বেলায়েত মাছুম
,
  • বাড়ি
  • কবিতা
  • গদ্য
  • প্রযোজনা
  • সংযুক্তি
    • অ-কথা
    • সংকলন
      • অঞ্জন দত্তের গান
      • শাহ্ আব্দুল করিমের গান
      • কল্পকান্ত সদাই'র গান
      • অ-সংযোগ
    • ভ্রমণ
    • আমি
  • ISSUU
  • বই
    • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে
    • পাখীদের পানশালায়

পর হাওয়ার পরশ- বেলায়েত মাছুম

১.
গাছেরা কোন কথা বলছেনা আর
মাত্র জমলো পাতাদের সংসার
উড়াল রোদের চোখে ঘুম-
উদ্বাস্তু হাওয়া ছুয়ে দিচ্ছে বারেবার।

২.
বিদেশি হাওয়ায় দুলছে পাতা
উঠানে লাউ ঝার- ঠগবগ, ঠগবগ
সাদা সাদা ফুল ঝরছে শুধু
ঘাসের উপর, সারা দুপুর।

৩.
মনে হয় ঘাসের মতোন
গলাকাটা-
পড়ে আছি নিজের উপর।

৪.
রোদ-
যেন আগুন্তুক অতিথি
ঘরে ফিরছে, ফিরে আসার জন্য।

৫.
বৃষ্টিতে মেতে আছে পাতার বন
পাথর কণা, ঘাসের মুখ
বাঁজিয়ে শুনাচ্ছে যেন দোতরা সুর।

৬.
ঝুমুর বাঁজাচ্ছে কেউ
সোনারোদ মাখছেনা পাখির পালক

কেউ গাইছেনা গান
কেউ শুনছেনা আর ঘড়ির আওয়াজ

চারদিকে মনে হয় আলেয়ার ঘোর
ঘাসের শরীর মেতে আছে হাওয়ায়
কেউ বাঁজাচ্ছে ঝুমুর বুকের ভেতর।

৭.
ঘর তাড়াচ্ছে আমায়
রঙিন জামায় মাখছি সুগন্ধী
সমুদ্র ভ্রমণের স্মৃতি সমুহ নিয়ে
ঘুরছি সারা শহর।

৮.
এ বেলা কেউ ডাকলোনা আর
কার ঘর দূরে সরে যায়
কে তবে উড়াচ্ছে হাওয়া;
দুপুর প্রায় শেষ- সন্ধ্যা নামছেনা তবু।

৯.
যীশু যেন পোহাচ্ছেন রোদ
গ্রীষ্মের তাপ-রোদে বসে গীর্জা চূড়ায়
ইতস্তত, তার বিধূর চোখ
নরম ঘাস ও লতিকারে পোড়ায়।

১০.
পৃথিবী ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে আমার জানালায় যেন বসে আছে এক অতিথি পাখি। হাওয়ার আলিঙ্গনে বারবার ঝরে পড়ছে তার রঙিন পালক।

অহিংসা, মূলত একটি অভিধানি শব্দ!

হাওয়ার ভরে উড়ে বেড়াচ্ছে পোষা পায়রার দল, গাছের পাতাও নাচতেে নাচতে নদী পাড় হয়ে যায়। পৃথিবীর কোথাও শব্দেে ভেঙে পড়ছেে হাওয়ার দেয়াল, রোদ ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছে মেঘের 'পরে।

আমার জানালায় যেন এক অতিথি পাখি চেয়ে আছে পাতার দিকে, রোদের ছায়ায়।




© বেলায়েত মাছুম
ওল্ডহাম
গ্রীষ্ম, ২০১৭


উড়াউড়ির গল্প

আমাদের উড়াউড়ি নিয়ে কোন গল্প নেই কিংবা কোন চিত্রকর্ম; প্রাসাদের দেয়াল যত দীর্ঘ হয় অন্ধকারে- তার চেয়ে প্রশস্ত বুকের মাপে কোন মানচিত্র আঁকা হলোনা পাথর খুদে। ঘড়ির বয়স বেড়ে গেলো শুধু; তুমুল হাওয়া একদিন ছুয়ে দিলো আমাদের বিষন্ন চুলগুলো। 

গাছের পাতা হতে ঝরে গেলো টুপটুপ জল, আমাদের চোখ, পায়ের পাতা ভিঁজলো আসন্ন শীতের ধুলোয়। আরো অনেক হেমন্তী সন্ধ্যার মতো, অপার অন্ধকারে ডুবে গেলো আলোক রশ্মি। আর দূর হিমলায় শান্ত কুহকের ছায়ায় চুপচাপ, চুপচাপ মেতে রইল নিজের ভেতর। তবু আমাদের জন্য কোন গান, নৃত্যে সম'গীত গাইলোনা ঝি ঝি পোকার দল।

গত হওয়া দিনের বাড়তি স্মৃতি সমুহ নিয়ে একদিন আমরা মুখোমুখি হলে- আবার হয়তো বলা যাবে কোন্ কোন্ দুপুর আমাদের ঘামিয়ে দিলো; যাযাবর পাখিদের ঠোঁট কেন ফিরে গেলো নিজেদের ডেরায়, ঘড়ির কাঁটার অগুনতি ঘুর্ণন শব্দে কেমন করে মাঝ রাত ঝিমুতে থাকে।

আমাদের উড়াউড়ির শব্দে তন্দ্রাসক্ত কুয়াশা ঝরে যায়- এমন গল্প আর চিত্রের আগাম কল্পনা নিয়ে ভ্রমণে যাই। জরাগ্রস্ত দুপুরে শোকগান গাইতে গাইতে যখন সন্ধ্যা নামে, যখন প্রজাপতি আর উড়তে চায়না নিজের ডানায়- মনে হয় সকল শব্দেরা উৎকন্ঠা নিয়ে ফিরে আসে ঘড়ির ভেতর। 


আমাদের বসে থাকা

আমরা পৃথিবীর কোথাও বসে থাকি উদ্বাস্তু হৃদয় নিয়ে, ঘিরে থাকা চাঁদের আলোয় মুগ্ধ হতে চেয়ে আকাশের পানে থাকাই, সন্ধ্যা তারার দেয়াল জুড়ে চোখ রাখি, অন্ধকারের ইশারায় ডুব দিতে নেমে যাই বুকের জমিন হতে; অবকাশ যাপনের কোন দৃশ্যে আমাদের আর পাওয়া যায়না- যদিও প্রতি সন্ধ্যায় সূর্যকে ডুবে যেতে হয় নিরুদ্দেশ ইচ্ছায়।

ভেসে যাওয়ার নৌকায় চড়ে কোন দূরে যাই? অবগত কোন্ ফুলের সুরভী ঘিরে রাখে চারদিক?

এমন সন্ধ্যায় লবণ চাষীদেরও ফিরতে হয়, কোথাও ফেরার ঘর নেই জেনেও সূর্যাস্তগামী আলো রেখা ধরে- বহুদূরে আমাদের চলার শব্দ থামে; আমরা জল আর গোধূলি পানে মেতে রই। অন্ধকারে যে সকল দৃশ্য চোখ সয়ে উঠে- হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেই অদৃশ্য কোমল পরশ; লালাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভাবনায় ডুবে যেতে হয় প্রতিনিয়ত নিজেদের ভেতর।

এইভাবে যদিও বসে থাকার গল্পে আমরা নেই-  সূর্যাস্তের মুখোমুখি হওয়ার আশংকায় বিকেলটা পালিয়ে বেড়ায়; আমাদের আঙ্গুল গুলো ভ্রমণে গেলে ফিরে পেতে চাই। লোমকূপ হতে যে সকল ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয় তার রুপ আমাদের জানা নেই- আমরা কেবল ডুবে যাই- বসে রই।


আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে

আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার পর্ব বলতে শীতকালটা ছিল
পৌষের আগে আগে যে রকম সন্ধ্যা নামে
ভেঁজা কুয়াশা ঠোঁটে মেখে ঘর ফেরত পাতি হাসের দল;
শুকনো ধুলো উড়তে উড়তে আমাদের জানালায় উল্টে যেত
ঘরের পর্দা আরো বেশি ভারি হয়ে উঠলে-
আকাশের রঙটা একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে গেলে
আমাদের সাক্ষাত বলতে ঐ সময়টাই ছিল।

দরজার বাইরে ঘুমিয়ে পড়তো মেটো আলো
খরচার ভয় ছিল
তবু সঙ্গম মুখর হাওয়া আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে উঠলে
দেয়ালে লেপ্টে থাকা হাস্নাহেনার গন্ধ শুকে শুকে ভ্রমণে যাওয়া যেত
আমাদের সাক্ষাত পর্ব বলতে ঐ সময়টুকুই ছিল।

গতবার যখন আলোটা নিভে গেল ভোরের আগে
দেয়াল ঘামতে ঘামতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো,
সূর্যটা এত আলসে ছিল যে জোনাকিরা গাইল নাদাইর গীত
আমরাও জড়তা ভেঙে শুনতে থাকলাম শিশির ঝরার শব্দ;
এইভাবে আমাদের সাক্ষাত শেষ হয়ে এল বলে
দারুণ শীতকালটা জমে গেলো।




© বেলায়েত মাছুম
    জুলাই, ২০১৭
    চিত্রঃ @flowsofly
   


১.
গত রাত ঘুমিয়ে কাটানো গেলো
বাইরে কুয়াশা
জানালার কাঁচ ভিঁজে গেলো শুধু

২.
পুরনো বইয়ে হলদে পাতা
চোখের চশমা বদলানো গেলো
নদীর কথা ভেবে কেটে গেলো দিন

৩.
তবু চোখে আলতা পড়া গেলনা
রঙকে সস্তা প্রসাধনী ভাবা যায়
দোকানি বসে আসেন টিভি পর্দায়

৪.
সাইরেন গাইতে জানেনা
দূরগামী হাওয়া বয়ে আনে সুর
শোকের গীত বাঁজছে, বাঁজছেই

৫.
গল্পটা পুরনো ও স্মৃতির
শাখা-প্রশাখায় জাগছে পাতা
চারদিকে গুন্জন বসন্ত, বসন্ত

৬.
দরোজা এক প্রাচীন প্রবেশ পথ
সহজিয়া হাওয়া ভ্রমণে যায়
আলো রেখার পর, আলোকবর্ষ দূর

৭.
ঝরে পড়ে তুষার বালুর উপর
বহুগামী হাওয়া
নুয়ে পড়ে আকাশ, বহুদুর পথ

৮.
আঙ্গুলের পর আঙ্গুল-
পাহাড়ের চুড়া রেখা শুয়ে পড়ে
দৃশ্যটা আঁকছেন কথিত চিত্রকর

৯.
মৌমাছি ডাকছে
আগুন্তুক পাখির ঠোঁটে লালা
ঝলসে যাচ্ছে চোখ পুরনো কাঁচঘরে

১০.
ধাতব অন্ধকার পোষা যায়
পাতার আগলে ধবল ঘাস
শুনশান হাওয়া করছে ভ্রমণ



© বেলায়েত মাছুম
   ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
    ছবি: অন্তর্জাল
 
সুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন- বাংলা লোকগানের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও শ্রোত গান। প্রায় একই সুরে গাওয়া হলেও গানের কথা দুইভাবে গাওয়া হয়। নিচে উল্লেখিত প্রথম গানটি  উদ্ধার করে উস্তাদ রাম কানাই দাস সুর করেছেন বলে জানা যায়, কিন্তু দ্বিতীয় গান উস্তাদ রাম কানাই দাসের করা সুরের কাছাকাছি হলেও বলা হয় সুর প্রচলিত। আর একই গানের দুই রকম কথা কি করে হয়, অদৌ সম্ভব কিনা? শীতালং শাহ গান লিখেছেন সিলোটি নাগরীতে, তাহলে কি যারা নাগরী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন, ঠিকমত করতে পারেন নি? আমার এমনটি মনে হয়না, কারণ নাগরী খুব কঠিন ভাষা নয় আর অনুবাদে এত বেশি কথার বদল বা পুরো বাক্য বদলাতে পারেনা কারণ বাংলা আর নাগরীর শব্দের উচ্চারণ ও অর্থ প্রায় সমান।

প্রথম গানটি ওস্তাদ রাম কানাই দাস নিজে গেয়েছেন এবং সুর যে নিজেই করেছেন তা শুনলেই বুঝা যায়, সুরে উনার নিজস্বতা আছে। আর দ্বিতীয় গান জনপ্রিয় করার পিছনে ভারতের গানের দল দোহার'র অবদান বেশি। তারা গান ভাল করেন, এতে কোন সন্দেহ নাই, তবে আমার মনে হয় তারা নিজেদের জন্য সুরকে পরিমার্জন, পরিবর্তন করার পাশাপাশি অনেক সময় গানের কথারও পরিবর্তন করে থাকেন, কিন্তু এত বেশি অমিল হওয়ার কথা না। 


উস্তাদ রাম কানাই দাস ও কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য- বেলায়েত মাছুম

উস্তাদ রাম কানাই দাস ও দোহার যদি শীতালং শাহ'র লেখা পান্ডুলিপি থেকে গানটি  উদ্ধার করেই থাকেন, দু'রকম হয় কি করে?

এই লিখাটা প্রায় এক বছর আগে লেখা, ভেবেছিলাম দোহার গানের দলের প্রাণ কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যকে এ বিষয়ে জিগ্যেস করবো। তিনি গত ৭ মার্চ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর জিগ্যেস করা হলোনা। আর ওস্তাদ রাম কানাই দাসকে জিগ্যেস করার সুযোগও নাই, তিনি আরো আগেই প্রয়াত।

কালিকাপ্রসাদ ছিলেন সংগীতের সেতু, দুই বাংলায়।


বাংলায় এমন আরো প্রচলিত গান আছে যা একই সুরে গাওয়া হলেও কথা ভিন্ন, দেশের অনেক গুণি শিল্পী যাচাই না করেই প্রচলিত গান গুলো গাচ্ছেন। একেক জন একেক ভাবে গাচ্ছেন আর গানের কথা, সুর বদলে যাচ্ছে, এতে গানের প্রতি তাদের অবহেলাই প্রকাশ পায়।


১.
সুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন সুয়া উড়িলরে


আরলা মুকামে ছিলায় আনন্দিত মন
ভবে আসি পিন্জুরাতে হইলায় বন্ধন


নিদয়া নিষ্ঠুরও পাখি দয়া নাইরে তোর
পাষাণও সমানও হিয়া কঠিনও অন্তর


পিন্জুরায় থাকিয়া করলায় প্রেমেরও সাধন
পিন্জুরা ছাড়িয়া যাইতে না লাগে বেদন


শীতালং ফকিরে কইন দম কর সাধন
দমের ভিতর আছে পাখি করিও যতন







২.
সুয়া উড়িলো উড়িলো 
জীবেরও জীবন
সুয়া উড়িলো রে


লা-মোকামে ছিলাই সুয়া
আনন্দিত মন,
ভবে আসি পিঞ্জিরাতে
হইলা বন্ধন


পিঞ্জিরা থাকিয়া কইরলায়
প্রেমেরও সাধন,
এখন ছাড়িয়া যাইতে
না লাগে বেদন


তুমি নিজ দেশে যাইবে পাখি
ফুরিলে মেয়াদ
তোমার পিঞ্জিরা রহিবে খালি
হইয়া বরবাদ


লা-মোকামে যাওরে পাখী
করিয়া গমন,
হায়রে পিঞ্জিরা যে কান্দে তোর
প্রেমেরও কারণ


শোনো শীতালং ফকিরে বলে
মনে আলাপন
আরে যাওয়ার সময়
যাও পাঙ্খি দিয়া দরশন






 © বেলায়েত মাছুম
     ওল্ডহাম
     ১৫ চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
আজ ১লা ফাল্গুন। দেশে শীত শেষ হলেও শীতল ভাবটা নিশ্চয় রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডেও শীত শেষ হয়ে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা আর ঝিরঝির তুষার পড়ল। গাছে গাছে নতুন পাতা, ঘাস শীর্ষ রোদ উঠলেই ঝিকমিক করছে। এখানে, প্রবাসেও বসন্ত আসছে। সবাইকে বসন্তের শুভেচ্ছা।
                                                                                 
                                                                                  
                                                                                   






১.
পাতার শব্দে পাতা
জেগে উঠে ঘুমের লহর হতে
আয় ঘুম বলে
গান গায়
এক শহুরে কথক পাখি।

২.
মা পাখি পাতার গল্প বলে
সবুজ পাতার
হলুদ পাতার
শিস দিয়ে শোনায় পাতার গান
সন্ধ্যা নেমে এলে পাতায় পাতায়।

৩.
গাছেরা ভ্রমণে যায়
গাছেদের অসুখ হলে
গাছেরা নাচতে থাকি
তুষারি ঠান্ডা হাওয়ায়।

৪.
এক পাতাবাহার গাছ- উঠান ছাড়িয়ে উঠে গেছে জানালার কাছে।
রঙিন পর্দায় আঁকা আছে ছবি।হেমন্ত শেষ হয়ে এলে- তবু পাতা বাহার
গাছ উঠতে থাকে জানালার দিকে। জানালা ভুলে গেছে আকাশের রঙ।

৫.
ঝরে গেলো পাতা, ঝরে গেলো ফুল
ধুলোর উপর- হাওয়ার তোড়ে
ভেসে গেলো;
দূর হাওয়া শুনালো
ঝরা দিনের গান, তুষার ছুয়ে
দিলে গুন্জন উঠে- বসে থাকে
পাতা শুন্য গাছ।

৬.
ঘাসের শরীর আকড়ে শুয়ে থাকে তুষার
চুমোর আসক্তি নিয়ে ফিরে আসে রোদ;
তুমুল লু-হাওয়ায় উড়ে যায় ধীরে
অ্যাশ গাছের গোড়ালি হতে শুকনো মর্মর পাতা।

৭.
তবু গ্রীষ্ম আসে
গ্রীষ্মের মতো রোদ নিয়ে
গাড়ীর গ্লাস ভেদে-
প্রেমিকার চোখে সুপ্ত পুরনো
প্রেমের আভা নিয়ে।

৮.
জানালাকে দূর অতীত ভাবা যায়-
কুয়াশায় প্লাবিত চৌকাঠ পরে নিঃসঙ্গ ছায়া
ভেঁজা স্যাঁতসেঁতে হাওয়ায় ওত পেতে রয়;
ছেড়া ছেড়া অন্ধকার ঘিরে রাখে চারদিক
সুষম জোছনা আগলে রাখে অপুষ্পক ফুলের হাসি।

৯.
পাতাদের কথা ভাবা যায় শীতে
উৎসব ফুরিয়ে এলে হেমন্তের আগে
কিছুদিন আরো পাতাদের স্মৃতি
গল্পের ছলে বলা যায় আরো পাতাদের কাছে।

১০.
দামেস্ক শহর ঘুরে আসা যায়
উদ্বাস্তু হাওয়ার খবরা-খবর যে তটরেখা ধরে হাটতে থাকে
শীতের রাতে;
ফুলের ভঙ্গুর পাপড়ির শরীর হতে
বসন্তের গন্ধ ঝরে গেলে আরো বহুবার
প্রাচীন গাথার দৃশ্যকল্পে ঘুরে আসা যায়
দামেস্ক শহর হয়ে।




ওল্ডহাম/২০১৭

© বেলায়েত মাছুম 



শীত কাল কিংবা শীতের কাল- Belayat masum, বাংলা কবিতা



১.
এইভাবে আমি একা হয়ে পড়ি
বইয়ের পাতার মতন
অসংখ্য শব্দের ভিতর দিয়ে-
এখন কিছু স্মৃতি অস্বীকার করাই যায়।


২.
এই শ্যাওলার ভিতর শুয়ে থাকা যায়
নরম জাজিম ছুয়ে
পোড়াক নদীর ঢেউ গুনে গুনে
অজস্র অগুনতি সন্ধ্যায়।


৩.
ডিসেম্বরে রাত দ্রুত নামে
শীতকালীন মদে ডুবে থাকায়
ঝরে যায় পাতা-
আশ্বস্ত বিকেলে দাড়িয়ে থাকে কথক গাছ।


৪.
টমেটো বাগানে
উঠতি রাখালের দল বাঁজায় তালি
ভাঙা বাশের আড়ালে গেয়ে উঠে
এক উদ্বাস্তু শশীনির হৃদয়।


৫.
টিভি পর্দা বৃষ্টিতে ভিঁজে গেছে আজ
পাঠিকার কোমল আঁচল ছুয়ে
নেমে গেছে এক উতাল নদীর পাড়;
এই শীতে তুমুল বর্ষা, বর্ষাকে মনে পড়ে যায়।




শীত কাল কিংবা শীতের কাল- Belayat masum, বাংলা কবিতা




৬.
শীত রাতে জেগেছিল অসুখ
গত হাওয়ায় চড়ে লালাবাহী ঘোর
যেন এক অচিন সমুদ্র হয়ে
দেখতে এলো নাবিকের একজোড়া চোখ।


৭.
শোক বইয়ে লেখা হলো গান
কিছু পাতার মৃত্যুর খবর শোনা গেলো
এই শীত মৌসুমে-
আরো কিছু সাপের দারুণ ঘুম পেলো।


৮.
তবু আত্মহত্যা প্রবণ পাতারা বাঁধে ঘর
শোকাগ্রস্ত দেয়াল পায় অসুখে নিরাময়

আরো কিছুদিন তলিয়ে যাওয়া পাথর
পাতার ভরে খুঁজে বেড়ায় নির্ভার আশ্রয়।


৯.
প্রাচীন মদের দোকানে বসে ভাবা যায় তারে
বসন্ত আসবে বলে আবার ভাবা যায় তারে
অচেনা কোন নগরে শীতকাল নেমে এলে
শুনেছি, সেও জানে, কেবল ভাবা যায় তারে।


১০.
বিভ্রমে পুড়ে যাওয়া এক আগর বন
আঁতশবাজির আকাশে কিছু উজ্জ্বল তারা
অবকাশ নেমে আসে চোখে সমুদ্রে
আর হিমায়িত ঘোর বিহ্বল নোনাঘেরা।




শীত/২০১৬

ছবি © বেলায়েত মাছুম






নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

Translate

বেলায়েত মাছুম

নির্বাচিত লেখা

মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই | বেলায়েত মাছুম

১. মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই। আব্বার কবরের পাশে অচেনা এক লোকের মতো বসে থাকি। ধীরে- দূর পাহাড় থেকে ভেসে ঘোরা মেঘের সাথে চলতে থাকি। ঘাসের সাথে ...

সেরা পাঁচ

  • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
      হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে  নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক। ১....
  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বেলায়েত মাছুম
      ১. তুমার আত থাকি কুন্তা খাইলে তুমার চউখো চউখ পড়লে  আমি টাল অইজাই পাতা যেলা পরি থাকে ঘাসর উপরে মনো অয় আমিও পরি থাকি হারাদিন, বিয়ান থাকি হাই...
  • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    নৈশ সভা নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা; নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে- তার কথা কোন...
  • দিনলিপি | বেলায়েত মাছুম
    ১. এইভাবে একদিন লিখে রাখি জানালার কথা, দক্ষিণের হাওয়ায় ভাসা ফুলের রেণু,পাখির পালক হতে গুনগুন আওয়াজ; শব্দের ভেতর কাঁপা শোভন আলো, পা...
  • গত হওয়া শীত কিংবা বসন্তের কবিতা গুচ্ছ | বেলায়েত মাছুম
    আজ ১লা ফাল্গুন। দেশে শীত শেষ হলেও শীতল ভাবটা নিশ্চয় রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডেও শীত শেষ হয়ে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা আর ঝিরঝির তুষার...

গোলা । উগাড়

  • ►  2022 (6)
    • ►  ডিসেম্বর 2022 (1)
    • ►  নভেম্বর 2022 (1)
    • ►  অক্টোবর 2022 (1)
    • ►  জুলাই 2022 (1)
    • ►  মে 2022 (1)
    • ►  এপ্রিল 2022 (1)
  • ►  2021 (7)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2021 (1)
    • ►  জুলাই 2021 (2)
    • ►  জুন 2021 (1)
    • ►  মার্চ 2021 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2021 (2)
  • ►  2020 (9)
    • ►  অক্টোবর 2020 (1)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2020 (1)
    • ►  জুলাই 2020 (1)
    • ►  জুন 2020 (1)
    • ►  মে 2020 (1)
    • ►  মার্চ 2020 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2020 (2)
    • ►  জানুয়ারী 2020 (1)
  • ►  2019 (3)
    • ►  অক্টোবর 2019 (1)
    • ►  জুলাই 2019 (1)
    • ►  মে 2019 (1)
  • ►  2018 (5)
    • ►  ডিসেম্বর 2018 (1)
    • ►  জুন 2018 (1)
    • ►  মে 2018 (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2018 (1)
  • ▼  2017 (6)
    • ▼  আগস্ট 2017 (1)
      • পর হাওয়ার পরশ | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুলাই 2017 (1)
      • আমাদের সম্পর্কে | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুন 2017 (1)
      • হাইকু | বেলায়েত মাছুম
    • ►  মার্চ 2017 (1)
      • সুয়া উড়িল উড়িল - সুয়া উড়িলরে | বেলায়েত মাছুম
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2017 (1)
      • গত হওয়া শীত কিংবা বসন্তের কবিতা গুচ্ছ | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জানুয়ারী 2017 (1)
      • শীত কাল কিংবা শীতের কাল | বেলায়েত মাছুম
  • ►  2016 (8)
    • ►  ডিসেম্বর 2016 (3)
    • ►  জুলাই 2016 (1)
    • ►  জুন 2016 (1)
    • ►  মে 2016 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2016 (2)
  • ►  2015 (30)
    • ►  ডিসেম্বর 2015 (3)
    • ►  নভেম্বর 2015 (2)
    • ►  জুলাই 2015 (2)
    • ►  জুন 2015 (3)
    • ►  মে 2015 (7)
    • ►  এপ্রিল 2015 (6)
    • ►  মার্চ 2015 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2015 (3)
    • ►  জানুয়ারী 2015 (3)
  • ►  2014 (8)
    • ►  নভেম্বর 2014 (4)
    • ►  অক্টোবর 2014 (4)
  • ►  2010 (17)
    • ►  আগস্ট 2010 (5)
    • ►  জুন 2010 (1)
    • ►  এপ্রিল 2010 (11)

বিষয়

অ-কথা অ-গদ্য কবিতা গান ছবি প্রেমের কবিতা ভ্রমণ English Poetry
Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.


আপনার সাহায্য পেলে বিদ্যানন্দের কাজ আরো সহজ হবে। বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

অন্যজন

  • মীর রবি
  • মুনিরা মেহেক
  • মুরাদুল ইসলাম
  • সুহান রিজওয়ান

যোগাযোগ

নাম


ইমেল *


বার্তা *


Copyright By Belayat Masum | Designed By OddThemes | Distributed By Blogger Templates