিয়, আছে আলো
আছে মৃতের কোন সৎকার
হাতের আঙ্গুল ছুয়ে রংধনু রং
উপছে পড়ছে উদাস মেঘের মত—


২৫/০৭/২১
সুইন্টন



তোমায় ডেকেছিলাম দুঃখি হতে


আমি তোমায় ডেকেছিলাম দুঃখি হতে
কিছুটা আমার মতো—
কিছুটা মেঘের মতো
উড়ে উড়ে দূর বনের দিকে চলে যেতে।

আমাদের দিন ফুরিয়ে গেছে মনে হয়
— মনে হয় আর পাব না উৎসবের রাত
গোপনে ফুলেরা ঝরে গেছে
পাথরও যেন বা ক্লান্ত আজ
তবুও ডেকেছিলাম দুঃখি হতে।

দুঃখিদের লোকের দূরে ঠেলে দেয়
আমার বুক ভর্তি লোম
বিড়ালের মতো কোমল দস্তানা নিয়ে
ডেকেছিলাম তোমায় দুঃখি হতে।


৩১/০৭/২০২১
সুইন্টন



একটা অদৃশ্য পাখি


একটা অদৃশ্য পাখি যেন আমি
উড়ে যাই দূরের বনের দিকে
সাগরের নোনাজল গায়ে মাখি
আর আয়নায় নিজের ছবি ভাঙি।

গত হয় কত ফুলের ঘ্রাণ
কত অভিমানের রাত হারিয়ে ফেলি
জোনাকের গুন্জন শুনতে শুনতে অন্ধকার
একটা অদৃশ্য পাখি হয়ে যায়।

বহুকাল ধরে যেন উড়তে থাকি
অমিমাংসায়—
দূর থেকে দূরে ফেরার পথ নেই ভেবে
একটা অদৃশ্য পাখি হয়ে উড়তে থাকি।


০১/০৮/২০২১
সুইন্টন



'চলতে চলতে'
পাকিজা চলচ্চিত্রের  'চলতে চলতে ' গানের ভাবনুবাদ বলা যায়।


আমি যা বলতে পারি না
পৃথিবী বলে যাচ্ছে
সেই গল্প
যা আমি বলতে চাই—

অপেক্ষার রাত দ্রুত ফুরিয়ে যায়
বাতিগুলো নিভে যাচ্ছে
আমার সাথে—

আমার সাথে বাতিগুলো নিভে যাচ্ছে
রাত ফুরিয়ে যায়
হাটতে থাকি তবু সে দাড়িয়ে থাকে
আমি চলতে থাকি, হাওয়াও উড়ে—

সেই ধ্বনি যেন এখানে থামে
পৃথবিীর জানালার কাছে
আমি তারে দেখতে পাই—


০৮/০৮/২১
সুইন্টন


পালাবো কোথায়


বক বক আওয়াজ ধীরলয়ে ছুটে আসছে
আমার দিকে
দরজার দিকে ছুটে যাই
কান ধরে কে বসে আছে
আমি তোমার কথা ভাবতে পারছি না আর।

আজ বুধবার
ছুটি নাই
সপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরবো
এমন প্রতিজ্ঞা করবো ভাবি।

লোকেরা কথা বলছে
আমি দূর কোথাও ঘুরে আসি
তিন মাস কতবার গত হয়
উচ্ছাস নিয়ে হাসতে থাকি।

পরিচিত কেউ চলে যাচ্ছে
ঘর ছেড়ে
আমার ঘর নাই
পালাবো কোথায়
এমন সুদিন যদি দরজায় থামে।


ওল্ডহাম
৩১/০৮/২১











ক

৬.

গত হয় জাবরের দিন। ক্ষীণ ক্ষীণ তবু কিছু আলো।
তবু সন্ধ্যার থেকে দূর— নদীর কিনার। এক পরম চাষি।
ভোরের মতোন। তার রাঙা সেতার— আমারে ডাকে।
আমার ফুরায় দিন। দেয়ালে চোখ, ব্যস্ত নাবিক।
যায় ভোরের পাশে। ঘাসের উপর- সেই জোড়া পা।
ছায়ার মতোন এক পর ভাবা তুমি। অকাল নদী।
আমারে ডাকে- কোথায় সে ঘর? সহজ ভাবে।


৮.
আর কিছু তৎপর ঢেউ— ঘুম ঘুম আলো;
আর কিছু সহজ শব্দ— পুরনো ঘর— আলনা-বাড়ি,
কিছু সবুজ ঘাস, দূরে রংধনু আঁকা।

ভাবা যায় শবঘর সেই
অনুরোধে গান, নরোম কোমল ফুল;
ভাবা যায় উৎসব শেষ
জলের ভেতর মীন আর শুশুকের দল।

তবু এক নীড়— চারদিক ডাকে
তবু দিন যায়; বরফ গলে— ফাগুন আসে
তুমুল রোদ— পায়ের কাছে অবনত রয়।


১০.
ঘর তবু ফিরে ফিরে আসে। কিনারে ঢেউ
এই সেই নদী তীর— ডাকে নামটি ধরে—
দূর কোথায়, দুর। বাজায় আবার সেই সন্ধ্যায়
অবিকল ছায়া নিয়ে— নামতে থাকে পরিচিত পাড়ায়।

আমার তবু হয়না ঘর, পড়শীর কাছে এই অজুহাত—

বারেবার তবু সে ঘর, দূরে চলে যায়
পরিচিত সব মুখ নিয়ে,
চলে যায় সে—
ফুলের বাগান থেকে— যেন ডাকে সুরালয়—
যেন পাথুরে সোহাগ মাখা—
সেই ঘর ফের, মালীর তরফ নিয়ে
আমার দুয়ারে বসে; বাজায় সেতার।

পড়শীর আছে পুরনো দুয়ার— আছে তৎপর হাওয়া

সুরের ঘুঙুর ভাঙছে কোথাও ভাবি
আগুনের ঠোঁট যেন তথমতো— পার হয় পুরনো মোমকল;
পাতানো দলিল নিয়ে সেই— দাড়ালো রুপকথার কেউ
ঘরের পরে আছে পড়শী; আছে নদী আর— আর ঢেউ।

পর ভাবা তারা; দূরের মতো অ-দৃশ্য যেন;
পৃথিবীর উজ্জ্বল এক মাছের কানে— পড়শী কথা বলে
কার কথা, কে শুনতে যায়— নিয়ত বধির হয়ে।


১২.
আর দূর থাকা তারা, আর সন্ধ্যার গান
এমন হয়— মুখর হাওয়ায় সেই দাড়ানো কেউ
প্লাবিত সন্ধ্যার রাগে। 

যেমন ঘোর, সব অতীত দিন
দরজায় কড়া— যেন কেউ দূরগামী হাওয়া
যেন ঘাসের উপর আলো আর আলো
পুড়তে রয়
সকলের থেকে উজ্জ্বল—
বিকালের প্রান্ত ছুয়ে, আমার গোপন নিয়ে
মোমবতী সেই গাছের তলে।

আর, আর ফুল
পাখীর ডানায়— বাতাসের গন্ধ নিয়ে
সুরারূপ ধরে।


১৫.
হাওয়া কার চোখ নিয়ে উড়ে? কত দূর যায়।
হতাহত ফুল ভোরের কোলে

ফিরে আসে পুরনো সংবাদ— পুরনো দস্তাবেজ ঘিরে

আহত ফুলের কলি যেনোতেনো রোদে
বাঁধে সংসার— ধুলোর তদবির নিয়ে মদাসক্ত হাওয়ায় 
সেই পুরনো দাবী— সেই জোড়া চোখ গুম হওয়া থেকে
দারুণ ভানে— এই হতাহতের দিন

যে হাওয়া পলাতক হয়, বাঁধেনা ঘর পৃথিবীর 'পরে

তার থেকে দূরে আছে ফুল, গাছের কংকাল
সৎকার নিয়ে মেতে আছে লোক;
বনের ভেতর থেকে শব্দের ঢেউ কারে মাতায়
কেউ কেউ ঘোরে মাতম যদি—

এই ফুল ঝরে, হাওয়ার নিচে— বধির আমি
কলতান থামে, জোড়া চোখ, হাওয়ার কোলে
এতদিন ফুরায় তবু ফুলের নীড়ে
নেই কোন ঘর—  নেই উৎসব তেমন কোন
রাতের পাড়ায়।

হাওয়া, পৃথিবী ঘুরে ফুলেদের পায় তবু হয় না ঘর
যেন মরুধুলো সেই, যেন আমাদের উৎসব শেষ।


খ

২.
আমি— আমারে বলতে থাকি
দুপুরের বয়ান,
হাওয়ার শব্দের মতো দূর থেকে এসে
নিজেরে নিয়ে পলাতক হই।

আমি— আমার চোখের পাতার আড়ালে
ঘুম-ঘোর পতাকা উড়াই।


৬.
কিছু ফুলের কাকলী বাজে দূরে
কিছু শব্দের সৎকার নিয়ে—
আর গৃহবন্ধ সুরভীর সন্ধানে
নিকটে মগ্ন থাকে সেই দূরগামী পাখী

আলোকের কাছে আমার স্মৃতি জমা রাখি
দেয়ালের পরত জুড়ে—

সেই ফুল চেয়ে থাকে চাতকের চোখে
ঝড়ের আগাম সংবাদবাহী হাওয়ায়—


৮.
যেন কপালে ফুটে আছে ফুল— যেন নদীর পরে
আকাশের গতর জুড়ে যেন ফুটে আছে আরো একতিল  ঝড়।
আরো সুভাস উড়ে, নিমের বহর মেখে চৌদিক উজাড় করে
নেমে আসে চোখের পাতার কাছে—
পায়ের নখের কাছে—
অতল সেই সমুদ্রের মতোন তুমুল জলরাশি-ঢেউ।


১০.
এমন মোম
ঝরে যায় কেবল
আগুনের কোলে
ঝড়ের  আগে—
পুড়ানো খাঁচায়
যেন অস্থির পাখী
যেন তুমুল সোহাগে
সেই আগুনের কাছে
ওৎপেতে রয়—
পুরনো রাতে
আগেকার সন্ধ্যা

মোম সে—
ক্ষয়ে ক্ষয়ে উড়ে

আর মোমের শরীর
এক আগুনের ফুল—
তারাদের কাছে
ফুটে সে রয়
ঝড়ের রাতে


১২.
আমি যেন সেই হাওয়া
যেন কোন এক নারীর
কোমল হাতের নিচে
দাড়াই—

যেন আমি ঝরে যেতে পারি
তুমুল ঝড়ের সময়
কোন কোন জানালায়
নিজের মতো করে—

সেই দিন সেই রাত নাই
যখন পাখীদের পানশালায়
আমি এক নবিশ—

জোড়া চোখে দারুন ঘুম
তবু কিছু আলো
কিছু অন্ধকার
আমায় নিয়ে মেতে আছে যেন—

সেই হাওয়া
ঝড়ের সময়
মুখোমুখি বসি
শোনায় কথা
মনে হয় দূর
মনে হয় নারী
আমি এক লোক
বাসি দিন যায়
আঙ্গুল গুণে

পাখীদের পানশালায় যেন
আমি সেই লোক
বসে বসে ভাবি, যদি একদিন
হারাই ডানা— 



 কবিতার বই পাখীদের পানাশালায় পাওয়া যাচ্ছে ই-বই আকারে গুগল বুক্‌স, অ্যাপল বুক্‌স সহ আরও কিছু ই-বুক স্টোরে। 


www.belayatmasum.com


আরও দুই পংক্তি- বেলায়েত মাছুম



১.
আমি কারে স্মরণ করবো?
সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আমাকে।

২.
আমার পোষা কোন কুকুর নাই,
কল্পনার রশিতে নিজেকে বেঁধে হাটতে বের হই।

৩.
এক বেঞ্চি থেকে আরেক বেঞ্চিতে বসি,
একটা মৌমাছি এক ফুল থেকে আরেক ফুলে।

৪.
হাওয়া উড়ে যাচ্ছে, পাতাও
আমার পা আছে দাড়াতে পারি না।

৫.
দূরত্ব মাপা যায়, কিন্তু দূর থাকা?
দাত ব্যথার মতোন অসহ্য বাড়ছে।

৬.
ছোটরা প্রতি বিকালে স্কুল ছুটি পায়
বুড়োদের স্কুল আছে, ছুটি নাই।

৭.
ঢেউ এর জন্য কারে অভিবাদন দিবো
নদী না কী জলকে?

৮.
জানালা খোলা আছে, কিন্তু চোখ?
মৃতের মতো আঁধার পোষে রাখে।

৯.
কাল বড় হয়ে যাব
বুড়ো হব না।

১০.
রোদে রাখছি পা, ঘাসেও
ডানা নাই পাখী উড়তে পারছে না।



আরো পড়তে ক্লিক করুনঃ শুধু দুই লাইন




 





তোতা ও রাষ্ট্রপতি- বেলায়েত মাছুম



একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো

একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো, 

মহিষ পালের সাথে ঘুরে বেড়াতাম আর-
প্রতি সন্ধ্যায় আম্মার হাঁসগুলো হারিয়ে যাওয়ার আগে
পৌছে যেতাম শালুক বনে-
আমার ধারণা ছিল- আসা পথে ফিরে যাবো বাড়ি। 

আমার বন্ধুর সাথে দেখা হয়, 
রাত নামার সময়। 
চাঁদটাকে দেখিয়ে আমায় জিগ্যেস করে- 
তুই পেঁচা দেখেছিস- যে নিশায় থাকে তৎপর।

একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো
দুপুরের ছায়ায় বসতাম আরো মানুষের মুখোমুখি
প্রিয় কুকুরের শরীরে গা এলিয়ে ভাতঘুম শেষে
আমাকে মানুষ ভাবার অবসর পেতাম।

একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো


সন্ধ্যাটা

আজ সন্ধ্যাটা ডুবে যাক পাহাড়ের ওপারে,
অচেনা ফুলের গন্ধে মাতাল— ঝিম ধরা হাওয়া;
শেষ বিকেলের তাপ মেখে
সন্ধ্যার ঠোঁটের পাড়ে ডুবে যাক—
লালা ঝরা সূর্যের জ্বিবে
অন্ধ পাতার চোখে— এক পলক মৌসুম;
বেসুরো গানে মেতে আছে— বিরান শোক
জোনাকীর আলো, এই সন্ধ্যার পর—
এমন ভাল লাগা কালয় ছুয়ে ছুয়ে পড়ে
কাল চোখ হতে এক অন্ধ গহ্বর।


তোতা ও রাষ্ট্রপতি

আমার তোতা পাখিকে মনে পড়ে
আর রাষ্ট্রপতিকে। শোকবইয়ের পাতা সমুহকে
ভাবতে থাকি। বাতেসে গন্ধ চারদিকের।

আহত জাহাজির স্মৃতি কেমন ছিল?
তন্দ্রাসক্ত গোলাপ কেন বিলাপে থাকে?

লোকে বলছে জলঘাট। আয়নায় ঝকমক।
তোতাপাখি উড়ছে- রাষ্ট্রিয় পিন্জিরায়।

আমার শুধু পাখিটারে মনে পড়ছে আর রাষ্ট্রপতিকে।
একই মানচিত্রে। 


আরো একটি স্বপ্নের বর্ণনা কিংবা অপবর্ণনা

আমি কোথাও যাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়ি
স্বপ্নে একটা হাঁস দেখি
সাদা হাঁস ভায়োলিন বাঁজাতে বাঁজাতে
কাছের বনের দিকে হাটতে থাকে

আমার পোষা কোন শিয়াল নেই
তবুও একটা শিয়াল মাছরাঙা পাখির মতন
মাথার কাছে সারারাত ধরে গান গায়

স্বপ্নে একটা বাদামী প্রজাপতি উড়ে
আয়নার কাছে আমার মতো এক অপরিচিত লোক বসে থাকে
আমি তারে দেখতে থাকি

আমি কোথাও যাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়ি



বিড়ালটা

বিড়ালটার সাথে দেখা হলেই ডাকে
যদিও আমি আগুন্তুক কিংবা না;
সন্ধ্যায় ফেরার পথে দেখা হয়ে যায়
অন্ধকারে, বিড়ালটা কোথা হতে আসে?
আমার ছায়ার উপর পা রেখে হাটে।

আমি তার নাম জানিনা, সেও আমার
তবু আমাদের দেখা হয়ে যায়
ফেরার পথে, সেও কি ফিরে?
কোথায় তার ঘর?

আমায়- কিছুটা অন্ধ ভাবছে লোকে
দিনের আলোয় দেখা হচ্ছেনা আমি আর বিড়ালে
আমার চোখের ভিতর নাকি ফুল
সন্ধ্যা নামলেই দেখি বিড়ালের চোখ
হেটে হেটে বিড়াল আমার দিকেই চায়
আমি ডাকি তারে, সবাই যেমন ডাকে
বিড়ালটা হাটে- আমিও হেটে যাই;
আমায়- আরো কিছুটা অন্ধ ভাবছে লোকে
বলতে পারছেনা শুধু- "তোমার বিড়ালটা কই?



   
বেলায়েত মাছুম







নৈশ সভা


নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না
পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা;
নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে
ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে-
তার কথা কোন দিন আমরা বলবনা।

সভার টেবিলে আঁকা ড্রাগন ট্যাটু
সূর্যের লালা নিয়ে নিবিষ্ট প্রার্থনায়;
সভা ঘরে জানালা ছিল না এবং কোন শব্দ।

রাত নেমে এলে বসে থাকি
শৈশব নিয়ে;
বারুদের গন্ধে
পিপাসা ও ক্ষুধায় মজে শুয়ে থাকি
সভা শেষে- ত্রাণের আশায়।



একদিন

একদিন তারে ভালবেসে ফেলি- কতদিন গেল
কতদিন তারে নাম ধরে ডাকি, গোপন যত ফুলের নামে;
পাখির ঠোঁটের কাছে যত কথা হয়, যত আবৃত শামুক শরীর
হেটে যায় বুকের আলপথ দিয়ে- 
সে খবর কেউ রাখেনি, আমিও না জানি।
আমার গোধূলীতে বসে সে গেয়ে যায়
অনন্ত পথের ধুলোর মিছেলে কেবল হেটে যায়
এইখানে একদিন যে সুরে বেহুলা কাঁদে- লখিন্দর কাঁদে
গৌড় রাজার প্রাক্তন স্ত্রীর চুলের সিঁথি রেখা ধরে-
মনে হয়ে তারে নাম ধরি ডাকি- একদিন নদীর দিকে
হাওয়ার সুরে ভুলে যাই নগরী আলোর কোলাহল নিনাদ।



মাছ সম্পর্কে

ধরা যাক মাছগুলো ঘুমোয়নি কিংবা জলের
ভিতরে অথৈ শীত, নখগুলো ভিঁজে কাতর
গরম কাঁথার নিচে উষ্ণ গভীর তল।

ধরো গাই মাছেদের গান, জলের অসীমে বাঁধি এক ঘর
সারা শরীর নোনা স্বাদে ভরা আর চেয়ে আছে জলজ ভবিষ্যৎ।

ঢেউগুলো ইথার শব্দের মতো গায় ভ্রমণের গীত
আর মাছেরা ধামাইল নাচে মেতে রয়;
অলীক অসুখ হলে ছোঁয়াচে রোগের ভাবনায়
ডুবে যেতে হয়- ভেসে যেতে হয়।

ধরি মাছেরা খুঁজে আড়াল, আরো মাছেদের থেকে দূরে
আরো বেশি গভীর আরো বেশি জলের সিনার ভিতরে।




চৈত্র বিষয়ে

আমরা তেমন কিছু আর বলছিনা চৈত্র বিষয়ে
গোপনে টুকানো শেষে বিকেল নেমে এলে আমাদের হয়ে
ফুলের পাপড়ি ভুলতে চায় পাখির সোহাগ;
আগত সন্ধ্যার কথা ভাবতে ভাবতে বর্ষা উড়ে এলো-
পিপড়ার চলন ধ্বনি শুনছেনা পুরনো দেয়াল।

একটা খাদক টিকটিকি সারা সন্ধ্যা আগলে রাখে
আমাদের চোখের পাতায় জড়ো হয় ঘুম
হাওয়ার ভরে ঘুরে বেড়ায় শোকার্ত দিন, শোকার্ত রাত।

কাচের আয়নায় বেঁজে উঠে ঠোঁট- ঝুনঝুন, ঝুনঝুন।

এবার আমরা সংসারী হবো, কাঠের আলনায় দোলাবো শরীর
ভীষন ইচ্ছায় লাল গোল গোল সারা রাত পর ফুলের কান্না পায়;
আবার চৈত্র এলে বৈশাখীও ফিরে আসে আমাদের ঘর।
এখন পুতুল বিয়ের দিন, চারিপাশে অকাল বর্ষা
পায়ের পাতায় আলতার ফুল; পানের বরজ আরো দীর্ঘায়ু হয়
জাহাজও ভ্রমণে আসে আমাদের শহর।




রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে

আহত পাখিরা সে রাতেই মারা গেলো
শোকবইয়ে দু'বাক্য লিখবেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি
এমন প্রতিশ্রুতির খবর জানালো আমাদের টিভিগুলো;

আমাদের জানালা ভেঙ্গে পড়লো শব্দের ভারে
আকাশে উড়তে দিলাম ঘরে পোষা পায়রার দল
সূর্যের উত্তাপে ভীষণ চিকচিকে হলো
বঙ্গ ভবনের সাদা দেয়াল।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যু সংবাদে শোকার্ত বিদেশী দূতাবাসগুলো,
রঙিন মোড়কে ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে এলো সাঁজোয়া যান।

প্রতুশ্রুতি মোতাবেক আমরাও দাড়ালাম ম্লান মুখে
বঙ্গ ভবন হতে গাড়ির বহর ছুটে এলো
বিষন্ন হাওয়ায় পতপত উড়লো অর্ধ-নমিত পতাকা;
শুধু শোকবইয়ে রাষ্ট্রপতির স্থবির ছবির নিচে-
স্বাক্ষর দিতে উঠে দাড়ালেন না স্বয়ং রাষ্ট্রপতি।



ঘাসের অসুখ

একদিন ঘাসের শরীরে হবে জ্বর, শুন্যে নেমে যাবে শিশিরের তাপ
উত্তর মেরু ভ্রমণের ঘোরে- দক্ষিণ মেরু ভ্রমণের ঘোরে
এক পাল ঘাস ফড়িঙের দল- রোদ চশমা লাগিয়ে ঘুরে
বেড়াবে, ঘাসের ওপারে ঝাউবনের ভেতর।

অহিংসার কিছু আগুন হবে
অগুণতি রোদেল ঢেউ ছুয়ে যাবে ঘাসের ঠোঁট
ক্ষয়ে যাওয়া লবণ দানায় আটকে রবে ছুপ ছুপ জল।

এমন একদিন পলাতক হাওয়া ঘুরে বেড়াবে আমাদের শহর
ধুলোর টগবগ শিখা- তরুণ ঘাসের ঠোঁটে পোহাবে উপোস রাত।

দুধাল ঘাস অসংকোচে পুড়ে হবে ছাই, ফুলের বাগান হতে
ফুলের রেণু-পাতা ঝরার শব্দে উন্মুখ আরো কিছু ঘাস
বেহাল কর্তাল ধ্বনি, বায়ুবাহি অন্য ঘাসের ঘ্রাণ সহ
মেরু ভ্রমণ শেষে ফিরে এলে-
ঘাসের অসুখ আলপথ ধরে বহুদূর- কতদূর ভেসে যায়?



বাকি রাত

বাকি রাতটুকু কেটে যাক নার্সারি বাগানে, চোখের পাতার কাছে
এক লাশকাটা ঘরে, অধল হয়ে গেলে পুরনো রুপার চামচ
পুকুর পাড়ের ঘাসে শুয়ে পড়া যাক-
এই রাতে ফুটে উঠুক দুধেল ফুল, সোনার দেরাজ খুলে
জুতোজোড়া পায়ে- পৌছার পথ ধরে কিছু আলো নিভুক;
ভাড়াটে ঘুমের বহর পুরিয়ে এলে, নিজেও পৌছে যাই ভ্রুণের শহর।

দখিন দুয়ার খুলে এক আলতার বরজ, আর সহজিয়া সুরভী মাখা
খুনের করাত। ভুলে ভরা দেয়ালিকায় রঙ কিছু লেপে-
হারানো গানের সুরে আমরাও মাতি।

বাকি রাত শুয়ে থাকি চাষার ঘরে, ফসল কাটার দিন
গনিয়ে এলে- কিছু বীজ বপন করি নদীর ধারে
আর কিছু পাকা ফুলের কুসুম শুকিয়ে রোদে-
নিজের দোকানেই সদাই সারি;
কুহুকাল ডুবে থাকি সিঁথি রেখা ধরে, নরম জাজিম ছুয়ে
ভেসে উঠা ভোরে, কেটে যাক আরো কিছু আবাদ সময়।



আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে

আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার পর্ব বলতে শীতকালটা ছিল
পৌষের আগে আগে যে রকম সন্ধ্যা নামে
ভেঁজা কুয়াশা ঠোঁটে মেখে ঘর ফেরত পাতি হাসের দল;
শুকনো ধুলো উড়তে উড়তে আমাদের জানালায় উল্টে যেত
ঘরের পর্দা আরো বেশি ভারি হয়ে উঠলে-
আকাশের রঙটা একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে গেলে
আমাদের সাক্ষাত বলতে ঐ সময়টাই ছিল।

দরজার বাইরে ঘুমিয়ে পড়তো মেটো আলো
খরচার ভয় ছিল
তবু সঙ্গম মুখর হাওয়া আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে উঠলে
দেয়ালে লেপ্টে থাকা হাস্নাহেনার গন্ধ শুকে শুকে ভ্রমণে যাওয়া যেত
আমাদের সাক্ষাত পর্ব বলতে ঐ সময়টুকুই ছিল।

গতবার যখন আলোটা নিভে গেল ভোরের আগে
দেয়াল ঘামতে ঘামতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো,
সূর্যটা এত আলসে ছিল যে জোনাকিরা গাইল নাদাইর গীত
আমরাও জড়তা ভেঙে শুনতে থাকলাম শিশির ঝরার শব্দ;
এইভাবে আমাদের সাক্ষাত শেষ হয়ে এল বলে
দারুণ শীতকালটা জমে গেলো।


তাই আর বলতে হয়না

তাই আর বলতে হয়না নদীর কথা
গোপন সুড়ঙ্গ পথে কে বা কারা আসে যায়
শৈবাল শরীরে লেগে থাকা অচেনা গন্ধে-
মহুয়ার বন কেন দুলতে থাকে- কিসের আশায়

বনেলা পাখির সুরে কে কথা কয়
কার চোখের পাড়ে উতলা নদী
কোন জানালায় ভেঙ্গে পড়ে ঝড়ের হাওয়া
বলতে হয়না কেমন রং ছড়ায় রংধনু রেখা
কেন দিন নেমে আসে উড়াল দুপুর নিয়ে-

অচেনা সারস ঠোঁটে ঝুলে থাকে মাছের শরীর
অনাগত চুমোর আঁচে জেগে উঠে উদ্বিগ্ন ফুল
পাহাড়ি আলে শুয়ে কে কে অঘোর নিদ্রা যায়
আর দ্বীধায় পুড়ে কেন নিঝুম বিভাসী চুল-



হত্যাংক

তোমাকে হত্যা করার আগেই আমার মৃত্যু হয়
মরার আগে বুঝেছিলে কি মৃত আমি
মৃতদের কথা বলতে নেই, তাই মরে যাই।

আমাকে হত্যা করার আগেই তোমার মৃত্যু হয়
মরার আগে জেনেছিলাম কি মৃত তুমি
মৃতদের চোখে দেখতে নেই, তাই এমন হয়।

আমাদের মরতে হয় বলে বেঁচে আছি
আর মৃতদের কোন প্রান নাই - মৃত্যু নাই।











পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

Translate

বই

বই
আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে

সেরা পাঁচ

  • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
      হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে  নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক। ১....
  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বেলায়েত মাছুম
      ১. তুমার আত থাকি কুন্তা খাইলে তুমার চউখো চউখ পড়লে  আমি টাল অইজাই পাতা যেলা পরি থাকে ঘাসর উপরে মনো অয় আমিও পরি থাকি হারাদিন, বিয়ান থাকি হাই...
  • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    নৈশ সভা নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা; নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে- তার কথা কোন...
  • দিনলিপি | বেলায়েত মাছুম
    ১. এইভাবে একদিন লিখে রাখি জানালার কথা, দক্ষিণের হাওয়ায় ভাসা ফুলের রেণু,পাখির পালক হতে গুনগুন আওয়াজ; শব্দের ভেতর কাঁপা শোভন আলো, পা...
  • গত হওয়া শীত কিংবা বসন্তের কবিতা গুচ্ছ | বেলায়েত মাছুম
    আজ ১লা ফাল্গুন। দেশে শীত শেষ হলেও শীতল ভাবটা নিশ্চয় রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডেও শীত শেষ হয়ে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা আর ঝিরঝির তুষার...

গোলা । উগাড়

  • ▼  2022 (3)
    • ▼  জুলাই 2022 (1)
      • যে শহরে তুমি নাই, কোকিল ডাকবে কেন | বেলায়ত মাছুম
    • ►  মে 2022 (1)
    • ►  এপ্রিল 2022 (1)
  • ►  2021 (7)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2021 (1)
    • ►  জুলাই 2021 (2)
    • ►  জুন 2021 (1)
    • ►  মার্চ 2021 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2021 (2)
  • ►  2020 (9)
    • ►  অক্টোবর 2020 (1)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2020 (1)
    • ►  জুলাই 2020 (1)
    • ►  জুন 2020 (1)
    • ►  মে 2020 (1)
    • ►  মার্চ 2020 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2020 (2)
    • ►  জানুয়ারী 2020 (1)
  • ►  2019 (3)
    • ►  অক্টোবর 2019 (1)
    • ►  জুলাই 2019 (1)
    • ►  মে 2019 (1)
  • ►  2018 (5)
    • ►  ডিসেম্বর 2018 (1)
    • ►  জুন 2018 (1)
    • ►  মে 2018 (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2018 (1)
  • ►  2017 (6)
    • ►  আগস্ট 2017 (1)
    • ►  জুলাই 2017 (1)
    • ►  জুন 2017 (1)
    • ►  মার্চ 2017 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2017 (1)
    • ►  জানুয়ারী 2017 (1)
  • ►  2016 (8)
    • ►  ডিসেম্বর 2016 (3)
    • ►  জুলাই 2016 (1)
    • ►  জুন 2016 (1)
    • ►  মে 2016 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2016 (2)
  • ►  2015 (30)
    • ►  ডিসেম্বর 2015 (3)
    • ►  নভেম্বর 2015 (2)
    • ►  জুলাই 2015 (2)
    • ►  জুন 2015 (3)
    • ►  মে 2015 (7)
    • ►  এপ্রিল 2015 (6)
    • ►  মার্চ 2015 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2015 (3)
    • ►  জানুয়ারী 2015 (3)
  • ►  2014 (8)
    • ►  নভেম্বর 2014 (4)
    • ►  অক্টোবর 2014 (4)
  • ►  2010 (17)
    • ►  আগস্ট 2010 (5)
    • ►  জুন 2010 (1)
    • ►  এপ্রিল 2010 (11)

বিষয়

অ-কথা অ-গদ্য কবিতা গান ছবি প্রেমের কবিতা ভ্রমণ English Poetry
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.


আপনার সাহায্য পেলে বিদ্যানন্দের কাজ আরো সহজ হবে। বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

অন্যজন

  • মীর রবি
  • মুরাদুল ইসলাম
  • সুহান রিজওয়ান

যোগাযোগ

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Copyright By Belayat Masum | Designed By OddThemes | Distributed By Blogger Templates