১.
এমন নরোম কোমল হাতে আপনি কারে ছুয়ে দিবেন। কারে আপনি বলবেন নিজের মতো করে- সন্ধ্যায় জ্বলা তারার কথা। অন্ধকারে একা একা যখন আপনার ছায়া আপনারে ভুলে নিরুপায় হয়- আকাশে চোখ রেখে কোথায় ঘুরে আসেন। আপনার হাতে কারে ছুয়ে দিবেন?
বলুন- হাওয়ার কাছে কে অভিযোগ করে? পাখির পালক নিয়ে কে পলাতক হয়? ঝড়ের কালে।
দুপুরের রোদে যখন ক্লান্ত ঘাসগুলো আপনার চোখের দিকে বিভোর চেয়ে থাকে- পায়ের ধুলো পেয়ে উড়তে থাকে ডানা নিয়ে; আপনার ছায়ার পিছে অবনত শিশিরগুলো ঝরতে থাকে- তখন কোথায় আগলে রাখবেন সেই অসুখি হৃদয়টাকে।
২.
আপনার বাদমী কোমল হাতে চোখ পড়লেই
দেখতে পাই একটা বক পাখি।
পড়া বিকেল জুড়ে একা-
ধীরে ধীরে সন্তর্পনে হেটে যায় সেই মাছের দিকে।
সোনালী রুপালী মাছ
জলের গভীর ছুয়ে ঘুরে বেড়ায় অনিদ্র রাত।
বকের ক্ষীণ দেহের মতো
আপনার আঙুলগুলো দুলতে থাকে
আর সোনালী ঠোঁটের আদলে মাখা
মসৃণ নখে ততমতো মাছ বিভোর নাচে।
৩.
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে; এমন কিছু দিন- রোদ আর বৃষ্টির মাঝে ভাগাভাগি করে- আমি আর কোথায় দাড়াবো। একা তারার মতো দূর থেকে শুধু ধারনা নিয়ে আপনার থেকে- আপনার ছায়ার থেকে- ছোয়ার থেকে- নিরুপায় দূরে থেকে যাবো।
ধারনা হয়- আপনার হাত সম্পর্কে আমার ভুল ধারনা আছে। এমন কথা আমি কারে আর বলি? ফুলেদের কাছে এ কথা বলতে পারিনা। আপনি বৃষ্টিতে ভিঁজে ঘরে ফিরে আসেন আর আলতো করে পশমী তোয়ালে ধরে ভেঁজা চুল শুকাতে থাকেন- দূরের তারা দূরে হাসতে থাকে।
আপনার হাত সম্পর্কে আরো ভুল ধারনা আছে- এমন কিছু কল্পনা আমি পোষী।
৪.
যেন মেঘের আঙিনায় ফুটে আছে থোকা থোকা ফুল,
ধীর সুভাস পড়ছে ছড়িয়ে সকল পথে-
নরম ঘাসের শরীরে মেঘের আলিঙ্গন।
যেন ভেঁজা দুপুর সংগোপনে ডেকে যায় তারে
আরো কাছে তার মেঘের গভীরে-
পৃথিবীর হাওয়ায় মুগ্ধ চারদিক
ঘুরোঘুরি করে ফিরে আসে মেঘের কোলে।
আর আপনার মতো কেউ, আপনার থেকে দূর
যেন হারিয়ে ফেলে পথ বিভোর অন্ধকারে।
৫.
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে-
এমন ধারণা ছিলো আমার যেন বহুকাল ধরে,
ছিলো গোপন কিছু বিলাসের রুপ-
ছিলো আলাপের অযথা খেয়াল।
ধীর নদীর মতো ভেসে ভেসে দূর-
আপনার কথা বলা যায় হাওয়ার কাছে।
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে।
বোশাখের হাওয়া, বৃষ্টির জল- মাতিয়ে রাখে আপনার পথ;
সুদূরের বনে থাকে যে পাখি
তার কথা আপনি ভাবতে পারেন।
আপনি যেন সেই পরিচিত পাখি
আমার জানালায় বসে- উড়ে যান হাওয়ায়,
যেমন বনের এক অচেনা পাতা
চেয়ে থাকে চাতকীর মতো-
আপনার দিকে- আপনার ডানার ছোয়ায়।
আপনার হাত ছোয়ার স্মৃতি ফুলেদের আছে।
৬.
পৃথিবীতে আছে এক দারুণ অসুখ
লোকে পাবে তারে একদিন নিজের করে
নিরুপায় পথ ধরে যে গিয়েছে চলে
এমন মরমে ফুল ফুটে আর ঝরে।
আগুনের মতো সে নরম তুমুল
তীব্র হাহাকারে কাঁদে মেঘের মতন
পাখির ডানায় লিখে রাখে নাম
শীতের হাওয়ায় যেমন পাতার রোদন।
লোকেরা মাতে সেই আদিম রোগে
পৃথিবীর বাগান জুড়ে ফসলের ঘ্রাণ
মনে হয় সেই ফুলেরা হাসে
বিভোর প্রেমিক যেন খুজে পায় ত্রাণ।
৭.
আপনারে আমি পাখির কথা বলি-
নরোম পালকে ঢাকা সাদা বক পাখির কথা;
তারা কেমন মৌন-
হেটে যায় একা ধীর সেই মাছের দিকে।
আপনারে সেই ফুলের কথা বলা যায়
পাতার ভাঁজে শুয়ে মনে পড়ে যার-
একদিন এমন ছিলো-
অসম প্রেমের মতো
আপনার হাত ছুয়ে- সারা দুপুর ঘুরে
নিজেরে লুকিয়ে ফেলার স্মৃতি- সন্ধ্যার আলোয়।
এমন করে হয়তো বলে ফেলা যায় আপনারে
দূর থেকে দেখা দূরের স্মৃতি
অগণন তারার ভিতর একটি যে তারা
সন্ধ্যার আলোয় মুখোমুখি হয় নিঃসঙ্গ জানালায়।
একদিন জানবেন শব্দের ভেদাভেদ
সেই একা হৃদয় নিয়ে বসবেন পুরুষ-পাথরের কাছে;
ফুলেল স্মৃতি আর নদীর ঢেউ
বলবেন তারে এক এক করে;
স্বচ্ছ কাচের ভেতর আপনার পরিচিত অবয়ব
মুখোমুখি বসে একদিন আমার কথা শোনেন—
আমি আপনারে শুধু পাখির কথা— ফুলের কথা বলি।
৮.
যেন এক রুপকথা;
ফুলের আঙিনায় বসে আছে উজ্জ্বল তারা—
পড়ছে; সকলের গোপন হয়ে— জোছনা।
পৃথিবীর উজ্জ্বল ফুলের মতন চেয়ে আছে
দূরে কোথাও; হাওয়া ছুয়ে দিলে পরে—
হৃদয়ের দুয়ার খুলে বসবে মুখোমুখি।
ঢেউয়ের ধ্বণি নিয়ে পড়ছে ছড়িয়ে
চারপাশ ঘিরে মাতোয়ারা কেউ—
আপনার চোখের বারান্ধায় বসে
কে তবে উড়ায় সে সকল ঢেউ।
তবু যেন কিছু রোদ অবহেলায় নিয়ে আসে রুপকথা—
পাখির পায়ের মতো চঞ্চল দুটি চোখ
উজ্জ্বল আলো রেখা নিয়ে উপচে পড়ে
সমুদ্রে ভেসে থাকা নাবিকের— ভাঙ্গা পাটাতেনে।
৯.
আপনার চোখের দিকে থাকিয়ে— যদি কোন প্রেমিক
পাখির ডানা নিয়ে উড়তে না পারে
যদি সে রুপকথার এক রাজকন্যা ভেবে
দৈত্যের মুখোমুখি না হয়—
যদি সে পুরুষ লোকটি নিজেকে প্রেমিক না ভাবে
আমি তারে কিছুই বলবনা।
ওল্ডহাম/২০১৯
ওল্ডহাম/২০১৯
0 মন্তব্যসমূহ