বেলায়েত মাছুম
,
  • বাড়ি
  • কবিতা
  • গদ্য
  • প্রযোজনা
  • সংযুক্তি
    • অ-কথা
    • সংকলন
      • অঞ্জন দত্তের গান
      • শাহ্ আব্দুল করিমের গান
      • কল্পকান্ত সদাই'র গান
      • অ-সংযোগ
    • ভ্রমণ
    • আমি
  • ISSUU
  • বই
    • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে
    • পাখীদের পানশালায়









আমি ঘুমাতে পারিনা


একী হলো দশা— আমি ঘুমাতে পারি না
চোখ দু'টো বন্ধ হলেও ঘুমাতে পারি না
চারদিক ঘিরে নেমে আসে আঁধার
আমার ছায়া নিয়ে মেতে থাকে আয়না

কে আমি পাই না খুজে তারে
কে আমায় চেনে রয় দূরে
আমি পাই না খুজে তারে
আমি যাই না খুজতে তারে
আমার ভিতরে হয় লীন পুরনো সে বায়না।

অন্ধ চোখে ডাকতে থাকি ইশারায়
চোখ দু'টো আলোতে কেন ঝলসায়
আমি কার থেকে থাকি দূরে
আমি যার থেকে রই দূরে
সে কেন আমায় খুজে তার মাঝে পায় না।


২০/০৬/২০২১
সুইন্টন



শব্দের শব্দেরা যেন ডাকছে


শব্দের ভিতরে যেন বসে থাকি আমি
শব্দের উছল ধ্বনি কোথায় হারিয়ে যায়
এলোপাতারি— এলোমেলো যেন আমি
তোমার দুয়ারে দাড়াই, সঙ্গে কেউ নাই।

আমার মাথার ভিতর বাঁজে শব্দের ঢাক
— মাথার ভিতর এলোমেলো কত শব্দ,
শব্দের শব্দেরা যেন ডাকছে
যেন তারা মাথার ভিতর এলোমেলো নাচছে।

[ সা-গা, সা-গা, সা-গা-মা
সা-গা, সা-গা, সা-গা-মা-ধা-নি
সা-গা-মা-পা-ধা-নি-সা
সা-গা-মা ]

পালিয়ে যাওয়া হাঁসেরা আবার বর্ষায় হারালো
ঝড়ের শব্দ বাড়ির দিকেই আসছে
শব্দের ভিতর যেন বসে আছি আমি
আমার থেকে দূরে তোমার হাসির শব্দ।


২১/০৬/২১
সুইন্টন



একটা প্রজাপতি


আমার ঘরে একটা প্রজাপতি ঢুকে পড়েছে
অসংখ্য প্রজাপতির মধ্যে একটি
পৃথিবীতে হয়তো আরো জানালা খোলা আছে
হয়তো আরো অনেক চোখ
উচ্ছাস নিয়ে কোন এক প্রজাপতি দেখছে।

এক কাপ চা নিয়ে আয়নায় মুখোমুখি বসি
বিড়ি টানতে টানতে মনে পড়ে শৈশবের গান
কত প্রজাপতি আমায় ফেলে গেছে
এখনো আমি পৃথিবীর হাওয়ায় হাটছি।

পৃথিবীর একটা প্রজাপতি আমার ঘরে বসে আছে
বঁধির কান তবু কিছু শব্দ শুনতে পায়
অন্ধ চোখে প্রজাপতি পালকের রং পড়ে আছে।


২৭/০৬/২১
সুইন্টন


মনে হয় তেমন দূর নয়


কাপের চা ফুরিয়ে যায়— আমি বসে থাকি
আয়নায় দেখি মুখ—
তুমি হেসে ওঠো, গুন্জন শুনি
মনে হয় হাওয়া, ছায়া ছুয়ে গেল।

তীর থেকে তীরে পালের নৌকা
বাঁধা পড়ে থাকে
জলের উপর
পায়ে হাটা ধ্বনি
পরিচিত নগর জুড়ে ছড়ায়।

কাপের চা ফুরিয়ে যায়, চোখে তন্দ্রার ঢেউ
তোমার মুখের দিকেই আমার মুখ
পৃথিবী থেকে দেখা তারার মতন
হাতে পোষা দূরবীন—
মনে হয় দূর, মনে হয় তেমন দূর নয়
এমন কোলাহল নিয়ত ডাকছে যেন
ডুবে যেতে আয়নার ভিতর।


০৫/০৭/২১
সুইন্টন



হাত ফসকে যাচ্ছে হাত


হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে আলো
হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে হাত
আমার চোখে তন্দ্রা
নিকটে ভোর—
হাত ফসকে পড়ে যাচ্ছে আলো
কোথায় ঠিকানা তার
ঘর বাঁধে যে দূর।

কত সহজ হয়ে নামছে কুয়াশা
কান্নার রং মেখে
তোমার হাত ছুয়ে
আমি ধরতে পারছি না এমন দশা।

হাত ফসকে হাত পড়ে যাচ্ছে যেন
তন্দ্রার ঘোর ভেঙে
দেহভার নিয়ে।


১২/০৭/২১
সুইন্টন


আমার হাত নাই


আমার হাত নাই প্রিয়, আছে উৎসব
আছে জানালায় চেয়ে থাকা রোদ্দুর
সংসার ঘুরে তপস্যার রাত
ভেঙে পড়ছে দূরে তারার মত—

কোথায় এমন দিন নির্ঘাত শংকা হয়ে
দাড়াবে ভাঙা পা নিয়ে—

তোমার চোখ নাই প্রিয়, আছে আলো
আছে মৃতের কোন সৎকার
হাতের আঙ্গুল ছুয়ে রংধনু রং
উপছে পড়ছে উদাস মেঘের মত—


২৫/০৭/২১
সুইন্টন



তোমায় ডেকেছিলাম দুঃখি হতে


আমি তোমায় ডেকেছিলাম দুঃখি হতে
কিছুটা আমার মতো—
কিছুটা মেঘের মতো
উড়ে উড়ে দূর বনের দিকে চলে যেতে।

আমাদের দিন ফুরিয়ে গেছে মনে হয়
— মনে হয় আর পাব না উৎসবের রাত
গোপনে ফুলেরা ঝরে গেছে
পাথরও যেন বা ক্লান্ত আজ
তবুও ডেকেছিলাম দুঃখি হতে।

দুঃখিদের লোকের দূরে ঠেলে দেয়
আমার বুক ভর্তি লোম
বিড়ালের মতো কোমল দস্তানা নিয়ে
ডেকেছিলাম তোমায় দুঃখি হতে।


৩১/০৭/২০২১
সুইন্টন



একটা অদৃশ্য পাখি


একটা অদৃশ্য পাখি যেন আমি
উড়ে যাই দূরের বনের দিকে
সাগরের নোনাজল গায়ে মাখি
আর আয়নায় নিজের ছবি ভাঙি।

গত হয় কত ফুলের ঘ্রাণ
কত অভিমানের রাত হারিয়ে ফেলি
জোনাকের গুন্জন শুনতে শুনতে অন্ধকার
একটা অদৃশ্য পাখি হয়ে যায়।

বহুকাল ধরে যেন উড়তে থাকি
অমিমাংসায়—
দূর থেকে দূরে ফেরার পথ নেই ভেবে
একটা অদৃশ্য পাখি হয়ে উড়তে থাকি।


০১/০৮/২০২১
সুইন্টন



'চলতে চলতে'
পাকিজা চলচ্চিত্রের  'চলতে চলতে ' গানের ভাবনুবাদ বলা যায়।


আমি যা বলতে পারি না
পৃথিবী বলে যাচ্ছে
সেই গল্প
যা আমি বলতে চাই—

অপেক্ষার রাত দ্রুত ফুরিয়ে যায়
বাতিগুলো নিভে যাচ্ছে
আমার সাথে—

আমার সাথে বাতিগুলো নিভে যাচ্ছে
রাত ফুরিয়ে যায়
হাটতে থাকি তবু সে দাড়িয়ে থাকে
আমি চলতে থাকি, হাওয়াও উড়ে—

সেই ধ্বনি যেন এখানে থামে
পৃথবিীর জানালার কাছে
আমি তারে দেখতে পাই—


০৮/০৮/২১
সুইন্টন


পালাবো কোথায়


বক বক আওয়াজ ধীরলয়ে ছুটে আসছে
আমার দিকে
দরজার দিকে ছুটে যাই
কান ধরে কে বসে আছে
আমি তোমার কথা ভাবতে পারছি না আর।

আজ বুধবার
ছুটি নাই
সপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরবো
এমন প্রতিজ্ঞা করবো ভাবি।

লোকেরা কথা বলছে
আমি দূর কোথাও ঘুরে আসি
তিন মাস কতবার গত হয়
উচ্ছাস নিয়ে হাসতে থাকি।

পরিচিত কেউ চলে যাচ্ছে
ঘর ছেড়ে
আমার ঘর নাই
পালাবো কোথায়
এমন সুদিন যদি দরজায় থামে।


ওল্ডহাম
৩১/০৮/২১











ক

৬.

গত হয় জাবরের দিন। ক্ষীণ ক্ষীণ তবু কিছু আলো।
তবু সন্ধ্যার থেকে দূর— নদীর কিনার। এক পরম চাষি।
ভোরের মতোন। তার রাঙা সেতার— আমারে ডাকে।
আমার ফুরায় দিন। দেয়ালে চোখ, ব্যস্ত নাবিক।
যায় ভোরের পাশে। ঘাসের উপর- সেই জোড়া পা।
ছায়ার মতোন এক পর ভাবা তুমি। অকাল নদী।
আমারে ডাকে- কোথায় সে ঘর? সহজ ভাবে।


৮.
আর কিছু তৎপর ঢেউ— ঘুম ঘুম আলো;
আর কিছু সহজ শব্দ— পুরনো ঘর— আলনা-বাড়ি,
কিছু সবুজ ঘাস, দূরে রংধনু আঁকা।

ভাবা যায় শবঘর সেই
অনুরোধে গান, নরোম কোমল ফুল;
ভাবা যায় উৎসব শেষ
জলের ভেতর মীন আর শুশুকের দল।

তবু এক নীড়— চারদিক ডাকে
তবু দিন যায়; বরফ গলে— ফাগুন আসে
তুমুল রোদ— পায়ের কাছে অবনত রয়।


১০.
ঘর তবু ফিরে ফিরে আসে। কিনারে ঢেউ
এই সেই নদী তীর— ডাকে নামটি ধরে—
দূর কোথায়, দুর। বাজায় আবার সেই সন্ধ্যায়
অবিকল ছায়া নিয়ে— নামতে থাকে পরিচিত পাড়ায়।

আমার তবু হয়না ঘর, পড়শীর কাছে এই অজুহাত—

বারেবার তবু সে ঘর, দূরে চলে যায়
পরিচিত সব মুখ নিয়ে,
চলে যায় সে—
ফুলের বাগান থেকে— যেন ডাকে সুরালয়—
যেন পাথুরে সোহাগ মাখা—
সেই ঘর ফের, মালীর তরফ নিয়ে
আমার দুয়ারে বসে; বাজায় সেতার।

পড়শীর আছে পুরনো দুয়ার— আছে তৎপর হাওয়া

সুরের ঘুঙুর ভাঙছে কোথাও ভাবি
আগুনের ঠোঁট যেন তথমতো— পার হয় পুরনো মোমকল;
পাতানো দলিল নিয়ে সেই— দাড়ালো রুপকথার কেউ
ঘরের পরে আছে পড়শী; আছে নদী আর— আর ঢেউ।

পর ভাবা তারা; দূরের মতো অ-দৃশ্য যেন;
পৃথিবীর উজ্জ্বল এক মাছের কানে— পড়শী কথা বলে
কার কথা, কে শুনতে যায়— নিয়ত বধির হয়ে।


১২.
আর দূর থাকা তারা, আর সন্ধ্যার গান
এমন হয়— মুখর হাওয়ায় সেই দাড়ানো কেউ
প্লাবিত সন্ধ্যার রাগে। 

যেমন ঘোর, সব অতীত দিন
দরজায় কড়া— যেন কেউ দূরগামী হাওয়া
যেন ঘাসের উপর আলো আর আলো
পুড়তে রয়
সকলের থেকে উজ্জ্বল—
বিকালের প্রান্ত ছুয়ে, আমার গোপন নিয়ে
মোমবতী সেই গাছের তলে।

আর, আর ফুল
পাখীর ডানায়— বাতাসের গন্ধ নিয়ে
সুরারূপ ধরে।


১৫.
হাওয়া কার চোখ নিয়ে উড়ে? কত দূর যায়।
হতাহত ফুল ভোরের কোলে

ফিরে আসে পুরনো সংবাদ— পুরনো দস্তাবেজ ঘিরে

আহত ফুলের কলি যেনোতেনো রোদে
বাঁধে সংসার— ধুলোর তদবির নিয়ে মদাসক্ত হাওয়ায় 
সেই পুরনো দাবী— সেই জোড়া চোখ গুম হওয়া থেকে
দারুণ ভানে— এই হতাহতের দিন

যে হাওয়া পলাতক হয়, বাঁধেনা ঘর পৃথিবীর 'পরে

তার থেকে দূরে আছে ফুল, গাছের কংকাল
সৎকার নিয়ে মেতে আছে লোক;
বনের ভেতর থেকে শব্দের ঢেউ কারে মাতায়
কেউ কেউ ঘোরে মাতম যদি—

এই ফুল ঝরে, হাওয়ার নিচে— বধির আমি
কলতান থামে, জোড়া চোখ, হাওয়ার কোলে
এতদিন ফুরায় তবু ফুলের নীড়ে
নেই কোন ঘর—  নেই উৎসব তেমন কোন
রাতের পাড়ায়।

হাওয়া, পৃথিবী ঘুরে ফুলেদের পায় তবু হয় না ঘর
যেন মরুধুলো সেই, যেন আমাদের উৎসব শেষ।


খ

২.
আমি— আমারে বলতে থাকি
দুপুরের বয়ান,
হাওয়ার শব্দের মতো দূর থেকে এসে
নিজেরে নিয়ে পলাতক হই।

আমি— আমার চোখের পাতার আড়ালে
ঘুম-ঘোর পতাকা উড়াই।


৬.
কিছু ফুলের কাকলী বাজে দূরে
কিছু শব্দের সৎকার নিয়ে—
আর গৃহবন্ধ সুরভীর সন্ধানে
নিকটে মগ্ন থাকে সেই দূরগামী পাখী

আলোকের কাছে আমার স্মৃতি জমা রাখি
দেয়ালের পরত জুড়ে—

সেই ফুল চেয়ে থাকে চাতকের চোখে
ঝড়ের আগাম সংবাদবাহী হাওয়ায়—


৮.
যেন কপালে ফুটে আছে ফুল— যেন নদীর পরে
আকাশের গতর জুড়ে যেন ফুটে আছে আরো একতিল  ঝড়।
আরো সুভাস উড়ে, নিমের বহর মেখে চৌদিক উজাড় করে
নেমে আসে চোখের পাতার কাছে—
পায়ের নখের কাছে—
অতল সেই সমুদ্রের মতোন তুমুল জলরাশি-ঢেউ।


১০.
এমন মোম
ঝরে যায় কেবল
আগুনের কোলে
ঝড়ের  আগে—
পুড়ানো খাঁচায়
যেন অস্থির পাখী
যেন তুমুল সোহাগে
সেই আগুনের কাছে
ওৎপেতে রয়—
পুরনো রাতে
আগেকার সন্ধ্যা

মোম সে—
ক্ষয়ে ক্ষয়ে উড়ে

আর মোমের শরীর
এক আগুনের ফুল—
তারাদের কাছে
ফুটে সে রয়
ঝড়ের রাতে


১২.
আমি যেন সেই হাওয়া
যেন কোন এক নারীর
কোমল হাতের নিচে
দাড়াই—

যেন আমি ঝরে যেতে পারি
তুমুল ঝড়ের সময়
কোন কোন জানালায়
নিজের মতো করে—

সেই দিন সেই রাত নাই
যখন পাখীদের পানশালায়
আমি এক নবিশ—

জোড়া চোখে দারুন ঘুম
তবু কিছু আলো
কিছু অন্ধকার
আমায় নিয়ে মেতে আছে যেন—

সেই হাওয়া
ঝড়ের সময়
মুখোমুখি বসি
শোনায় কথা
মনে হয় দূর
মনে হয় নারী
আমি এক লোক
বাসি দিন যায়
আঙ্গুল গুণে

পাখীদের পানশালায় যেন
আমি সেই লোক
বসে বসে ভাবি, যদি একদিন
হারাই ডানা— 



 কবিতার বই পাখীদের পানাশালায় পাওয়া যাচ্ছে ই-বই আকারে গুগল বুক্‌স, অ্যাপল বুক্‌স সহ আরও কিছু ই-বুক স্টোরে। 


www.belayatmasum.com


আরও দুই পংক্তি- বেলায়েত মাছুম



১.
আমি কারে স্মরণ করবো?
সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আমাকে।

২.
আমার পোষা কোন কুকুর নাই,
কল্পনার রশিতে নিজেকে বেঁধে হাটতে বের হই।

৩.
এক বেঞ্চি থেকে আরেক বেঞ্চিতে বসি,
একটা মৌমাছি এক ফুল থেকে আরেক ফুলে।

৪.
হাওয়া উড়ে যাচ্ছে, পাতাও
আমার পা আছে দাড়াতে পারি না।

৫.
দূরত্ব মাপা যায়, কিন্তু দূর থাকা?
দাত ব্যথার মতোন অসহ্য বাড়ছে।

৬.
ছোটরা প্রতি বিকালে স্কুল ছুটি পায়
বুড়োদের স্কুল আছে, ছুটি নাই।

৭.
ঢেউ এর জন্য কারে অভিবাদন দিবো
নদী না কী জলকে?

৮.
জানালা খোলা আছে, কিন্তু চোখ?
মৃতের মতো আঁধার পোষে রাখে।

৯.
কাল বড় হয়ে যাব
বুড়ো হব না।

১০.
রোদে রাখছি পা, ঘাসেও
ডানা নাই পাখী উড়তে পারছে না।



আরো পড়তে ক্লিক করুনঃ শুধু দুই লাইন




 





তোতা ও রাষ্ট্রপতি- বেলায়েত মাছুম



একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো

একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো, 

মহিষ পালের সাথে ঘুরে বেড়াতাম আর-
প্রতি সন্ধ্যায় আম্মার হাঁসগুলো হারিয়ে যাওয়ার আগে
পৌছে যেতাম শালুক বনে-
আমার ধারণা ছিল- আসা পথে ফিরে যাবো বাড়ি। 

আমার বন্ধুর সাথে দেখা হয়, 
রাত নামার সময়। 
চাঁদটাকে দেখিয়ে আমায় জিগ্যেস করে- 
তুই পেঁচা দেখেছিস- যে নিশায় থাকে তৎপর।

একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো
দুপুরের ছায়ায় বসতাম আরো মানুষের মুখোমুখি
প্রিয় কুকুরের শরীরে গা এলিয়ে ভাতঘুম শেষে
আমাকে মানুষ ভাবার অবসর পেতাম।

একদিন আমি মানুষ ছিলাম হয়তো


সন্ধ্যাটা

আজ সন্ধ্যাটা ডুবে যাক পাহাড়ের ওপারে,
অচেনা ফুলের গন্ধে মাতাল— ঝিম ধরা হাওয়া;
শেষ বিকেলের তাপ মেখে
সন্ধ্যার ঠোঁটের পাড়ে ডুবে যাক—
লালা ঝরা সূর্যের জ্বিবে
অন্ধ পাতার চোখে— এক পলক মৌসুম;
বেসুরো গানে মেতে আছে— বিরান শোক
জোনাকীর আলো, এই সন্ধ্যার পর—
এমন ভাল লাগা কালয় ছুয়ে ছুয়ে পড়ে
কাল চোখ হতে এক অন্ধ গহ্বর।


তোতা ও রাষ্ট্রপতি

আমার তোতা পাখিকে মনে পড়ে
আর রাষ্ট্রপতিকে। শোকবইয়ের পাতা সমুহকে
ভাবতে থাকি। বাতেসে গন্ধ চারদিকের।

আহত জাহাজির স্মৃতি কেমন ছিল?
তন্দ্রাসক্ত গোলাপ কেন বিলাপে থাকে?

লোকে বলছে জলঘাট। আয়নায় ঝকমক।
তোতাপাখি উড়ছে- রাষ্ট্রিয় পিন্জিরায়।

আমার শুধু পাখিটারে মনে পড়ছে আর রাষ্ট্রপতিকে।
একই মানচিত্রে। 


আরো একটি স্বপ্নের বর্ণনা কিংবা অপবর্ণনা

আমি কোথাও যাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়ি
স্বপ্নে একটা হাঁস দেখি
সাদা হাঁস ভায়োলিন বাঁজাতে বাঁজাতে
কাছের বনের দিকে হাটতে থাকে

আমার পোষা কোন শিয়াল নেই
তবুও একটা শিয়াল মাছরাঙা পাখির মতন
মাথার কাছে সারারাত ধরে গান গায়

স্বপ্নে একটা বাদামী প্রজাপতি উড়ে
আয়নার কাছে আমার মতো এক অপরিচিত লোক বসে থাকে
আমি তারে দেখতে থাকি

আমি কোথাও যাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়ি



বিড়ালটা

বিড়ালটার সাথে দেখা হলেই ডাকে
যদিও আমি আগুন্তুক কিংবা না;
সন্ধ্যায় ফেরার পথে দেখা হয়ে যায়
অন্ধকারে, বিড়ালটা কোথা হতে আসে?
আমার ছায়ার উপর পা রেখে হাটে।

আমি তার নাম জানিনা, সেও আমার
তবু আমাদের দেখা হয়ে যায়
ফেরার পথে, সেও কি ফিরে?
কোথায় তার ঘর?

আমায়- কিছুটা অন্ধ ভাবছে লোকে
দিনের আলোয় দেখা হচ্ছেনা আমি আর বিড়ালে
আমার চোখের ভিতর নাকি ফুল
সন্ধ্যা নামলেই দেখি বিড়ালের চোখ
হেটে হেটে বিড়াল আমার দিকেই চায়
আমি ডাকি তারে, সবাই যেমন ডাকে
বিড়ালটা হাটে- আমিও হেটে যাই;
আমায়- আরো কিছুটা অন্ধ ভাবছে লোকে
বলতে পারছেনা শুধু- "তোমার বিড়ালটা কই?



   
বেলায়েত মাছুম







নৈশ সভা


নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না
পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা;
নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে
ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে-
তার কথা কোন দিন আমরা বলবনা।

সভার টেবিলে আঁকা ড্রাগন ট্যাটু
সূর্যের লালা নিয়ে নিবিষ্ট প্রার্থনায়;
সভা ঘরে জানালা ছিল না এবং কোন শব্দ।

রাত নেমে এলে বসে থাকি
শৈশব নিয়ে;
বারুদের গন্ধে
পিপাসা ও ক্ষুধায় মজে শুয়ে থাকি
সভা শেষে- ত্রাণের আশায়।



একদিন

একদিন তারে ভালবেসে ফেলি- কতদিন গেল
কতদিন তারে নাম ধরে ডাকি, গোপন যত ফুলের নামে;
পাখির ঠোঁটের কাছে যত কথা হয়, যত আবৃত শামুক শরীর
হেটে যায় বুকের আলপথ দিয়ে- 
সে খবর কেউ রাখেনি, আমিও না জানি।
আমার গোধূলীতে বসে সে গেয়ে যায়
অনন্ত পথের ধুলোর মিছেলে কেবল হেটে যায়
এইখানে একদিন যে সুরে বেহুলা কাঁদে- লখিন্দর কাঁদে
গৌড় রাজার প্রাক্তন স্ত্রীর চুলের সিঁথি রেখা ধরে-
মনে হয়ে তারে নাম ধরি ডাকি- একদিন নদীর দিকে
হাওয়ার সুরে ভুলে যাই নগরী আলোর কোলাহল নিনাদ।



মাছ সম্পর্কে

ধরা যাক মাছগুলো ঘুমোয়নি কিংবা জলের
ভিতরে অথৈ শীত, নখগুলো ভিঁজে কাতর
গরম কাঁথার নিচে উষ্ণ গভীর তল।

ধরো গাই মাছেদের গান, জলের অসীমে বাঁধি এক ঘর
সারা শরীর নোনা স্বাদে ভরা আর চেয়ে আছে জলজ ভবিষ্যৎ।

ঢেউগুলো ইথার শব্দের মতো গায় ভ্রমণের গীত
আর মাছেরা ধামাইল নাচে মেতে রয়;
অলীক অসুখ হলে ছোঁয়াচে রোগের ভাবনায়
ডুবে যেতে হয়- ভেসে যেতে হয়।

ধরি মাছেরা খুঁজে আড়াল, আরো মাছেদের থেকে দূরে
আরো বেশি গভীর আরো বেশি জলের সিনার ভিতরে।




চৈত্র বিষয়ে

আমরা তেমন কিছু আর বলছিনা চৈত্র বিষয়ে
গোপনে টুকানো শেষে বিকেল নেমে এলে আমাদের হয়ে
ফুলের পাপড়ি ভুলতে চায় পাখির সোহাগ;
আগত সন্ধ্যার কথা ভাবতে ভাবতে বর্ষা উড়ে এলো-
পিপড়ার চলন ধ্বনি শুনছেনা পুরনো দেয়াল।

একটা খাদক টিকটিকি সারা সন্ধ্যা আগলে রাখে
আমাদের চোখের পাতায় জড়ো হয় ঘুম
হাওয়ার ভরে ঘুরে বেড়ায় শোকার্ত দিন, শোকার্ত রাত।

কাচের আয়নায় বেঁজে উঠে ঠোঁট- ঝুনঝুন, ঝুনঝুন।

এবার আমরা সংসারী হবো, কাঠের আলনায় দোলাবো শরীর
ভীষন ইচ্ছায় লাল গোল গোল সারা রাত পর ফুলের কান্না পায়;
আবার চৈত্র এলে বৈশাখীও ফিরে আসে আমাদের ঘর।
এখন পুতুল বিয়ের দিন, চারিপাশে অকাল বর্ষা
পায়ের পাতায় আলতার ফুল; পানের বরজ আরো দীর্ঘায়ু হয়
জাহাজও ভ্রমণে আসে আমাদের শহর।




রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে

আহত পাখিরা সে রাতেই মারা গেলো
শোকবইয়ে দু'বাক্য লিখবেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি
এমন প্রতিশ্রুতির খবর জানালো আমাদের টিভিগুলো;

আমাদের জানালা ভেঙ্গে পড়লো শব্দের ভারে
আকাশে উড়তে দিলাম ঘরে পোষা পায়রার দল
সূর্যের উত্তাপে ভীষণ চিকচিকে হলো
বঙ্গ ভবনের সাদা দেয়াল।

রাষ্ট্রপতির মৃত্যু সংবাদে শোকার্ত বিদেশী দূতাবাসগুলো,
রঙিন মোড়কে ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে এলো সাঁজোয়া যান।

প্রতুশ্রুতি মোতাবেক আমরাও দাড়ালাম ম্লান মুখে
বঙ্গ ভবন হতে গাড়ির বহর ছুটে এলো
বিষন্ন হাওয়ায় পতপত উড়লো অর্ধ-নমিত পতাকা;
শুধু শোকবইয়ে রাষ্ট্রপতির স্থবির ছবির নিচে-
স্বাক্ষর দিতে উঠে দাড়ালেন না স্বয়ং রাষ্ট্রপতি।



ঘাসের অসুখ

একদিন ঘাসের শরীরে হবে জ্বর, শুন্যে নেমে যাবে শিশিরের তাপ
উত্তর মেরু ভ্রমণের ঘোরে- দক্ষিণ মেরু ভ্রমণের ঘোরে
এক পাল ঘাস ফড়িঙের দল- রোদ চশমা লাগিয়ে ঘুরে
বেড়াবে, ঘাসের ওপারে ঝাউবনের ভেতর।

অহিংসার কিছু আগুন হবে
অগুণতি রোদেল ঢেউ ছুয়ে যাবে ঘাসের ঠোঁট
ক্ষয়ে যাওয়া লবণ দানায় আটকে রবে ছুপ ছুপ জল।

এমন একদিন পলাতক হাওয়া ঘুরে বেড়াবে আমাদের শহর
ধুলোর টগবগ শিখা- তরুণ ঘাসের ঠোঁটে পোহাবে উপোস রাত।

দুধাল ঘাস অসংকোচে পুড়ে হবে ছাই, ফুলের বাগান হতে
ফুলের রেণু-পাতা ঝরার শব্দে উন্মুখ আরো কিছু ঘাস
বেহাল কর্তাল ধ্বনি, বায়ুবাহি অন্য ঘাসের ঘ্রাণ সহ
মেরু ভ্রমণ শেষে ফিরে এলে-
ঘাসের অসুখ আলপথ ধরে বহুদূর- কতদূর ভেসে যায়?



বাকি রাত

বাকি রাতটুকু কেটে যাক নার্সারি বাগানে, চোখের পাতার কাছে
এক লাশকাটা ঘরে, অধল হয়ে গেলে পুরনো রুপার চামচ
পুকুর পাড়ের ঘাসে শুয়ে পড়া যাক-
এই রাতে ফুটে উঠুক দুধেল ফুল, সোনার দেরাজ খুলে
জুতোজোড়া পায়ে- পৌছার পথ ধরে কিছু আলো নিভুক;
ভাড়াটে ঘুমের বহর পুরিয়ে এলে, নিজেও পৌছে যাই ভ্রুণের শহর।

দখিন দুয়ার খুলে এক আলতার বরজ, আর সহজিয়া সুরভী মাখা
খুনের করাত। ভুলে ভরা দেয়ালিকায় রঙ কিছু লেপে-
হারানো গানের সুরে আমরাও মাতি।

বাকি রাত শুয়ে থাকি চাষার ঘরে, ফসল কাটার দিন
গনিয়ে এলে- কিছু বীজ বপন করি নদীর ধারে
আর কিছু পাকা ফুলের কুসুম শুকিয়ে রোদে-
নিজের দোকানেই সদাই সারি;
কুহুকাল ডুবে থাকি সিঁথি রেখা ধরে, নরম জাজিম ছুয়ে
ভেসে উঠা ভোরে, কেটে যাক আরো কিছু আবাদ সময়।



আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে

আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার পর্ব বলতে শীতকালটা ছিল
পৌষের আগে আগে যে রকম সন্ধ্যা নামে
ভেঁজা কুয়াশা ঠোঁটে মেখে ঘর ফেরত পাতি হাসের দল;
শুকনো ধুলো উড়তে উড়তে আমাদের জানালায় উল্টে যেত
ঘরের পর্দা আরো বেশি ভারি হয়ে উঠলে-
আকাশের রঙটা একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে গেলে
আমাদের সাক্ষাত বলতে ঐ সময়টাই ছিল।

দরজার বাইরে ঘুমিয়ে পড়তো মেটো আলো
খরচার ভয় ছিল
তবু সঙ্গম মুখর হাওয়া আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে উঠলে
দেয়ালে লেপ্টে থাকা হাস্নাহেনার গন্ধ শুকে শুকে ভ্রমণে যাওয়া যেত
আমাদের সাক্ষাত পর্ব বলতে ঐ সময়টুকুই ছিল।

গতবার যখন আলোটা নিভে গেল ভোরের আগে
দেয়াল ঘামতে ঘামতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো,
সূর্যটা এত আলসে ছিল যে জোনাকিরা গাইল নাদাইর গীত
আমরাও জড়তা ভেঙে শুনতে থাকলাম শিশির ঝরার শব্দ;
এইভাবে আমাদের সাক্ষাত শেষ হয়ে এল বলে
দারুণ শীতকালটা জমে গেলো।


তাই আর বলতে হয়না

তাই আর বলতে হয়না নদীর কথা
গোপন সুড়ঙ্গ পথে কে বা কারা আসে যায়
শৈবাল শরীরে লেগে থাকা অচেনা গন্ধে-
মহুয়ার বন কেন দুলতে থাকে- কিসের আশায়

বনেলা পাখির সুরে কে কথা কয়
কার চোখের পাড়ে উতলা নদী
কোন জানালায় ভেঙ্গে পড়ে ঝড়ের হাওয়া
বলতে হয়না কেমন রং ছড়ায় রংধনু রেখা
কেন দিন নেমে আসে উড়াল দুপুর নিয়ে-

অচেনা সারস ঠোঁটে ঝুলে থাকে মাছের শরীর
অনাগত চুমোর আঁচে জেগে উঠে উদ্বিগ্ন ফুল
পাহাড়ি আলে শুয়ে কে কে অঘোর নিদ্রা যায়
আর দ্বীধায় পুড়ে কেন নিঝুম বিভাসী চুল-



হত্যাংক

তোমাকে হত্যা করার আগেই আমার মৃত্যু হয়
মরার আগে বুঝেছিলে কি মৃত আমি
মৃতদের কথা বলতে নেই, তাই মরে যাই।

আমাকে হত্যা করার আগেই তোমার মৃত্যু হয়
মরার আগে জেনেছিলাম কি মৃত তুমি
মৃতদের চোখে দেখতে নেই, তাই এমন হয়।

আমাদের মরতে হয় বলে বেঁচে আছি
আর মৃতদের কোন প্রান নাই - মৃত্যু নাই।











 



১.
তুমার আত থাকি কুন্তা খাইলে
তুমার চউখো চউখ পড়লে
 আমি টাল অইজাই
পাতা যেলা পরি থাকে ঘাসর উপরে
মনো অয় আমিও পরি থাকি
হারাদিন, বিয়ান থাকি হাইন্জা।
আমার বেইল নাই অইজায়
কোন কামো আর মন বয় না
মনো অয় হাঝর লাখান উইড়া যাই
আর মেঘ অইয়া তুমার উপরে ঝইরা পরি।


২৭/০৯/২০
সুইন্টন

২.
বাড়ির চাইরোবায় মুর্তার ফুল ফুটে
আর অউ ফুল থুকাই থুকাই আমরা বড় অইগেলাম,
হপ্তা ঘুরি ঘুরি শুক্কুরবার আয়
টুপাটুপির ভাত রান্ধা অওয়ার মতো-
মাঝ উঠানোর বেইল যেলা যায় যায় করে
ঠিক অউলা আমরা হকল চেছিত বই থাকি।

বাড়ির চাইরোবায় অউ মুর্তার ফুল পরে
আমরা থুকাই আনি মালা গাততাম চাই-
পুতুল খেলার দিনর লাকান
একোদিন করি আমরার দিন কই চলি যায়
অতা ভাবতে ভাবতে বিয়ার দিন সমাগত অয়।

আমরা মুর্তার ফুল থুকাইতে থাকি
ই ফুলে মালা গাথা যায় না,
এমন নরম শরীল কে বানাই দিলো
কই থাকি ই ফুল আমরা বাড়ির চাইরোবায় ফুটে
আমি ই উত্তর পাইতাম করি গোরস্তানও যাই
যেখানো এবলা মানুষ নায় তারা ঘুমাই থাকইন।


২৮/০৯/২০
সুইন্টন

৩.
আম্মায় হুনাইবা গিত
অউ আশা লইয়া এবো হাইন্জা অয়
আস মুরুগ ডাকি ডাকি ঘরো উঠিজায়
গোয়ালাত বান্ধা গরুর লাখান
আমিও তান বায় চাইথাকি।

ইলা দিন কত অইছে গত
জারমুনির তলে নাক বাউঅয়াই পুতি রইছি;
আওরর পানিত , খালর পানিত
মাছ ধরার বাওয়ে শরীলো ফেক মাখিলাইছি।

আম্মায় হুনায়বা গিত
এরলাগি আমরা ভাই-বইন বইথাকি লাগে
রইদ মেঘ সব বাদে হাইন্জা নামে
আমারার উঠানো
অউ আশা লইয়া ঘুমানিত যাই।

২৮/০৯/২০
ওল্ডহাম

৪.
এবলা আমি তোমার থাকিন দূর ঘর বান্দি
বনর পাখিরে হুনাই গিত
ইজলর তলে বইয়া তন্দ্রাত যাই
তোমার বদন আমার চউখো ভায়।

ফুটা ফুটা মেঘ ঝরে
এর লাগি আমি ঘরো থাকি, আর
তোমার ছবি আয়নাত দেখি

ইজলের তলে আজার আজার ফুল
মালা গাততাম করি
তোমার গলা মুখায় চাই
তোমার হাত থাকি আমি দূর চলি যাই
আমার ঘর থাকি তোমারে আরাই

১৯/১১/২০
ওল্ডহাম

৫.

আমি যেখানো উবাই
মাথার উপর আসমান থাকে
চান থাকে. হাঝ থাকে
তোমার আত থাকেনা।

আটি আটি কত দূর যাই
সাগরর পাড়ো
পারর উপরে
বনর ভিত্রে
তোমারে পাইনা

আমি যেখানো যাই
হাওয়া ও আয়
ফুলর গনেরা ঘুরে
তোমার চুলর গন পাইনা


১৯/১১/২০২০
ওল্ডহাম

৬.

একটা গাছ থাকি একটা পাতা পরে
দূর থাকি দেখি
কিলা দুলতে দুলতে
বাতাসর লগে নাচতে নাচতে
রংগিলা ধুলার উপর পরে।

কই থাকি অউ বাতাস আয়
গাছর পাতারে ছোয়
ধুলারে উড়াইয়া নেয়

একটা গাছ থাকি আরকটা গাছ দেখি
একটা পাতা আরকটা পাতার উপরে পরে


১৯/১১/২০২০
ওল্ডহাম


৭.
পড়শির ঘর থাকি পড়শির ঘরো যাই
আমার ঘর পাইনা
দূর বিদেশ ঘুরতে ঘুরতে
পড়শির দরজাত উবাই

আমার পাও নাই
পাখনাও নাই
চউখ বন্ধ করি
তবু ঘুরাত যাই

আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন
তারার ঘরো দরজা নাই
জানলা নাই
আসমান আছে

আমি তারার দরজাত উবাই
তারারে আমি পড়শি ভাবি
তারা আমারে ভাবইন
এর লাগি দূরই থাকি।


১৯/১১/২০২০
ওল্ডহাম






 



হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক।



১.
মৃত ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায়
সকাল নাই, বিকাল নাই— দুপুর গড়ায়
মৃত ধান পাতারা উড়ে উড়ে দূর চলে যায়


বাসস্টপে আমি— বাস গুলো দাড়ায়
আমার তাড়া নাই
তবু ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যার বাসে উঠে বসি
জানলায় মৃত ধান পাতা উড়ে
আমার সময় যায়—


যেন সেই মদ খাওয়া লোক
পায়না তার ঘর
ভাবে—
পৃথিবীর সকল দরজা আছে খোলা—
দুলতে দুলতে কার দুয়ারে দাড়ায়
আর মৃত ধান পাতারা উড়তে উড়তে কোথাও চলে যায়।




২.
আর মৃত ধান পাতারা উড়তে উড়তে কোথাও চলে যায়
আমি বসে থাকি বাসস্টপে— তাড়া নাই
সন্ধ্যায় ফেরা বাসে করে দূরে যেতে থাকি
মায়ের থেকে বাবার থেকে—
যেখানে ধান ফুল ফুটেনা কৃষক নাই
বোনের থেকে ভাইয়ের থেকে—
আমি দূরে যেতে থাকি আর ধান পাতারা
আমার মুখের কাছে উড়তে থাকে।


৩.
ধান পাতারা আমার মুখের কাছে উড়তে থাকে
জানালায় গ্রীল আছে তবু সন্ধ্যা-পাখীর ডাক শুনি
তন্দ্রায় আপ্লুত চোখ নিয়ে পৃথিবীর কোথাও দাড়াই
ভাবি আমার তাড়া নাই তবু জোর পায়ে হাটি।

আমার মুখের কাছে ধান পাতারা উড়তে থাকে
শৈশবের বাড়ি থেকে দূরে এক প্রাচিন উৎসবে
আমি কোথাও যাব ভাবি এমন আরো সংসার হলে

ধান পাতারা যখন হাওয়ার পাশে হাওয়া হয়ে উড়ে
মনে হয় আমিও উড়ে যাই বাড়ির প্রান্তর ছিড়ে।


৪.
আমি উড়ে যাই না— ধান পাতা উড়ে
আকাশে আকাশে— বাতাসে

বাস স্টপে দাড়িয়ে বাসের মতন
কে যেনে ডেকে যায়— ডেকে যায়
কোথাও উড়িনা আমি— ঘুরিনা কোথাও
ধান পাতা বসে থাকে মুখের উপর।

উড়ে উড়ে ধান পাতা উড়ে যায়
আমার তাড়া নাই— দূরে যাই।


৫.
আমার তাড়া নাই তবু ধান পাতা উড়ে
দূরে বনের দিকে— আরো দূরে
আমার সংসার নাই, তবু মৃত ধান পাতার দল
করুন মুখের তলে— উৎসব শেষে

তুমুল আকাশ ধ্বনি— তুমুল আমার ভেতর
উড়ার শঙ্কা যেন ততদূর উড়ে
আমার তাড়া নাই, তবু মৃত ধান পাতা আজ
থাকে পরম অশোক জুড়ে— তর্জনী ছুয়ে



৬.
আমার তর্জনী নিয়ে যাচ্ছে হাওয়া
আর এক মৃত ধানপাতা—
উড়ে উড়ে সারাদিন আমার পায়ের কাছে
পৃথিবী ভ্রমণের স্মৃতি নিয়ে আসে।
পড়শীর উৎসব শেষ
তবু কিছু জনতার উষ্ণ অভিনন্দন
ধান পাতার দিকে —ধীর মিছিলের মতো—
উড়তে উড়তে শোক হয়ে যায়।

আমার তর্জনী উড়ে যাচ্ছে হাওয়ায়
ভিনদেশী খড়ের আলিঙ্গনে—
যেন মেতে থাকে সে আমারই ঘরে
পোষা মোমের অলংকার —পুড়ে পুড়ে যেমন কিছু ছাই—
উড়তে পারেনা ডানা নাই বলে।

মৃত ধান পাতার শরীরে মেতে থাকে হাওয়া
আমার চোখে শুধু ঈর্ষাই জমা হয়—
কোণে কোণে যেমন তুফান —আর নদী—
আর সকল ফুলের কলি ঝরে—
সেই মতো যেন আমার বিশ্বস্ত তর্জনী
ভেঙ্গে পড়ছে তোমার পুরনো দুয়ারে কেবল।



৭.
তোমার পুরনো দুয়ারে কে থাকে বসে
ধান পাতার মতন
শুনায় মরমীয়া গান—
সেই পুরনো সুরে— উড়ে উড়ে।
পাখীরা যেন হয়ে গেছে পলাতক
ঘর নাই আর, শুধু হাওয়ায়—
দুপুরের আগে সেই ধান পাতার মতন
আগলে রাখে তোমার কপাল।



৮.
তোমার কপালে ঘাম
সন্ধ্যা নামছেই না পৃথিবীর গায়ে,
তবুও আমাদের বাড়ি ঘিরে উৎসব—
তবুও তোমার কপালের ঘাম
মুছে দিতে নেই মানুষের এমন কোন হাত।

তুমি যেদিন পলাতক হবে
রবিবার শেষ—
আঙিনায় থাকবেনা জবা ফুলের ঢালি,
বাড়ির সকল দরজায়
তোমার মুখের মতো
পড়ে থাকবে আগনের ধান পাতা সকল।



৯.
আগনের ধান পাতা পোড়ানো শেষ
বাতাসে উড়ছে ছাই
আমার চোখের ভেতর কাজলের বন
তুমি আজ বাড়ি নাই।

কাল থেকে লোক আর পড়শীর ঘর
চোখের উপরেই উড়ে
দরজায় পড়ে আছে দু'তলার সিড়ি
পা দিলেই যায় পুড়ে।

আগুনের কাছে মেলে দেও কোল
জলের অতলে পা
দেখা হলোনা আর না দেখা চোখে
কেবলই বাঁধো খোঁপা।




নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

Translate

বেলায়েত মাছুম

নির্বাচিত লেখা

মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই | বেলায়েত মাছুম

১. মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই। আব্বার কবরের পাশে অচেনা এক লোকের মতো বসে থাকি। ধীরে- দূর পাহাড় থেকে ভেসে ঘোরা মেঘের সাথে চলতে থাকি। ঘাসের সাথে ...

সেরা পাঁচ

  • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
      হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে  নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক। ১....
  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বেলায়েত মাছুম
      ১. তুমার আত থাকি কুন্তা খাইলে তুমার চউখো চউখ পড়লে  আমি টাল অইজাই পাতা যেলা পরি থাকে ঘাসর উপরে মনো অয় আমিও পরি থাকি হারাদিন, বিয়ান থাকি হাই...
  • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    নৈশ সভা নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা; নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে- তার কথা কোন...
  • দিনলিপি | বেলায়েত মাছুম
    ১. এইভাবে একদিন লিখে রাখি জানালার কথা, দক্ষিণের হাওয়ায় ভাসা ফুলের রেণু,পাখির পালক হতে গুনগুন আওয়াজ; শব্দের ভেতর কাঁপা শোভন আলো, পা...
  • গত হওয়া শীত কিংবা বসন্তের কবিতা গুচ্ছ | বেলায়েত মাছুম
    আজ ১লা ফাল্গুন। দেশে শীত শেষ হলেও শীতল ভাবটা নিশ্চয় রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডেও শীত শেষ হয়ে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা আর ঝিরঝির তুষার...

গোলা । উগাড়

  • ►  2022 (6)
    • ►  ডিসেম্বর 2022 (1)
    • ►  নভেম্বর 2022 (1)
    • ►  অক্টোবর 2022 (1)
    • ►  জুলাই 2022 (1)
    • ►  মে 2022 (1)
    • ►  এপ্রিল 2022 (1)
  • ▼  2021 (7)
    • ▼  সেপ্টেম্বর 2021 (1)
      • একটা অদৃশ্য পাখি ও কয়েকটি কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুলাই 2021 (2)
      • পাখীদের পানাশালায় বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
      • আরও দুই পংক্তি | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুন 2021 (1)
      • তোতা ও রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    • ►  মার্চ 2021 (1)
      • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | ব...
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2021 (2)
      • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বে...
      • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
  • ►  2020 (9)
    • ►  অক্টোবর 2020 (1)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2020 (1)
    • ►  জুলাই 2020 (1)
    • ►  জুন 2020 (1)
    • ►  মে 2020 (1)
    • ►  মার্চ 2020 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2020 (2)
    • ►  জানুয়ারী 2020 (1)
  • ►  2019 (3)
    • ►  অক্টোবর 2019 (1)
    • ►  জুলাই 2019 (1)
    • ►  মে 2019 (1)
  • ►  2018 (5)
    • ►  ডিসেম্বর 2018 (1)
    • ►  জুন 2018 (1)
    • ►  মে 2018 (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2018 (1)
  • ►  2017 (6)
    • ►  আগস্ট 2017 (1)
    • ►  জুলাই 2017 (1)
    • ►  জুন 2017 (1)
    • ►  মার্চ 2017 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2017 (1)
    • ►  জানুয়ারী 2017 (1)
  • ►  2016 (8)
    • ►  ডিসেম্বর 2016 (3)
    • ►  জুলাই 2016 (1)
    • ►  জুন 2016 (1)
    • ►  মে 2016 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2016 (2)
  • ►  2015 (30)
    • ►  ডিসেম্বর 2015 (3)
    • ►  নভেম্বর 2015 (2)
    • ►  জুলাই 2015 (2)
    • ►  জুন 2015 (3)
    • ►  মে 2015 (7)
    • ►  এপ্রিল 2015 (6)
    • ►  মার্চ 2015 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2015 (3)
    • ►  জানুয়ারী 2015 (3)
  • ►  2014 (8)
    • ►  নভেম্বর 2014 (4)
    • ►  অক্টোবর 2014 (4)
  • ►  2010 (17)
    • ►  আগস্ট 2010 (5)
    • ►  জুন 2010 (1)
    • ►  এপ্রিল 2010 (11)

বিষয়

অ-কথা অ-গদ্য কবিতা গান ছবি প্রেমের কবিতা ভ্রমণ English Poetry
Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.


আপনার সাহায্য পেলে বিদ্যানন্দের কাজ আরো সহজ হবে। বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

অন্যজন

  • মীর রবি
  • মুনিরা মেহেক
  • মুরাদুল ইসলাম
  • সুহান রিজওয়ান

যোগাযোগ

নাম


ইমেল *


বার্তা *


Copyright By Belayat Masum | Designed By OddThemes | Distributed By Blogger Templates