ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম


 



হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক।



১.
মৃত ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায়
সকাল নাই, বিকাল নাই— দুপুর গড়ায়
মৃত ধান পাতারা উড়ে উড়ে দূর চলে যায়


বাসস্টপে আমি— বাস গুলো দাড়ায়
আমার তাড়া নাই
তবু ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যার বাসে উঠে বসি
জানলায় মৃত ধান পাতা উড়ে
আমার সময় যায়—


যেন সেই মদ খাওয়া লোক
পায়না তার ঘর
ভাবে—
পৃথিবীর সকল দরজা আছে খোলা—
দুলতে দুলতে কার দুয়ারে দাড়ায়
আর মৃত ধান পাতারা উড়তে উড়তে কোথাও চলে যায়।




২.
আর মৃত ধান পাতারা উড়তে উড়তে কোথাও চলে যায়
আমি বসে থাকি বাসস্টপে— তাড়া নাই
সন্ধ্যায় ফেরা বাসে করে দূরে যেতে থাকি
মায়ের থেকে বাবার থেকে—
যেখানে ধান ফুল ফুটেনা কৃষক নাই
বোনের থেকে ভাইয়ের থেকে—
আমি দূরে যেতে থাকি আর ধান পাতারা
আমার মুখের কাছে উড়তে থাকে।


৩.
ধান পাতারা আমার মুখের কাছে উড়তে থাকে
জানালায় গ্রীল আছে তবু সন্ধ্যা-পাখীর ডাক শুনি
তন্দ্রায় আপ্লুত চোখ নিয়ে পৃথিবীর কোথাও দাড়াই
ভাবি আমার তাড়া নাই তবু জোর পায়ে হাটি।

আমার মুখের কাছে ধান পাতারা উড়তে থাকে
শৈশবের বাড়ি থেকে দূরে এক প্রাচিন উৎসবে
আমি কোথাও যাব ভাবি এমন আরো সংসার হলে

ধান পাতারা যখন হাওয়ার পাশে হাওয়া হয়ে উড়ে
মনে হয় আমিও উড়ে যাই বাড়ির প্রান্তর ছিড়ে।


৪.
আমি উড়ে যাই না— ধান পাতা উড়ে
আকাশে আকাশে— বাতাসে

বাস স্টপে দাড়িয়ে বাসের মতন
কে যেনে ডেকে যায়— ডেকে যায়
কোথাও উড়িনা আমি— ঘুরিনা কোথাও
ধান পাতা বসে থাকে মুখের উপর।

উড়ে উড়ে ধান পাতা উড়ে যায়
আমার তাড়া নাই— দূরে যাই।


৫.
আমার তাড়া নাই তবু ধান পাতা উড়ে
দূরে বনের দিকে— আরো দূরে
আমার সংসার নাই, তবু মৃত ধান পাতার দল
করুন মুখের তলে— উৎসব শেষে

তুমুল আকাশ ধ্বনি— তুমুল আমার ভেতর
উড়ার শঙ্কা যেন ততদূর উড়ে
আমার তাড়া নাই, তবু মৃত ধান পাতা আজ
থাকে পরম অশোক জুড়ে— তর্জনী ছুয়ে



৬.
আমার তর্জনী নিয়ে যাচ্ছে হাওয়া
আর এক মৃত ধানপাতা—
উড়ে উড়ে সারাদিন আমার পায়ের কাছে
পৃথিবী ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে আসে।
পড়শীর উৎসব শেষ
তবু কিছু জনতার উষ্ণ অভিনন্দন
ধান পাতার দিকে —ধীর মিছিলের মতো—
উড়তে উড়তে শোক হয়ে যায়।

আমার তর্জনী উড়ে যাচ্ছে হাওয়ায়
ভিনদেশী খড়ের আলিঙ্গনে—
যেন মেতে থাকে সে আমারই ঘরে
পোষা মোমের অলংকার —পুড়ে পুড়ে যেমন কিছু ছাই—
উড়তে পারেনা ডানা নাই বলে।

মৃত ধান পাতার শরীরে মেতে থাকে হাওয়া
আমার চোখে শুধু ঈর্ষাই জমা হয়—
কোণে কোণে যেমন তুফান —আর নদী—
আর সকল ফুলের কলি ঝরে—
সেই মতো যেন আমার বিশ্বস্ত তর্জনী
ভেঙ্গে পড়ছে তোমার পুরনো দুয়ারে কেবল।



৭.
তোমার পুরনো দুয়ারে কে থাকে বসে
ধান পাতার মতন
শুনায় মরমীয়া গান—
সেই পুরনো সুরে— উড়ে উড়ে।
পাখীরা যেন হয়ে গেছে পলাতক
ঘর নাই আর, শুধু হাওয়ায়—
দুপুরের আগে সেই ধান পাতার মতন
আগলে রাখে তোমার কপাল।



৮.
তোমার কপালে ঘাম
সন্ধ্যা নামছেই না পৃথিবীর গায়ে,
তবুও আমাদের বাড়ি ঘিরে উৎসব—
তবুও তোমার কপালের ঘাম
মুছে দিতে নেই মানুষের এমন কোন হাত।

তুমি যেদিন পলাতক হবে
রবিবার শেষ—
আঙিনায় থাকবেনা জবা ফুলের ঢালি,
বাড়ির সকল দরজায়
তোমার মুখের মতো
পড়ে থাকবে আগনের ধান পাতা সকল।



৯.
আগনের ধান পাতা পোড়ানো শেষ
বাতাসে উড়ছে ছাই
আমার চোখের ভেতর কাজলের বন
তুমি আজ বাড়ি নাই।

কাল থেকে লোক আর পড়শীর ঘর
চোখের উপরেই উড়ে
দরজায় পড়ে আছে দু'তলার সিড়ি
পা দিলেই যায় পুড়ে।

আগুনের কাছে মেলে দেও কোল
জলের অতলে পা
দেখা হলোনা আর না দেখা চোখে
কেবলই বাঁধো খোঁপা।