কবিতা লেখতে গিয়ে কিছু প্রেমের কবিতাও লেখা হয়েছে। কবিতা আসলে প্রেমেরই হয়, প্রেম ছাড়া কবিতা হয় না কিন্তু প্রেমের বাইরে দাড়িয়েও কবিতা লেখা যায়। যেভাবেই বলি, ঘুরে ফিরে কবিতা আর প্রেম একই বৃত্তেই থাকছে। প্রেম থাকা সকলকেই অভিনন্দন।
আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে
আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার পর্ব বলতে শীতকালটা ছিল
পৌষের আগে আগে যে রকম সন্ধ্যা নামে
ভেঁজা কুয়াশা ঠোঁটে মেখে ঘর ফেরত পাতি হাসের দল;
শুকনো ধুলো উড়তে উড়তে আমাদের জানালায় উল্টে যেত
ঘরের পর্দা আরো বেশি ভারি হয়ে উঠলে-
আকাশের রঙটা একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে গেলে
আমাদের সাক্ষাত বলতে ঐ সময়টাই ছিল।
দরজার বাইরে ঘুমিয়ে পড়তো মেটো আলো
খরচার ভয় ছিল
তবু সঙ্গম মুখর হাওয়া আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে উঠলে
দেয়ালে লেপ্টে থাকা হাস্নাহেনার গন্ধ শুকে শুকে ভ্রমণে যাওয়া যেত
আমাদের সাক্ষাত পর্ব বলতে ঐ সময়টুকুই ছিল।
গতবার যখন আলোটা নিভে গেল ভোরের আগে
দেয়াল ঘামতে ঘামতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো,
সূর্যটা এত আলসে ছিল যে জোনাকিরা গাইল নাদাইর গীত
আমরাও জড়তা ভেঙে শুনতে থাকলাম শিশির ঝরার শব্দ;
এইভাবে আমাদের সাক্ষাত শেষ হয়ে এল বলে
দারুণ শীতকালটা জমে গেলো।
উড়াউড়ির গল্প
আমাদের উড়াউড়ি নিয়ে কোন গল্প নেই কিংবা কোন চিত্রকর্ম; প্রাসাদের দেয়াল যত দীর্ঘ হয় অন্ধকারে- তার চেয়ে প্রশস্ত বুকের মাপে কোন মানচিত্র আঁকা হলোনা পাথর খুদে। ঘড়ির বয়স বেড়ে গেলো শুধু; তুমুল হাওয়া একদিন ছুয়ে দিলো আমাদের বিষন্ন চুলগুলো।
গাছের পাতা হতে ঝরে গেলো টুপটুপ জল, আমাদের চোখ, পায়ের পাতা ভিঁজলো আসন্ন শীতের ধুলোয়। আরো অনেক হেমন্তী সন্ধ্যার মতো, অপার অন্ধকারে ডুবে গেলো আলোক রশ্মি। আর দূর হিমলায় শান্ত কুহকের ছায়ায় চুপচাপ, চুপচাপ মেতে রইল নিজের ভেতর। তবু আমাদের জন্য কোন গান, নৃত্যে সম'গীত গাইলোনা ঝি ঝি পোকার দল।
গত হওয়া দিনের বাড়তি স্মৃতি সমুহ নিয়ে একদিন আমরা মুখোমুখি হলে- আবার হয়তো বলা যাবে কোন্ কোন্ দুপুর আমাদের ঘামিয়ে দিলো; যাযাবর পাখিদের ঠোঁট কেন ফিরে গেলো নিজেদের ডেরায়, ঘড়ির কাঁটার অগুনতি ঘুর্ণন শব্দে কেমন করে মাঝ রাত ঝিমুতে থাকে।
আমাদের উড়াউড়ির শব্দে তন্দ্রাসক্ত কুয়াশা ঝরে যায়- এমন গল্প আর চিত্রের আগাম কল্পনা নিয়ে ভ্রমণে যাই। জরাগ্রস্ত দুপুরে শোকগান গাইতে গাইতে যখন সন্ধ্যা নামে, যখন প্রজাপতি আর উড়তে চায়না নিজের ডানায়- মনে হয় সকল শব্দেরা উৎকন্ঠা নিয়ে ফিরে আসে ঘড়ির ভেতর।
আপনাকে/ ৩
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে; এমন কিছু দিন- রোদ আর বৃষ্টির মাঝে ভাগাভাগি করে- আমি আর কোথায় দাড়াবো। একা তারার মতো দূর থেকে শুধু ধারনা নিয়ে আপনার থেকে- আপনার ছায়ার থেকে- ছোয়ার থেকে- নিরুপায় দূরে থেকে যাবো।
ধারনা হয়- আপনার হাত সম্পর্কে আমার ভুল ধারনা আছে। এমন কথা আমি কারে আর বলি? ফুলেদের কাছে এ কথা বলতে পারিনা। আপনি বৃষ্টিতে ভিঁজে ঘরে ফিরে আসেন আর আলতো করে পশমী তোয়ালে ধরে ভেঁজা চুল শুকাতে থাকেন- দূরের তারা দূরে হাসতে থাকে।
আপনার হাত সম্পর্কে আরো ভুল ধারনা আছে- এমন কিছু কল্পনা আমি পোষী।
আপনাকে/৭
আপনারে আমি পাখির কথা বলি-
নরোম পালকে ঢাকা সাদা বক পাখির কথা;
তারা কেমন মৌন-
হেটে যায় একা ধীর সেই মাছের দিকে।
আপনারে সেই ফুলের কথা বলা যায়
পাতার ভাঁজে শুয়ে মনে পড়ে যার-
একদিন এমন ছিলো-
অসম প্রেমের মতো
আপনার হাত ছুয়ে- সারা দুপুর ঘুরে
নিজেরে লুকিয়ে ফেলার স্মৃতি- সন্ধ্যার আলোয়।
এমন করে হয়তো বলে ফেলা যায় আপনারে
দূর থেকে দেখা দূরের স্মৃতি
অগণন তারার ভিতর একটি যে তারা
সন্ধ্যার আলোয় মুখোমুখি হয় নিঃসঙ্গ জানালায়।
একদিন জানবেন শব্দের ভেদাভেদ
সেই একা হৃদয় নিয়ে বসবেন পুরুষ-পাথরের কাছে;
ফুলেল স্মৃতি আর নদীর ঢেউ
বলবেন তারে এক এক করে;
স্বচ্ছ কাচের ভেতর আপনার পরিচিত অবয়ব
মুখোমুখি বসে একদিন আমার কথা শোনেন—
আমি আপনারে শুধু পাখির কথা— ফুলের কথা বলি।
যে শহরে তুমি নাই/২
মনে হয় বনের ভিতর বসে তসবি গুনি
কার নামে? তোমার, না তার—
আকাশ ভরা তারা
আমি গুনতে গেলেই শূন্য থেকে শুরু হয়
শেষ হওয়ার কোন দিন তারিখ থাকেনা—
আমার স্মৃতির যদি মরণ আসে
হিজলের ডাল থেকে সেই পাখি —
তোমার তদবির নিয়ে পৃথিবীর জানালা ঘুরে
আরো এক দিন — কার্তিকের ঝড়ের মত
তোমার নাম ধরে ডাকতে রবে—
যে শহরে তুমি নাই/৮
কোথাও সেই ইশারা পড়ে আছে
ঝড়ের রাতের মতন;
অন্ধ বাদুর গান গেয়ে ফিরে এমন রাত—
দেয়ালে কথার কাকলী মিশে আছে—
কোথায় তোমার চোখেরা আজ?
কোথায় হেটে চেলে গেছে চঞ্চল দুটি পা—
নীরব নদী তীর বুঝি ডাকবে নাম ধরে
এমন সুর হয়ে যদি উড়ে আসো
যদি আমি বর্ষার তুমুল ঢেউয়ে মাতাল হয়ে
ডুবতে থাকি—
ইশারা ভুলে—
কোথায় পালাবো আজ এমন তীব্র জ্বরে।
পাখিদের পানশালায়/১২
আমি যেন সেই হাওয়া
যেন কোন এক নারীর
কোমল হাতের নিচে
দাড়াই—
যেন আমি ঝরে যেতে পারি
তুমুল ঝড়ের সময়
কোন কোন জানালায়
নিজের মতো করে—
সেই দিন সেই রাত নাই
যখন পাখিদের পানশালায়
আমি এক নবিশ—
জোড়া চোখে দারুন ঘুম
তবু কিছু আলো
কিছু অন্ধকার
আমায় নিয়ে মেতে আছে যেন—
সেই হাওয়া
ঝড়ের সময়
মুখোমুখি বসি
শোনায় কথা
মনে হয় দূর
মনে হয় নারী
আমি এক লোক
বাসি দিন যায়
আঙ্গুল গুণে
পাখিদের পানশালায় যেন
আমি সেই লোক
বসে বসে ভাবি, যদি একদিন
হারাই ডানা—
সহজ গল্প
সহজে গল্পটা বলা যায় তারে, দেখা হলে মুখোমুখি বসবার কালে, মেঘের মতন উড়া চুলের গন্ধ মেখে- পুরনো গল্প ভেবে আবার বলা যায় তারে; চশমার আভে ঢাকা চোখের ছবি, নদীর ঢেউ গুনা খাতায় রেখা টেনে টেনে। রাত নেমে এলে কুয়াশায় ডুবে, দেয়াল নাইতে নামে আমাদের জলে, ঘুরে ঘুরে একা একা নিজেদের ভিতর ব্যাকুলে ডুবতে থাকি গোলাপ বনে।
নগর উঠলে মেতে আলোর ছলে, অমীমাংসার রাত ভেবে কুহক ডাকে। পাথর বললে কথা জোছনাও মাতে; টগর, বকুল, জবা কত হিজল ঝরে; বর্ষার তুমুল গীত কর্তাল সুরে - আমাদের বাঁজায় আর দুলতে থাকি।
আমাদের গল্পটা বলা গেলে আর কাঁচের শরীর ভেবে শহরের ঘর, শ্যাওলার আল্পনায় আরো কিছু কাল- মাতম গাইতে থাকুক ঝরনা ধারায়। কাঠের জটর থেকে বহুতল আওয়াজ, ফেরার পথ ধরে ধুলোর গরজ। আবার দেখা হলে গল্পের পর, তার চোখ মুখ বৈঠার তালে -বেহাল সেতার ধ্বনি হাওয়ার ভরে- কতকাল থাকে আর ডুবুরীর ভাবে। সনাতন জলের কল শব্দে ঘুরে, আনন্দে মেতে রয় রুপসী রাতে।
বাকি রাত
বাকি রাতটুকু কেটে যাক নার্সারি বাগানে, চোখের পাতার কাছে
এক লাশকাটা ঘরে, অধল হয়ে গেলে পুরনো রুপার চামচ
পুকুর পাড়ের ঘাসে শুয়ে পড়া যাক-
এই রাতে ফুটে উঠুক দুধেল ফুল, সোনার দেরাজ খুলে
জুতোজোড়া পায়ে- পৌছার পথ ধরে কিছু আলো নিভুক;
ভাড়াটে ঘুমের বহর পুরিয়ে এলে, নিজেও পৌছে যাই ভ্রুণের শহর।
দখিন দুয়ার খুলে এক আলতার বরজ, আর সহজিয়া সুরভী মাখা
খুনের করাত। ভুলে ভরা দেয়ালিকায় রঙ কিছু লেপে-
হারানো গানের সুরে আমরাও মাতি।
বাকি রাত শুয়ে থাকি চাষার ঘরে, ফসল কাটার দিন
গনিয়ে এলে- কিছু বীজ বপন করি নদীর ধারে
আর কিছু পাকা ফুলের কুসুম শুকিয়ে রোদে-
নিজের দোকানেই সদাই সারি;
কুহুকাল ডুবে থাকি সিঁথি রেখা ধরে, নরম জাজিম ছুয়ে
ভেসে উঠা ভোরে, কেটে যাক আরো কিছু আবাদ সময়।
বাকি রাতটুকু কেটে যাক নার্সারি বাগানে, চোখের পাতার কাছে
এক লাশকাটা ঘরে, অধল হয়ে গেলে পুরনো রুপার চামচ
পুকুর পাড়ের ঘাসে শুয়ে পড়া যাক-
এই রাতে ফুটে উঠুক দুধেল ফুল, সোনার দেরাজ খুলে
জুতোজোড়া পায়ে- পৌছার পথ ধরে কিছু আলো নিভুক;
ভাড়াটে ঘুমের বহর পুরিয়ে এলে, নিজেও পৌছে যাই ভ্রুণের শহর।
দখিন দুয়ার খুলে এক আলতার বরজ, আর সহজিয়া সুরভী মাখা
খুনের করাত। ভুলে ভরা দেয়ালিকায় রঙ কিছু লেপে-
হারানো গানের সুরে আমরাও মাতি।
বাকি রাত শুয়ে থাকি চাষার ঘরে, ফসল কাটার দিন
গনিয়ে এলে- কিছু বীজ বপন করি নদীর ধারে
আর কিছু পাকা ফুলের কুসুম শুকিয়ে রোদে-
নিজের দোকানেই সদাই সারি;
কুহুকাল ডুবে থাকি সিঁথি রেখা ধরে, নরম জাজিম ছুয়ে
ভেসে উঠা ভোরে, কেটে যাক আরো কিছু আবাদ সময়।
তোমায় ছুয়ে আসা হাওয়া
তোমায় ছুয়ে আসা হাওয়া, হয়তো
আমায় ছুয়ে যায়— আমি বুঝতে পারিনা প্রিয়;
মনে হয়— হই নিরুপায়।
গত হয় ফুলে রাঙা দিন
মরমে বাঁজে এই সুর— তুমি আমি পুরনো
সেই গত হওয়া ভোর— পাখির গানের মতো এখনো মলিন।
ডাকে কে, কে যাবে দূর— বুঝাতে পারিনা আর
এই যে দারুণ সময় নিদারুণ চলে যায়।
সূর্যের আলোয় আছে ঋণ
যদিও চাঁদ থাকে দূর দূর— এমন আপন আছে কোন
শোনায় সেই চেনা সুর— পাখির গানের মতো হয়েছো লীন।
কে আমায়, কে তোমায় ডেকে গেছে বারেবার
একবার মোহিত করে— আর না পায়।
0 মন্তব্যসমূহ