ক
৬.
গত হয় জাবরের দিন। ক্ষীণ ক্ষীণ তবু কিছু আলো।
তবু সন্ধ্যার থেকে দূর— নদীর কিনার। এক পরম চাষি।
ভোরের মতোন। তার রাঙা সেতার— আমারে ডাকে।
আমার ফুরায় দিন। দেয়ালে চোখ, ব্যস্ত নাবিক।
যায় ভোরের পাশে। ঘাসের উপর- সেই জোড়া পা।
ছায়ার মতোন এক পর ভাবা তুমি। অকাল নদী।
আমারে ডাকে- কোথায় সে ঘর? সহজ ভাবে।
৮.
আর কিছু তৎপর ঢেউ— ঘুম ঘুম আলো;
আর কিছু সহজ শব্দ— পুরনো ঘর— আলনা-বাড়ি,
কিছু সবুজ ঘাস, দূরে রংধনু আঁকা।
ভাবা যায় শবঘর সেই
অনুরোধে গান, নরোম কোমল ফুল;
ভাবা যায় উৎসব শেষ
জলের ভেতর মীন আর শুশুকের দল।
তবু এক নীড়— চারদিক ডাকে
তবু দিন যায়; বরফ গলে— ফাগুন আসে
তুমুল রোদ— পায়ের কাছে অবনত রয়।
১০.
ঘর তবু ফিরে ফিরে আসে। কিনারে ঢেউ
এই সেই নদী তীর— ডাকে নামটি ধরে—
দূর কোথায়, দুর। বাজায় আবার সেই সন্ধ্যায়
অবিকল ছায়া নিয়ে— নামতে থাকে পরিচিত পাড়ায়।
আমার তবু হয়না ঘর, পড়শীর কাছে এই অজুহাত—
বারেবার তবু সে ঘর, দূরে চলে যায়
পরিচিত সব মুখ নিয়ে,
চলে যায় সে—
ফুলের বাগান থেকে— যেন ডাকে সুরালয়—
যেন পাথুরে সোহাগ মাখা—
সেই ঘর ফের, মালীর তরফ নিয়ে
আমার দুয়ারে বসে; বাজায় সেতার।
পড়শীর আছে পুরনো দুয়ার— আছে তৎপর হাওয়া
সুরের ঘুঙুর ভাঙছে কোথাও ভাবি
আগুনের ঠোঁট যেন তথমতো— পার হয় পুরনো মোমকল;
পাতানো দলিল নিয়ে সেই— দাড়ালো রুপকথার কেউ
ঘরের পরে আছে পড়শী; আছে নদী আর— আর ঢেউ।
পর ভাবা তারা; দূরের মতো অ-দৃশ্য যেন;
পৃথিবীর উজ্জ্বল এক মাছের কানে— পড়শী কথা বলে
কার কথা, কে শুনতে যায়— নিয়ত বধির হয়ে।
১২.
আর দূর থাকা তারা, আর সন্ধ্যার গান
এমন হয়— মুখর হাওয়ায় সেই দাড়ানো কেউ
প্লাবিত সন্ধ্যার রাগে।
যেমন ঘোর, সব অতীত দিন
দরজায় কড়া— যেন কেউ দূরগামী হাওয়া
যেন ঘাসের উপর আলো আর আলো
পুড়তে রয়
সকলের থেকে উজ্জ্বল—
বিকালের প্রান্ত ছুয়ে, আমার গোপন নিয়ে
মোমবতী সেই গাছের তলে।
আর, আর ফুল
পাখীর ডানায়— বাতাসের গন্ধ নিয়ে
সুরারূপ ধরে।
১৫.
হাওয়া কার চোখ নিয়ে উড়ে? কত দূর যায়।
হতাহত ফুল ভোরের কোলে
ফিরে আসে পুরনো সংবাদ— পুরনো দস্তাবেজ ঘিরে
আহত ফুলের কলি যেনোতেনো রোদে
বাঁধে সংসার— ধুলোর তদবির নিয়ে মদাসক্ত হাওয়ায়
সেই পুরনো দাবী— সেই জোড়া চোখ গুম হওয়া থেকে
দারুণ ভানে— এই হতাহতের দিন
যে হাওয়া পলাতক হয়, বাঁধেনা ঘর পৃথিবীর 'পরে
তার থেকে দূরে আছে ফুল, গাছের কংকাল
সৎকার নিয়ে মেতে আছে লোক;
বনের ভেতর থেকে শব্দের ঢেউ কারে মাতায়
কেউ কেউ ঘোরে মাতম যদি—
এই ফুল ঝরে, হাওয়ার নিচে— বধির আমি
কলতান থামে, জোড়া চোখ, হাওয়ার কোলে
এতদিন ফুরায় তবু ফুলের নীড়ে
নেই কোন ঘর— নেই উৎসব তেমন কোন
রাতের পাড়ায়।
হাওয়া, পৃথিবী ঘুরে ফুলেদের পায় তবু হয় না ঘর
যেন মরুধুলো সেই, যেন আমাদের উৎসব শেষ।
খ
২.
আমি— আমারে বলতে থাকি
দুপুরের বয়ান,
হাওয়ার শব্দের মতো দূর থেকে এসে
নিজেরে নিয়ে পলাতক হই।
আমি— আমার চোখের পাতার আড়ালে
ঘুম-ঘোর পতাকা উড়াই।
৬.
কিছু ফুলের কাকলী বাজে দূরে
কিছু শব্দের সৎকার নিয়ে—
আর গৃহবন্ধ সুরভীর সন্ধানে
নিকটে মগ্ন থাকে সেই দূরগামী পাখী
আলোকের কাছে আমার স্মৃতি জমা রাখি
দেয়ালের পরত জুড়ে—
সেই ফুল চেয়ে থাকে চাতকের চোখে
ঝড়ের আগাম সংবাদবাহী হাওয়ায়—
৮.
যেন কপালে ফুটে আছে ফুল— যেন নদীর পরে
আকাশের গতর জুড়ে যেন ফুটে আছে আরো একতিল ঝড়।
আরো সুভাস উড়ে, নিমের বহর মেখে চৌদিক উজাড় করে
নেমে আসে চোখের পাতার কাছে—
পায়ের নখের কাছে—
অতল সেই সমুদ্রের মতোন তুমুল জলরাশি-ঢেউ।
১০.
এমন মোম
ঝরে যায় কেবল
আগুনের কোলে
ঝড়ের আগে—
পুড়ানো খাঁচায়
যেন অস্থির পাখী
যেন তুমুল সোহাগে
সেই আগুনের কাছে
ওৎপেতে রয়—
পুরনো রাতে
আগেকার সন্ধ্যা
মোম সে—
ক্ষয়ে ক্ষয়ে উড়ে
আর মোমের শরীর
এক আগুনের ফুল—
তারাদের কাছে
ফুটে সে রয়
ঝড়ের রাতে
১২.
আমি যেন সেই হাওয়া
যেন কোন এক নারীর
কোমল হাতের নিচে
দাড়াই—
যেন আমি ঝরে যেতে পারি
তুমুল ঝড়ের সময়
কোন কোন জানালায়
নিজের মতো করে—
সেই দিন সেই রাত নাই
যখন পাখীদের পানশালায়
আমি এক নবিশ—
জোড়া চোখে দারুন ঘুম
তবু কিছু আলো
কিছু অন্ধকার
আমায় নিয়ে মেতে আছে যেন—
সেই হাওয়া
ঝড়ের সময়
মুখোমুখি বসি
শোনায় কথা
মনে হয় দূর
মনে হয় নারী
আমি এক লোক
বাসি দিন যায়
আঙ্গুল গুণে
পাখীদের পানশালায় যেন
আমি সেই লোক
বসে বসে ভাবি, যদি একদিন
হারাই ডানা—
কবিতার বই পাখীদের পানাশালায় পাওয়া যাচ্ছে ই-বই আকারে গুগল বুক্স, অ্যাপল বুক্স সহ আরও কিছু ই-বুক স্টোরে।
0 মন্তব্যসমূহ