বেলায়েত মাছুম
,
  • বাড়ি
  • কবিতা
  • গদ্য
  • প্রযোজনা
  • সংযুক্তি
    • অ-কথা
    • সংকলন
      • অঞ্জন দত্তের গান
      • শাহ্ আব্দুল করিমের গান
      • কল্পকান্ত সদাই'র গান
      • অ-সংযোগ
    • ভ্রমণ
    • আমি
  • ISSUU
  • বই
    • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে
    • পাখীদের পানশালায়
kemone jai ure paki, Belayat Masum


শুভেচ্ছা, এই লেখাগুলোকে গান বলা যায় কি না, জানিনা। লিখার সময় গুনগুন করে গাইছিলাম তাই গানই বলছি। হয়তো এগুলো কোনদিন গান হিসেবে গাওয়া হবেনা, আমিও হয়তো ভুলে যাবো। সে জন্যে এখানেই রাখলাম। আর পৃথিবীর প্রতি শুভকামনা।


কে গেছে পালিয়ে



কে গেছে পালিয়ে আমার আনন্দ নিয়ে
আমার বেদনা নিয়ে
আমি যেন এই জলভরা মেঘ
ঝরে পড়ি মাটির বুকে অঝরে।

যে খেলায় মেতে আছি আগুন পুষি যে বুকে
হৃদয়ের খোলা দ্বারে বসে কে আমায় ডাকে।
দুপুরের কোলে বসে কে যেন আছে
হাওয়া ভরা বন শুধু গেল যে পুড়ে।

পুরনো দেয়াল বুঝে শ্যাওলা কেমনে বাঁচে
যেন হৃদয় দিয়ে তারে এই জীবন যাচে।
হাওয়া ভরা খাঁচা পড়ে থাকে শুধু
সেই পোষা পাখি গেলো আকাশে  উড়ে।


০৯/০৬/২০, সুইন্টন



কুটুম এলো বাড়িতে


কুটুম এলো বাড়িতে—  গাছের ডালে কোন পাখী ডাকে গো
তার নাকের নথে সোনাফুল নাচে।


আমার বাড়ি নদীর পাড়
জালে রাঙা মাছগো—  জলের তলে আহাজারি করে
সেইনা পথে কুটুম এলো
উড়িয়ে হাওয়ায় ধুলো গো—  রাঙা মুখে সেই ধুলো ঝরে।

কুটুম এলো বাড়িতে আমি পাইনা তার দেখা গো
সেই চরণে এই চরণ রাখি
পাখীর মতন সন্ধ্যা কাটে উড়িয়ে ডানা আকাশে
যদি সে দেয় গো ফাঁকি।


তার বাড়ি ঝুঝন দূর
উড়ে পথে হাওয়া গো—  ফুলের সুরভি নিয়ে উড়ে
সেইনা পথে হাটের লোক
পায়না চুলের 'বাস গো—  সেই বিরহে এই নাক মরে।

কুটুম এলো বাড়িতে আমি নাই সে ঘরে গো
গাছের ডালে ডাকে কোন পাখী
নিরালা যে নদীর পানি যায় ভাটির টানেরে
সে অঝরে ভিঁজেনা দুই আঁখি।


১১/০৮/২০, ওল্ডহাম



গাছের পাতায় লাগলো হাওয়া


গাছের পাতায় লাগলো হাওয়া— দোলে দোলে দোলে গো
রেশমী চুল হাওয়াতে দোলে
দোলে গো দোলে গো খোঁপা তার গেলো গো খুলে।

আমায় নিয়ে কে ভাবে— এলোনা সে এলোনা
হাওয়া তো জানেনা তার ঠিকানা— এলোনা
আমি যেন গাছের পাতা— দোলে দোলে দোলে গো


আজ যেন এই হাওয়া উড়ে যায়
তার চুলের সুরভিরও নেশায়—
উড়ে উড়ে হাওয়া যায়— দূরে যায় দূরে যায়
দূরে আছে পুরানা এক বাড়ি—
সে বাড়িতে কে থাকে? সে থাকে, যে থাকে
পুকুর জলে হলো তার নাওয়া


ঘাটের জলে ঢেউ উঠে ভিঁজে তার শাড়ি গো
ভিঁজা চুলের সুরভি ছড়ায়—
আমার চোখে, আমার মুখে লাগে সে হাওয়া গো
প্রেম নদীতে আমার নাও ডুবায়।

জলের উপর ভাসে হাওয়া— দোলে দোলে দোলে গো
রাঙা পায়ে ঘাটের জল খেলে
দোলে গো দোলে গো খোঁপা তার গেলো গো খুলে



০৮/০৮/২০, ওল্ডহাম/সুইন্টন





কোন দরদে ডাকছো আমায়


কোন দরদে ডাকছো আমায়— ঝরে ফুলের কলি গো
সেই উঠানে দিও তারে ঠাই—
আমার যদি ঘুম ভাংগে না সপনে ডুবে যাই।


হাওয়ায় উড়ে ফুলের পাঁপড়
মাটিত শুয়ে ঘাস গো— জীবন বড় লাগে মধুময়
যে কারণে ফুলের সুবাস পায়না তার ঘর গো
সাধের পিরিত দূরে দূরে রয়।

কেন আমায় ডাকছো তুমি—  নদীর ধারে গাছ গো
সেই ঝড় উড়াতে পারে নাই—

জলের উপর পালের নৌকা
আগুনে পুড়ে কাঠ গো— সহজ প্রেমর সাধ তার হয়
যে পিরিতে ঝড়ের হাওয়া ভাংগে তার ঘর গো
সাধ মিটাইয়া করে বনধুর ক্ষয়।

এই যে আমি ভাবছি তোমায়— মন্দ হওয়ার দোষ গো
পুড়ে যদি হাওয়ায় উড়ে ছাই—


২৬/০৮/২০, ওল্ডহাম





কেমনে যায় উড়ে পাখী


কেমনে যায় উড়ে পাখী— তার ডানা আছে গো
তার সপন আছে গো—
হাওয়ার উপর ডানা মেলে যায় উড়ে ডাকি।

শুনাবে গান তোমায়, আমার মনের কথা
বাঁজাবে দূরে বাঁশি সেই দরদী মমতায়।
কে ডাকে এমন করে— আমায় আগলে রাখে গো
তার বুকের পাশে গো—
জলের উপর হাওয়া যেমন দিয়ে যায় উঁকি।

সেই পুরনো জলসায়, হলো কত কবিতা
আঁকা হলো নিজের ছবি সেই পুরনো খাতায়।
যে চলে যায় দূরে— আমায় একা করে গো
তার হৃদয় ছিড়ে গো
হাওয়া ভরা কলের পাখী দিয়ে যায় ফাঁকি।


০৩/১০/২০, ওল্ডহাম







 


 

১.
আমি যেন মেতে আছি উৎসবে
নিবেদিত এক ঘর লোক
তন্দ্রার আলোয় ম্রিয়মনা সেই
পুরনো ছায়া ঘিরে।

উৎসব থামে হয়তো আমাকে ঘিরে
ফুলের পদবী নিয়ে—
হয়তো দাড়াব কোন  বনের ধারে
নিজের সৎকার হয়ে।

২.
এমন সোনালী মলিন পাতার দিকে থাকাই
ঘড়ি পোড়ার শব্দ শুনি
আমার দেহকল ঘিরে আছে উৎসব
পলাতক রোদ খুঁজে পায়না কোন উপায়।

৩.
চোখের পলকে আটকে আছে সবুজ ক্যাকটাস
যেন মরুভূমি থেকে ঘুরে আসা এক উঠ
পাথরের ভাঁজে খুঁজতে থাকে পিপাসার জল;
উৎসব শেষ হলে আমিও বেড়াতে যাব
দলিলে শব্দ কত হয় তা গুনতে গুনতে।

৪.
রোদে পাতা শুকানো গেলো
মুমুর্ষ চোখ,
বিলাসে নত হতে থাকে  অপূর্ব সময়—
আমি তার কাছে দাড়াই
নিজের ছায়ার তলে
পাতার মতন কিছু দূর উড়ে যাই।

৫.
পাতার ডানা নাই তবুওতো উড়ে
এমন কথা যত বার বলি— পাখী হেসে উঠে

৬.
অনেক ভাবা হলো তোমায়
হয়তো আরও অনেকে ভাবে
ফুলের সুরভী নিয়ে গত হয় দিন
গত হয় ভাবনার পুরনো দেয়াল।

৭.
আমার চোখে আছে চশমা
আছে তারাগন্ধা রাত
সমুদ্র কতদূর জানিনা
জানি তোমার দূরত্ব আজ।
রোজ মেঘের কলতান শুনি
আর পাখীদের আনাগোনা
ঘাসের ভেতর কার শৈশব
ভুলে যায় তার পুরনো সাঁজ।
৮.
আমাদের প্রেম বুঝি সুর্যাস্তের উজ্জ্বল আভা
সুখি গৃহহস্থের বর্ষার বিকেল
মরক্কো দেশের উষ্ণ হাওয়া।

৯.
ভাবি সুখি হবো
একদিন পালিয়ে যাবো নিজের থেকে—
ভাবি দূরে কোথাও আমি
পলাতক পা দু'টি নিয়ে
ঘুরতে ঘুরতে তোমার দরজায় দাড়াই।
কোথাও যাবো আমি
ক্লান্ত লোকের মতো, ভবঘুরে দিনে;
পৃথিবীর এমন কোন দরজা নাই
যা আটকে দিবে আমায় সুখি হতে।

১০.
চোখ বন্ধ করলেই আমি উড়তে পারি
এমন অনুশীলন নিয়ে আমি পাখীদের বাড়ি যাই।
পাখী শাস্ত্রের প্রথম পাঠ—  মাতাল হওয়া যাবেনা
মেনে নিয়ে আমি ঘুরতে থাকি। আহ্লাদী পাখীরা আমার
গালে চুমু খায়। তারা আমন্ত্রণ করে  নতুন
যৌবতী পাখীটার প্রেমিক হতে। কিন্তু আমিতো মানুষ,
মাতাল হওয়া লুকাতে পারিনা, জন্ম থেকেই অক্সিজেনে নেশা।
মাতাল লোকেরা, মাতাল লোকেদের মাতাল ভাবেনা— 
এমন কথা আমার প্রেমিকা পাখীটারে বুঝাতে থাকি।
দূরে—  পাখীদের বাড়ি থেকে আমি উড়তে থাকি
উড়তে উড়তে কোথায় চলে যাই, দিশা পাই না;
প্রেমিকার নরম হাতের মতো কোমল হাওয়া
আমায় নিয়ে ভাসতে থাকে—



- ওল্ডহাম, ম্যানচেষ্টার



belayatmaum







১.
যে নদীতে ভাসাই তরী জলে করে টলমল
জল নিশিতে আনতে গিয়ে জলেতে অতল

২.
যে ক্লেশে জলে যায় তার ভাসান রোগ হয়-
হাওয়ার ভারে জাগে ওজন হারানোর সংশয়

৩.
কোন জানালায় ঝড়ে পুড়ে কান্না
জল হয়ে বৃষ্টি ফোটে অশান্ত আঁষাঢ়ে

৪.
নদীতে ঢেউ জাগিলে জল কেন দোলে গো
মাটিতে পৈতা রেখে মাথা কার কোলে গো

৫.
নীল ছুয়ে ঘ্রাণ, মন ছুয়ে  জল
আঁধার মেখে উড়ে প্রিয় মেঘদল

৬.
আয় ফিরে ঘর, মন, ফেরা কি হয়?
ফেরার কথা ছিল হায়, ছিল সংশয়
৭.
যে বাতাসে ফুল ঝরেনা, অনুরাগে
নোনা জলে ঢেউ জাগে, বিবাগে

৮.
যে শহরে আমি আগুন্তুক, সে শহর কি তোমার নয়
এই শহরে হিজল ঝরেনা,তবুও পাখির কিসের ভয়

৯.
বৃষ্টি ফোটায় আহত ধুলো
আর প্রাণ ফিরে পায় পাতা সকল

১০.
আমি পাখীদের কথা ভাবি আর মানুষের
পরস্পর ঘুরতে ঘুরতে তারা কোথায় যায়


    


১.
মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই। আব্বার কবরের পাশে অচেনা এক লোকের মতো বসে থাকি। ধীরে- দূর পাহাড় থেকে ভেসে ঘোরা মেঘের সাথে চলতে থাকি। ঘাসের সাথে— পাতার সাথে শুয়ে নিদ্রা যাই। মনে হয় আমি দূরের বনের ভিতর হাওয়া হয়ে উড়ি। আমার কোন বাড়ি থাকবেনা তবু পৃথিবীর সকল দরজা চেয়ে রবে আমারে দিকে।

ফুলের পাঁপর ঝরে যাবে আর সন্ধ্যার আলো মেখে আমি ফিরবো ঘরে। আঙিনায় পড়ন্ত পাতার সাথে উড়ে উড়ে চলে যাবো সেই পাখির বাসায়। যে আমার থেকে দূর, দূর থেকে বসে অপলক নিদ্রা যাবে বলে জোনাকী পুষতে থাকে।

অন্ধকারের ভেতর হতে কয়েকটি হাত, আরো কিছু পা আমার শরীর মাড়িয়ে চলে যাবে পড়ন্ত পাতার দিকে। হাওয়ার স্পর্শে পাতা আহলাদি হয়, আমার দরজা, উঠোন পেরিয়ে —বনের পরে— আব্বার কবরের দিকে চলে যায়। আমি অন্ধ হতে থাকি আর বন্ধ চোখের ভেতরে ঝলসানো আলোয় মঁজতে রই। আর কোন চোখ নেই আমার— রাতের পাখির মতো গন্ধ শুকে পাতার ভাঁজে যেন নিজেরে লুকাই। 

আনন্দ নিয়ে কোথায় যায় লোক? মেঘের কোলে কত আরতি জমে! তবু, জাহাজের নাবিকের মতো চেয়ে থাকি আমি; জলের গভীরে মাছের সংসার দেখি— অবিরাম স্রোতে উজ্জ্বল চোখগুলো নিয়ত যেন আমার দিকেই থাকায়। আমি আর কোথায় যাবো? উড়তে উড়তে সন্ধ্যা ফুরায়ে যায়।

আব্বার কবর হতে কত দূর আমি? কত সমুদ্রজল মেখে নাবিক, লবণ চাষী আর মাছ ধরা লোক ফিরে আসে তার ঘরে— তবু কিছু আলো সন্ধ্যার পাশে দাড়ায়। রাতের প্রতি অধীর প্রার্থনা নিয়ে সংসারী লোকের মুখোমুখি বসে।

ভাবি আমি হাওয়া হয়ে যাবো। চিরদিন ঘাসের সাথে- পাতার সাথে সখ্যতা হবে। জলের উপর দিয়ে ধীরে হেটে পাড় হবো সমস্ত বর্ষার বিকেল। আমি যার ছায়া নিয়ে ঘুরি, তার কোলাহল যেন তলিয়ে যায় সেই সনাতন সমুদ্র নীলে। ভাবি আমি হাওয়া হয়ে যাবো— সন্ধ্যার ছায়া হয়ে আব্বার কবরের পাশে আমার মতো কোন এক লোকের শরীর নিয়ে হেটে যাবো।

২১/০১/২০২০

২.
সন্ধ্যায় না ফেরা হাঁসেরও আছে ডানা—  এমন কথা যদি আম্মারে বলি— হাসতে হাসতে হয়তো তিনি চলে যাবেন আব্বার দিকে। হাঁস-ঘরের দরজা খুলে তারা দু'জনে গুনতে থাকবেন কয়টা হাঁস আজ ফেরারী হলো। বর্ষার ঢেউয়ে ভেসে থাকা হাঁস জোছনার কথা হয়তো জানে, হয়তো স্বপ্নের ঘোরে দ্বীধায় পূর্ণ হৃদয় নিয়ে কোথাও আগুন্তুক হয়।

আমি হাঁসের কথা আম্মারে তবু বলি, পাড় থেকে কিছু হাঁস উড়তে উড়তে পুকুড়ের জলে নামতে থাকে। আর আম্মায় আমারে কিছু বলতে থাকেন— আমি যেন বধির লোক— কিছু আর শুনতে পাইনা। আম্মা হাটতে থাকেন আর হাসগুলো আমায় দেখে মুচকি হাসে।

ঝড়ের সন্ধ্যায় আম্মার হাঁসগুলো কোথায় যায়?

আমার কোন ডানা নাই, তবু মনে হয় এক ঝড় মুখর সন্ধ্যায় আমি আম্মার হাঁস হয়ে যাই। পাখির উড়ার মতো ডানার ভরে কিছুদূর উড়তে থাকি। হারিয়ে যাওয়া হাঁসের মতো একদিন ফিরে এসে আম্মার উজ্জ্বল চোখের মুখোমুখি হই। 

১২/০২/২০২০

৩.
কত সন্ধ্যায় ফেরারী হবো ভেবে বাড়ি ফিরে এলাম। আলনায় রাখা বাসি কাপড়ের গন্ধ নিয়ে আমি ঘুমাতে যাই। আমার চোখের পাতায় যেন আঁকা আছে এক পথের ছবি, হাটতে হাটতে যখন হারিয়ে যাবো ভাবি— দেখি আলনার কাছে বসে আছে একজোড়া মুখ। আলোর আভা নিয়ে আমার চোখের দিকে থাকায়, সেই পুরনো গন্ধ নিয়ে ডাকতে থাকে আর ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে আমি ফেরারী হবো বলে হাটতে থাকি।

হাটার শব্দে যেন পথের ধুলো মগ্ন হয়ে যায়। হাটতে থাকি দূর থেকে দেখা সেই গাছের দিকে, যার পাতাগুলো বাতাসের কাছে একজোড়া ডানার জন্য প্রার্থনা করে। আমি সেই গাছের ছায়ায় দাড়াই আর ডানাহীন পাতার কাছে আমার পুরনো গল্প বলি।

আমার ডানা নাই তবু একদিন ফুলের কাছে উড়ে যাই!

সন্ধ্যায় আর্ আর্ ফুলের মতো ধুলোর বুকে ঘুমিয়ে থাকি। হাওয়ার চলাচল যেদিক থামে— মনে হয় উৎসব শেষ। আমার চৌদিক নিয়ে যেন হাওয়া পলাতক হয়। তবু আমি ফেরারী হবো ভেবে ক্লান্ত চোখ দুটো নিয়ে হাটতে থাকি— কোথায় আর যাবো? সময়ের গন্ধ মাখা দেয়ালে নাক ডুবিয়ে ঘুরতে রই।


২৩/০৬/২০২০
        
                                                                


এখন পৃথিবীর দুঃসময়, মানুষের থেকে মানুষকে দূরে থাকতে হচ্ছে আর এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরি ঔষধ। পৃথিবীর মঙ্গল কামনা করি আর তার প্রাণীদের প্রতি শুভকামনা।

১. চাষের আঙুল

আমার আঙুল চুষে পরিচিত কেউ
আমার আঙুলে লেগে আছে অতি প্রাচিন দাগ
জামার ভাঁজ খুলে ডাকছে বিভোর কেউ
জানালায় সন্তুর মতো চোখ নিয়ে কে?

ভাঙা কর্পুরে মেতে আছে সে
হাওয়ায় কল কল ধ্বনি আর বিভাজিত ঘর
টুপটাপ জলের বাড়ছে অসুুখ;
সে তবে যেন কেউ নয় আর
আমার বাড়ছে দ্বিধা প্রতিপ্রহর।

তাপে সহিষ্ণু মাকড়ের জাল
চারপাশ ঘিরে-
চারপাশ ঘিরে-
সে আর আমি
আরো আধাঁর।

আমার আঙুল বেয়ে ঝরছে পাঁপড়
তার গতরে ফুটে আছে বনেলা ঘ্রাণ।

২৮/০১/২০১৮
একলস/সুইন্টন


২.মাছি মারা শেষ


আজ একটা মাছি মারা শেষ
আর পাখিটা উড়ছে আকাশে
বিকেলের রোদের মতো আমি বসে আছি—
কতকাল আমার জানালায় আমি বসিনা
মাছি উড়ার শব্দ শুনতে পাই
পাখিদের?
এমন কতদিন যে গেল
দুপুর প্রায় শেষ
আর আমি সন্ধ্যার কথা বলি—
কে দূর হতে মাছি নিয়ে আসে
এক থালা ভাত
আমার মুখের দিকে চেয়ে আছে
অন্ধ হতে থাকি—
ঘরভর্তি আমার মাছিগুলো উড়ে
তাদের পুষতে থাকি।

১৪/০১/২০২০
ওল্ডহাম


৩. নিজের একান্ত আয়নায়


আজ মদ পান শেষে আমার সাথে দেখা হলো
চিনতে পারিনি তারে
তবুও মনে হলো—  মনে হয় চিনি তারে
সেই পরিচিত মুখ
সেই পুরনো ছায়ায় পুরনো অবয়ব
তারে নাম ধরে ডাকি
কী নাম যেন ছিল—  মনে পড়েনা;
পায়ের কাছে সেই কাঁচের বোতল
সেই আমার ভেতরে সমান কোলাহল
হেটে যাই
মুখোমুখি বসে কথা বলবো ভাবি
তার মুখ নাই-চোখ নাই
তবু তার সাথেই দেখা হলো আজ
রোজ যেমন হয়— আয়নায়।

১৪/০১/২০২০
ওল্ডহাম


৪. পাথর কুড়ানোর পর


পাথর কুড়ানো হলোনা আর
তবু বাগানের পথ ধরে
এক অচেনা লোক
অন্ধ চোখ নিয়ে
আমার চোখের দিকে থাকায়।
তারে আমি বাগানের কেউ ভাবি
সন্ধ্যার আলো নিয়ে
তার চোখের পাতার কাছে ওৎ পেতে রই।
পাথর কুড়ানো হয়না আর
তবু দূরের নদী তীর হতে
আসে হাওয়া
ফুলের শরীর ছুয়ে
যার মুখোমুখি হয়
তারে আমি পাথর বলি।

০৫/০২/২০
ওল্ডহাম



৫.তৃষ্ণা


তৃষ্ণাই আমাকে জলের কাছে নিয়ে যায়
তৃষ্ণাই আমাকে জলের কাছে নিয়ে যায়
তৃষ্ণাই আমাকে জলের কাছে নিয়ে যায়

জলের উপরে আমি ভাসতে থাকি আর
জলের ভেতরে আমি ডুবতে থাকি আর

গভীরে আছে সেই এক মাছের সংসার
সংসারে যেন আমি সেই মাছের মতোন।


১৫/০২/২০
সুইন্টন



৬. চা বিক্রির দিন

আজ যেন আবার ফিরে এলো চা বিক্রির দিন—
শহরের অগোছালো ফুটপাত ধরে
ছায়ার অবয়ব নিয়ে—
সেই আবার আমাকে ঘিরে
মেতে রয় পৃথিবীর শব্দ সকল।

আজ যেন কেউ আর ডাকছেনা আমায়
ভোরের পাখীর মতো—
তবু পৃথিবীর শব্দের কাছে আমি নত হতে থাকি
পাখির উড়া-পালকের সম্মোহনে।

আমি কার কথা বলি—
চায়ের গন্ধ নিয়ে হাওয়া যার মুখোমুখি হয়;
সেই সব বনের তরঙ্গ মেখে
কেউ-কেউ যেন দূরে চলে যায়
আর আবার যে ফিরে এলো ভুল জোছনার কালে
তারে আমি যেন চা পানে আহ্বান  করি।

২৩/০৩/২০
ওল্ডহাম



৭. একা এক গাছের প্রতি



দুপুরের কাছে একা এক গাছ থাকিয়ে আছে রোদের মুখে
এমন দৃশ্যের ভেতর হাটতে হাটতে আমি যেন কোথাও বসি
গাছের ছায়ার উপর একজোড়া পা
হেটে হেটে ক্লান্ত আঙ্গুল নিয়ে হেটে যায় ছায়ার দিকে

দুপুরের ভেতর থেকে আমার একজোড়া পা
নিয়ে যায় আমায় সেই একা গাছের কাছে
হয়তো আমি বসে থাকি আর দুপুরের চোখে ঘুম পায় শুধু
হেটে হেটে কোথাও যাওয়া হয়না আর
শব্দের শব নিয়ে যেন শুয়ে থাকি আমি নিজের ঘরে
একা গাছের পাতায় কার নাম লেখা
হাওয়ার শব্দে কেন পাতা এমন করে থাকায়
আমি যেন সেই দুপুরের যোনী
গতকাল কে তবে ডেকে গেছে তারে
আমি আর দুপুর একদিন ঠিক পালিয়ে যাবো
এই একা গাছকে আরো বেশি একা করে।


২৬/০৪/২০
সুইন্টন



                                                                                  
শুন্যতা যেভাবে আমার হয়- বেলায়েত মাছুম

১.
আজ ছোট বোন মারজানার বিয়ে। আমার কেমন লাগছে? খারাপ, ভাল দুুটোই। আসলে কেমন লাগছে বুঝাতে পারবোনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বুকটা শুন্য হয়ে গেছে বা বুকের ভিতরে গভীর শুন্যতা। যেখানে কোন তল নেই, তলের কোন সীমারেখাও নেই। মনে হয় একবার আমার বোনটারে জড়িয়ে ধরি— মনে হয় যদি একবার জড়িয়ে ধরতে পারতাম, শুন্যতা হয়তো একটু কমতো। কিন্তু তা হবার নয়। আমি কাউকে জড়িয়ে ধরতে পারিনা।

এমন শুন্যতার মুখোমুখি প্রথম যেবার হই তখন আমার বয়স ছিলো হয়তো দশ বা এগারো, ঠিক মনে নাই। সেই সময় শুরু হলো বাড়িতে আমি চিনিনা এমন লোকের আসা-যাওয়া। লোকদের আসা-যাওয়া দেখতে দেখতে একদিন শুনি বড় বোনের বিয়ে। মনে আনন্দ নিয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে থাকি। বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসতেই বাড়ি ভরে যেতে লাগলো মেহমানে। তখনো বুঝতে পারিনি শুন্যতা কী।

বিয়ের দিন, বাড়ি ভরতি মেহমান আর আনন্দ। আমি নিজেও আনন্দে ছিলাম। বর আসলো, তবে কেন যেন আমি তার সাথে মিশতে যাইনি। দুপুরের পর থেকে আমার আনন্দ আর থাকলো না। মনে হতে থাকলো বাড়ি ভরতি মেহমান, বর, বরযাত্রি এরা প্রত্যেকেই নিষ্ঠূর— আমার বোনকে নিয়ে যেতে এসেছে। ভিড়ের মধ্যেই আমি একা একা হাটতে লাগলাম আর বিশেষ করে আব্বাকে মনে মনে বকা দিতে থাকলাম। তিনি কেমন মানুষ যে আমার বোনকে অন্যের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চায়। আমাদেরতো কোন সমস্যা নাই— আমার চিন্তার যেন শেষ নাই। মন খারাপ নিয়ে ঘুরেতে থাকি একা, কেউ আমার দিকে থাকায় না, আমিও কারো দিকে থাকাইনা। ভাবতে থাকি আমার বোনও কেমন মানুষ যে সে চলে যেতে রাজী হয়ে গেল। আপা আর আব্বার উপর গোসা করে সেদিন আমি উপোস ছিলাম, তা কেউ জানেনা এমনকি আপার বিদায়ের বেলাও তার কাছে যাইনি, জড়িয়ে ধরিনি। এখনো আমার শুন্য বুকটা আরো শুন্য হয়ে উঠে আর সেদিনের স্মৃতি মনে করে শুন্যতাকে পুষি।

আজ আমার দ্বিতীয় বোনের বিয়ে কিন্তু আমার এই শুন্য বুকটারে কোথায় রাখি। গত দুই বছর ধরে আমি কারো সাথে কোলাকুলি করিনা, করতে পারিনা। কোলাকুলি করতে গেলেই মনে হয় আমি শুন্যতায় তলিয়ে যাচ্ছি। মনে হয় আমিই যেন শুন্য হয়ে গেছি। আজ আমার বোনের বিয়ে তাই আমার শুন্যতা নিয়েও কিছু আনন্দ দিতে চাই, কিছু বেদনা জমাতে চাই— আমার আরো কিছু শুন্যতা বাড়াতে চাই।

২.
শুন্যতা, মাঝে মাঝে আমার খুব দারুন লাগে। যখন বুকের বামপাশ শীতল হয়ে যায়, চারপাশ ভুলে যায় মস্তিষ্ক, মনে হয় নিজেকে নিজের থেকেও দূর, তখন সেই মানবিক পরিবশ উপভোগ করাই উত্তম। চারপাশে সবকিছু আছে অথচ সেখান থেকে নিজেকে বের করে অন্য কোথায় গিয়ে পৌছার চেষ্টা যদিও সহজ নয় তবুও সেই চেষ্টা করে শুন্যতায় তলিয়ে যাওয়া দারুণ এক ব্যপার।

গভীর এই শুন্যতা বোধটা গত দুই বছর ধরে আমার সাথে আছে। ঠিক করে বলতে গেল আব্বা মারা যাওয়ার দিন থেকে। এই শুন্যতা কেমন আমি বুঝাতে পারবনা, শুধু জানি এটা আমাকে কোথাও নিয়ে যায়, যেখান আমি চিনিনা কিন্তু চিনতে চাই, যেখানে আমি যেতে চাইনা তবু চলে যাই।

আব্বা মারা যাওয়ার আগ থেকেই আমি অনেক দূরে, এখনো আছি। আব্বা মারা গেছেন এই খবর পেয়ে আমি কাঁদতে পারিনি, যেন আমি বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। কারো সাথে তেমন কথাও বলতে পারিনি। সারাদিন একা একা হাটলাম আর শুন্যতা আমারে ডাকতে লাগলো। হাটি আর ভাবি, ভাবি আর হাটি শুন্যের ভিতর দিয়ে, কারণ তখন শুন্যতাই একমাত্র মাধ্যম আব্বার কাছাকাছি পৌছার।

শুন্যতার ভিতর হয়ে আমি আব্বার কাছে যাই, তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাই কিন্তু পারিনা। আব্বার বুকে বুক রাখি  তবু তার স্পর্শ পাইনা। আমি তলিয়ে যেতে থাকি মায়াবী অন্ধকারে, তলিয়ে যেতে থাকি তলের সীমা ছাড়িয়ে, তলিয়ে যেতে থাকি গভীর শুন্যতার কাছে। আমার থেকে নিজেকে নিয়ে সেই শুন্যতায় যেন পলাতক হই। এর থেকে আমি, আমাকে আর হারাতে পারিনা।



ওল্ডহাম
০৩/০৩/২০২০
             
                                                         



১.
এমন নরোম কোমল হাতে আপনি কারে ছুয়ে দিবেন। কারে আপনি বলবেন নিজের মতো করে- সন্ধ্যায় জ্বলা তারার কথা। অন্ধকারে একা একা যখন আপনার ছায়া আপনারে ভুলে নিরুপায় হয়- আকাশে চোখ রেখে কোথায় ঘুরে আসেন। আপনার হাতে কারে ছুয়ে দিবেন?

বলুন- হাওয়ার কাছে কে অভিযোগ করে? পাখির পালক নিয়ে কে পলাতক হয়? ঝড়ের কালে।

দুপুরের রোদে যখন ক্লান্ত  ঘাসগুলো আপনার চোখের দিকে বিভোর চেয়ে থাকে- পায়ের ধুলো পেয়ে উড়তে থাকে ডানা নিয়ে; আপনার ছায়ার পিছে অবনত শিশিরগুলো ঝরতে থাকে- তখন কোথায় আগলে রাখবেন সেই অসুখি হৃদয়টাকে।


২.
আপনার বাদমী কোমল হাতে চোখ পড়লেই
দেখতে পাই একটা বক পাখি।
পড়া বিকেল জুড়ে একা-
ধীরে ধীরে সন্তর্পনে হেটে যায় সেই মাছের দিকে।

সোনালী রুপালী মাছ
জলের গভীর ছুয়ে ঘুরে বেড়ায় অনিদ্র রাত।

বকের ক্ষীণ দেহের মতো
আপনার আঙুলগুলো দুলতে থাকে
আর সোনালী ঠোঁটের আদলে মাখা
মসৃণ নখে ততমতো মাছ বিভোর নাচে।

৩.
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে; এমন কিছু দিন- রোদ আর বৃষ্টির মাঝে ভাগাভাগি করে- আমি আর কোথায় দাড়াবো। একা তারার মতো দূর থেকে শুধু ধারনা নিয়ে আপনার থেকে-  আপনার ছায়ার থেকে- ছোয়ার থেকে- নিরুপায় দূরে থেকে যাবো।

ধারনা হয়- আপনার হাত সম্পর্কে আমার ভুল ধারনা আছে। এমন কথা আমি কারে আর বলি? ফুলেদের কাছে এ কথা বলতে পারিনা। আপনি বৃষ্টিতে ভিঁজে ঘরে ফিরে আসেন আর আলতো করে পশমী তোয়ালে ধরে ভেঁজা চুল শুকাতে থাকেন- দূরের তারা দূরে হাসতে থাকে।

আপনার হাত সম্পর্কে আরো ভুল ধারনা আছে- এমন কিছু কল্পনা আমি পোষী।


৪.
যেন মেঘের আঙিনায় ফুটে আছে থোকা থোকা ফুল,
ধীর সুভাস পড়ছে ছড়িয়ে সকল পথে-
নরম ঘাসের শরীরে মেঘের আলিঙ্গন।

যেন ভেঁজা দুপুর সংগোপনে ডেকে যায় তারে
আরো কাছে তার মেঘের গভীরে-
পৃথিবীর হাওয়ায় মুগ্ধ চারদিক
ঘুরোঘুরি করে ফিরে আসে মেঘের কোলে।

আর আপনার মতো কেউ, আপনার থেকে দূর
যেন হারিয়ে ফেলে পথ বিভোর অন্ধকারে।

৫.
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে-
এমন ধারণা ছিলো আমার যেন বহুকাল ধরে,
ছিলো গোপন কিছু বিলাসের রুপ-
ছিলো আলাপের অযথা খেয়াল।
ধীর নদীর মতো ভেসে ভেসে দূর-
আপনার কথা বলা যায় হাওয়ার কাছে।

আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে।

বোশাখের হাওয়া, বৃষ্টির জল- মাতিয়ে রাখে আপনার পথ;
সুদূরের বনে থাকে যে পাখি
তার কথা আপনি ভাবতে পারেন।

আপনি যেন সেই পরিচিত পাখি
আমার জানালায় বসে- উড়ে যান হাওয়ায়,
যেমন বনের এক অচেনা পাতা
চেয়ে থাকে চাতকীর মতো-
আপনার দিকে- আপনার ডানার ছোয়ায়।

আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে।

৬.
পৃথিবীতে আছে এক দারুণ অসুখ
লোকে পাবে তারে একদিন নিজের করে
নিরুপায় পথ ধরে যে গিয়েছে চলে
এমন মরমে ফুল ফুটে আর ঝরে।

আগুনের মতো সে নরম তুমুল
তীব্র হাহাকারে কাঁদে মেঘের মতন
পাখির ডানায় লিখে রাখে নাম
শীতের হাওয়ায় যেমন পাতার রোদন।

লোকেরা মাতে সেই আদিম রোগে
পৃথিবীর বাগান জুড়ে ফসলের ঘ্রাণ
মনে হয় সেই ফুলেরা হাসে
বিভোর প্রেমিক যেন খুজে পায় ত্রাণ।


৭.
আপনারে আমি পাখির কথা বলি-
নরোম পালকে ঢাকা সাদা বক পাখির কথা;
তারা কেমন মৌন- 
হেটে যায় একা ধীর সেই মাছের দিকে।

আপনারে সেই ফুলের কথা বলা যায়
পাতার ভাঁজে শুয়ে মনে পড়ে যার-
একদিন এমন ছিলো-
অসম প্রেমের মতো
আপনার হাত ছুয়ে- সারা দুপুর ঘুরে
নিজেরে লুকিয়ে ফেলার স্মৃতি- সন্ধ্যার আলোয়।

এমন করে হয়তো বলে ফেলা যায় আপনারে
দূর থেকে দেখা দূরের স্মৃতি
অগণন তারার ভিতর একটি যে তারা
সন্ধ্যার আলোয় মুখোমুখি হয় নিঃসঙ্গ জানালায়।

একদিন জানবেন শব্দের ভেদাভেদ
সেই একা হৃদয় নিয়ে বসবেন পুরুষ-পাথরের কাছে;
ফুলেল স্মৃতি আর নদীর ঢেউ
বলবেন তারে এক এক করে;
স্বচ্ছ কাচের ভেতর আপনার পরিচিত অবয়ব
মুখোমুখি বসে একদিন আমার কথা শোনেন—
আমি আপনারে শুধু পাখির কথা— ফুলের কথা বলি।

৮.
যেন এক রুপকথা;
ফুলের আঙিনায় বসে আছে উজ্জ্বল তারা—
পড়ছে; সকলের গোপন হয়ে— জোছনা।
পৃথিবীর উজ্জ্বল ফুলের মতন চেয়ে আছে
দূরে কোথাও; হাওয়া ছুয়ে দিলে পরে—
হৃদয়ের দুয়ার খুলে বসবে মুখোমুখি।

ঢেউয়ের ধ্বণি নিয়ে পড়ছে ছড়িয়ে
চারপাশ ঘিরে মাতোয়ারা কেউ—
আপনার চোখের বারান্ধায় বসে
কে তবে উড়ায় সে সকল ঢেউ।

তবু যেন কিছু রোদ অবহেলায় নিয়ে আসে রুপকথা—
পাখির পায়ের মতো চঞ্চল দুটি চোখ
উজ্জ্বল আলো রেখা নিয়ে উপচে পড়ে
সমুদ্রে ভেসে থাকা নাবিকের— ভাঙ্গা পাটাতেনে।

৯.
আপনার চোখের দিকে থাকিয়ে— যদি কোন প্রেমিক
পাখির ডানা নিয়ে উড়তে না পারে
যদি সে রুপকথার এক রাজকন্যা ভেবে
দৈত্যের মুখোমুখি না হয়—

যদি সে পুরুষ লোকটি নিজেকে প্রেমিক না ভাবে
আমি তারে কিছুই বলবনা।



ওল্ডহাম/২০১৯


আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে- বেলায়েত মাছুম



আমার প্রথম কবিতা গ্রন্থ ''আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে'' প্রকাশ হয়েছে আনন্দম প্রকাশনী থেকে। প্রচ্ছদ করেছেন এনায়েত ইসলাম।  আনন্দম,  বইমেলা ২০২০, ঢাকা, দোকান- ৬৯৭, চট্টগ্রাম বইমেলা, দোকান- ১২৬ এ পাওয়া যাচ্ছে। 








১.
আব্বার সাথে আমার পরিচয় ছিলো? হয়তো ছিলো, হয়তো ছিলনা।

আব্বা ঘোড়া পছন্দ করতেন কিনা জানিনা কিন্তু ভয় পেতেন। শৈশবে ঘোড়ার পিঠে হয়তো চড়ে থাকতে পারেন আমার মতো। আমি একবার চড়তে সাহস করেছিলাম, অভিজ্ঞতার জন্যে। আব্বা ঘোড়ায় চড়ে চলে গেছেন দূর। আমি কল্পনায় দু'টি ঘোড়া পুষি- লাল আর সাদা। তারা জীবনের মতো চলমান আজো। শব্দে শব্দে ঘোড়া দু'টি ছুঠে যায় আব্বার কাছে। আব্বা ভয় পেয়ে দৌড়াতে থাকেন আমার কল্পনার ঘোড়াগুলোকে সাথে নিয়ে।

আমি ভিতু লোক। তবু ভয় পাওয়া আব্বার সাথে আমার দেখা হয়ে যায়।

কোন ঘোড়ার পিঠে আমি চড়বো? এমন যখন ভাবছি- দেখলাম সাদা ঘোড়ার পিঠে আব্বা বসে আছেন। আমাকে নিয়ে তিনি কোথাও যেতে চান? লাল ঘোড়াটায় আমি চড়বো কিনা যখন ভাবছি, দেখলাম ঘোড়াটারে খুঁজে পাচ্ছিনা। স্বপ্ন সাধারণত এমনই হয়, তবুও আমি ভাবছিলাম ঘোড়াটারে খুঁজে পাওয়া দরকার। আমাকে কোথাও যেতে হবে, কিন্তু কোথায় যাবো?

আমি খুঁজতে থাকি, আমাদের উঠোনে। বারান্দা থেকে হাতে নাগাল পাওয়া যায় এমন দূরত্বে আছে এক ঝোপ জবা গাছ— ফুটে আছে অসংখ্য লাল লাল ফুল। সে সব ফুলের আড়ালে হয়তো লুকিয়ে আছে লাল ঘোড়া, আমি খুঁজতে থাকি। হাত লাগা মাত্রই ফুলগুলো যেন কিছু বলতে চাইলো! কিন্তু সে সব শব্দ কিংবা কথা শোনার মত সময় আমার নাই।

কয়েকটা ফুল ঝরে পড়লো আমার হাতের স্পর্শে— কুড়াতে লাগলাম, মাথা তুলে চারপাশে থাকিয়ে দেখি অগণিত ফুল। কুড়াতে থাকি আর আরো ফুল ঝরতে থাকে। কুড়াতে কুড়াতে আমি ঝড়ের কথা ভাবি— প্রায় সন্ধ্যায় ঝড় হলে আম কুড়াতে যেতাম, আব্বা নিজে যেতেন না, আমিও না। তবু  মনে মনে প্রতি ঝড়ো সন্ধ্যায় আম কুড়াতে থাকি। কল্পনার আমগুলো সবসময় দারুণ হয়, এই ফুলগুলোর মত। লাল লাল জবা ফুল কোথায় রাখছি? আমার সাথে রাখার মতো এমন কিছুই নেই, তবুও রাখছি, কেন রাখছি সে কথা ভাবার ফাঁকে লাল ঘোড়াটারে মনে পড়ে যায়।

একদিন আমি যেন সেই লাল ঘোড়া ছিলাম। আমার পিঠে ঘোড়া, ঘোড়ার পিঠে আমি— এমন ব্যস্ত দিনে কত দূর হতে ফিরে এসে আব্বার মুখোমুখি হতাম। আব্বা তার সাদা ঘোড়া নিয়ে কোথায় যান সে খবর হয়তো আমি জানি, কিন্তু কোনদিন মুখোমুখি বসে সেই আলাপে আমরা মঁজে যাইনি।

আব্বা হয়তো— হয়তো জানতে পেরেছিলেন একদিন আমি লাল ঘোড়াটারে হারিয়ে ফেলব।

পৃথিবীর বাগানে-মাঠে-ময়দানে আমি খুঁজতে থাকি। কোথায় গেল সে ঘোড়া? যে পথ দিয়ে আব্বা তার সাদা ঘোড়া নিয়ে গেলেন সেই পথই বা কই? আমি হারিয়ে গেছি, না ঘোড়াটা? এমন দ্বীধা নিয়ে আমাদের উঠোন ছেড়ে আর কার উঠোনে যাই— এমন ভাবতে ভাবতে আমি নৌকায় চড়ে বসি!

২.
আমাদের ফুলের বাগান ছিলনা, ছিল শুধু এক ঝোপ জবা গাছ, সে কথাও আমি জোর দিয়ে বলতে পারিনা- ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুগন্ধী কিছু ফুল গাছের জন্য। যে দিন মনে হলো আমার লাল ঘোড়াটা হারিয়ে ফেলেছি -হয়তো কোথাও চলে গেছে, ফিরে আসবে আবার-  সেই থেকে জবা ফুল আমার প্রিয় হতে থাকল।

একদিন এক হিজল গাছের নিচে দাড়িয়ে আছি- মাথার উপর থোকা থোকা ফুল, কয়েকটা অচেনা পাখি- কথা বলা পাখি। তারা কি যেন বলতে চাইল। আমি তখন কিসে যে মগ্ন ছিলাম বুঝতে পারিনি। পাখি গুলো উড়ে চলে গেল। তাদের চোখে আমি দেখতে থাকি- বনের ভেতর একটা ঘোড়া কান্না করছে। উপর থেকে মনে হলো এটা সাদা ঘোড়া- আব্বার ঘোড়া। আমারই এক চেনা ঘোড়া কিন্তু কাঁদছে কেন? আব্বাতো তার সাথেই থাকার কথা।

পাখিরা চক্কর দিতে লাগলো- নিচে একটা ঘোড়া কাঁদছে- আব্বার সাদা ঘোড়া। কিন্তু আমার লাল ঘোড়াটা খুঁজে পাওয়া দরকার।

আমি খুঁজতে থাকি, একা। আব্বার সাথে দেখা হলে ভাল হতো। তার ঘোড়ায় চড়ে আমার ঘোড়া খোঁজা যেত। ঘোড়ায় চড়ে ঘোড়া খোঁজা দারুণ ব্যাপার হতো, কিন্তু কেউরেই আমার কাছে পাচ্ছিনা। পাখির চোখ হয়ে আমি উড়ছি- ঝোপ-ঝাড় ঘেরা জবা গাছ, ঝুল ফুলে সাঁজা হিজল গাছ, আব্বার ঘোড়া, সব, সবকিছু পেরিয়ে আমি যে কোথায় যাচ্ছি অথবা কোথাও যাচ্ছি কিনা এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার ঘুম ভেঙে যায়।

আমি যেন সেই পিপাসিত ঘোড়া। আব্বার সাদা ঘোড়া কিংবা আমার লাল ঘোড়া।



০৩/০১/২০২০                       
ওল্ডহাম
বেলায়েত মাছুম



নবীনতর পোস্টসমূহ পুরাতন পোস্টসমূহ হোম

Translate

বেলায়েত মাছুম

নির্বাচিত লেখা

মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই | বেলায়েত মাছুম

১. মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই। আব্বার কবরের পাশে অচেনা এক লোকের মতো বসে থাকি। ধীরে- দূর পাহাড় থেকে ভেসে ঘোরা মেঘের সাথে চলতে থাকি। ঘাসের সাথে ...

সেরা পাঁচ

  • সিলেটি ভাষায় কবিতা | আমারে কেউ কেউ পড়শি ভাবইন | বেলায়েত মাছুম
      ১. তুমার আত থাকি কুন্তা খাইলে তুমার চউখো চউখ পড়লে  আমি টাল অইজাই পাতা যেলা পরি থাকে ঘাসর উপরে মনো অয় আমিও পরি থাকি হারাদিন, বিয়ান থাকি হাই...
  • ধান পাতারা উড়ে উড়ে যায় | বেলায়েত মাছুম
      হঠাৎ একদিন ধান পাতার কথা মনে পড়লো। ভাবি একদিন আমাদের বাড়ি থেকে  নেমেই ধানখেতের পাশে দাড়াই আর কয়েকটি ধান পাতা আমার মুখের উপর উড়তে থাকুক। ১....
  • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে বই থেকে দশ কবিতা | বেলায়েত মাছুম
    নৈশ সভা নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা; নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে- তার কথা কোন...
  • দিনলিপি | বেলায়েত মাছুম
    ১. এইভাবে একদিন লিখে রাখি জানালার কথা, দক্ষিণের হাওয়ায় ভাসা ফুলের রেণু,পাখির পালক হতে গুনগুন আওয়াজ; শব্দের ভেতর কাঁপা শোভন আলো, পা...
  • গত হওয়া শীত কিংবা বসন্তের কবিতা গুচ্ছ | বেলায়েত মাছুম
    আজ ১লা ফাল্গুন। দেশে শীত শেষ হলেও শীতল ভাবটা নিশ্চয় রয়ে গেছে। ইংল্যান্ডেও শীত শেষ হয়ে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে খুব ঠান্ডা আর ঝিরঝির তুষার...

গোলা । উগাড়

  • ►  2023 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2023 (1)
  • ►  2022 (6)
    • ►  ডিসেম্বর 2022 (1)
    • ►  নভেম্বর 2022 (1)
    • ►  অক্টোবর 2022 (1)
    • ►  জুলাই 2022 (1)
    • ►  মে 2022 (1)
    • ►  এপ্রিল 2022 (1)
  • ►  2021 (7)
    • ►  সেপ্টেম্বর 2021 (1)
    • ►  জুলাই 2021 (2)
    • ►  জুন 2021 (1)
    • ►  মার্চ 2021 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2021 (2)
  • ▼  2020 (9)
    • ▼  অক্টোবর 2020 (1)
      • কেমনে যায় উড়ে পাখী | বেলায়েত মাছুম
    • ►  সেপ্টেম্বর 2020 (1)
      • পাতার ডানা নাই তবুওতো উড়ে | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুলাই 2020 (1)
      • শুধু দুই লাইন | বেলায়েত মাছুম
    • ►  জুন 2020 (1)
      • মনে হয় আমি হাওয়া হয়ে যাই | বেলায়েত মাছুম
    • ►  মে 2020 (1)
      • তৃষ্ণা ও চাষের আঙ্গুল বিষয়ক কয়েকটি কবিতা | বেলায়েত...
    • ►  মার্চ 2020 (1)
      • শুন্যতা যেভাবে আমার হয় | বেলায়েত মাছুম
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2020 (2)
      • আপনাকে | বেলায়েত মাছুম
      • আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার বিষয়ে
    • ►  জানুয়ারী 2020 (1)
      • আব্বা ও আমার ঘোড়া | বেলায়েত মাছুম
  • ►  2019 (3)
    • ►  অক্টোবর 2019 (1)
    • ►  জুলাই 2019 (1)
    • ►  মে 2019 (1)
  • ►  2018 (5)
    • ►  ডিসেম্বর 2018 (1)
    • ►  জুন 2018 (1)
    • ►  মে 2018 (2)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2018 (1)
  • ►  2017 (6)
    • ►  আগস্ট 2017 (1)
    • ►  জুলাই 2017 (1)
    • ►  জুন 2017 (1)
    • ►  মার্চ 2017 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2017 (1)
    • ►  জানুয়ারী 2017 (1)
  • ►  2016 (8)
    • ►  ডিসেম্বর 2016 (3)
    • ►  জুলাই 2016 (1)
    • ►  জুন 2016 (1)
    • ►  মে 2016 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2016 (2)
  • ►  2015 (30)
    • ►  ডিসেম্বর 2015 (3)
    • ►  নভেম্বর 2015 (2)
    • ►  জুলাই 2015 (2)
    • ►  জুন 2015 (3)
    • ►  মে 2015 (7)
    • ►  এপ্রিল 2015 (6)
    • ►  মার্চ 2015 (1)
    • ►  ফেব্রুয়ারী 2015 (3)
    • ►  জানুয়ারী 2015 (3)
  • ►  2014 (8)
    • ►  নভেম্বর 2014 (4)
    • ►  অক্টোবর 2014 (4)
  • ►  2010 (17)
    • ►  আগস্ট 2010 (5)
    • ►  জুন 2010 (1)
    • ►  এপ্রিল 2010 (11)

বিষয়

অ-কথা অ-গদ্য কবিতা গান ছবি প্রেমের কবিতা ভ্রমণ English Poetry
Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.


আপনার সাহায্য পেলে বিদ্যানন্দের কাজ আরো সহজ হবে। বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

অন্যজন

  • মীর রবি
  • মুনিরা মেহেক
  • মুরাদুল ইসলাম
  • সুহান রিজওয়ান

যোগাযোগ

নাম


ইমেল *


বার্তা *


Copyright By Belayat Masum | Designed By OddThemes | Distributed By Blogger Templates