সুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন- বাংলা লোকগানের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ও শ্রোত গান। প্রায় একই সুরে গাওয়া হলেও গানের কথা দুইভাবে গাওয়া হয়। নিচে উল্লেখিত প্রথম গানটি উদ্ধার করে উস্তাদ রাম কানাই দাস সুর করেছেন বলে জানা যায়, কিন্তু দ্বিতীয় গান উস্তাদ রাম কানাই দাসের করা সুরের কাছাকাছি হলেও বলা হয় সুর প্রচলিত। আর একই গানের দুই রকম কথা কি করে হয়, অদৌ সম্ভব কিনা? শীতালং শাহ গান লিখেছেন সিলোটি নাগরীতে, তাহলে কি যারা নাগরী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন, ঠিকমত করতে পারেন নি? আমার এমনটি মনে হয়না, কারণ নাগরী খুব কঠিন ভাষা নয় আর অনুবাদে এত বেশি কথার বদল বা পুরো বাক্য বদলাতে পারেনা কারণ বাংলা আর নাগরীর শব্দের উচ্চারণ ও অর্থ প্রায় সমান।
প্রথম গানটি ওস্তাদ রাম কানাই দাস নিজে গেয়েছেন এবং সুর যে নিজেই করেছেন তা শুনলেই বুঝা যায়, সুরে উনার নিজস্বতা আছে। আর দ্বিতীয় গান জনপ্রিয় করার পিছনে ভারতের গানের দল দোহার'র অবদান বেশি। তারা গান
ভাল
করেন, এতে কোন সন্দেহ নাই, তবে আমার মনে হয় তারা নিজেদের জন্য সুরকে পরিমার্জন, পরিবর্তন করার পাশাপাশি অনেক সময় গানের কথারও পরিবর্তন করে থাকেন, কিন্তু এত বেশি অমিল হওয়ার কথা না।
উস্তাদ রাম কানাই দাস ও দোহার যদি শীতালং শাহ'র লেখা পান্ডুলিপি থেকে গানটি উদ্ধার করেই থাকেন, দু'রকম হয় কি করে?
এই লিখাটা প্রায় এক বছর আগে লেখা, ভেবেছিলাম দোহার গানের দলের প্রাণ কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যকে এ বিষয়ে জিগ্যেস করবো। তিনি গত ৭ মার্চ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর জিগ্যেস করা হলোনা। আর ওস্তাদ রাম কানাই দাসকে জিগ্যেস করার সুযোগও নাই, তিনি আরো আগেই প্রয়াত।
কালিকাপ্রসাদ ছিলেন সংগীতের সেতু, দুই বাংলায়।
বাংলায় এমন আরো প্রচলিত গান আছে যা একই সুরে গাওয়া হলেও কথা ভিন্ন, দেশের অনেক গুণি শিল্পী যাচাই না করেই প্রচলিত গান গুলো গাচ্ছেন। একেক জন একেক ভাবে গাচ্ছেন আর গানের কথা, সুর বদলে যাচ্ছে, এতে গানের প্রতি তাদের অবহেলাই প্রকাশ পায়।
১.
সুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন সুয়া উড়িলরে
আরলা মুকামে ছিলায় আনন্দিত মন
ভবে আসি পিন্জুরাতে হইলায় বন্ধন
নিদয়া নিষ্ঠুরও পাখি দয়া নাইরে তোর
পাষাণও সমানও হিয়া কঠিনও অন্তর
পিন্জুরায় থাকিয়া করলায় প্রেমেরও সাধন
পিন্জুরা ছাড়িয়া যাইতে না লাগে বেদন
শীতালং ফকিরে কইন দম কর সাধন
দমের ভিতর আছে পাখি করিও যতন
২.
সুয়া উড়িলো উড়িলো
জীবেরও জীবন
সুয়া উড়িলো রে
লা-মোকামে ছিলাই সুয়া
আনন্দিত মন,
ভবে আসি পিঞ্জিরাতে
হইলা বন্ধন
পিঞ্জিরা থাকিয়া কইরলায়
প্রেমেরও সাধন,
এখন ছাড়িয়া যাইতে
না লাগে বেদন
তুমি নিজ দেশে যাইবে পাখি
ফুরিলে মেয়াদ
তোমার পিঞ্জিরা রহিবে খালি
হইয়া বরবাদ
লা-মোকামে যাওরে পাখী
করিয়া গমন,
হায়রে পিঞ্জিরা যে কান্দে তোর
প্রেমেরও কারণ
শোনো শীতালং ফকিরে বলে
মনে আলাপন
আরে যাওয়ার সময়
যাও পাঙ্খি দিয়া দরশন
© বেলায়েত মাছুম
ওল্ডহাম
১৫ চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
১.
সুয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন সুয়া উড়িলরে
ভবে আসি পিন্জুরাতে হইলায় বন্ধন
পাষাণও সমানও হিয়া কঠিনও অন্তর
পিন্জুরা ছাড়িয়া যাইতে না লাগে বেদন
দমের ভিতর আছে পাখি করিও যতন
সুয়া উড়িলো উড়িলো
জীবেরও জীবন
সুয়া উড়িলো রে
আনন্দিত মন,
ভবে আসি পিঞ্জিরাতে
হইলা বন্ধন
প্রেমেরও সাধন,
এখন ছাড়িয়া যাইতে
না লাগে বেদন
ফুরিলে মেয়াদ
তোমার পিঞ্জিরা রহিবে খালি
হইয়া বরবাদ
করিয়া গমন,
হায়রে পিঞ্জিরা যে কান্দে তোর
প্রেমেরও কারণ
মনে আলাপন
আরে যাওয়ার সময়
যাও পাঙ্খি দিয়া দরশন
© বেলায়েত মাছুম
ওল্ডহাম
১৫ চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
0 মন্তব্যসমূহ