বিভাজিত শব্দের সময় | বেলায়েত মাছুম




২০১০ সাল, আমার কবিতার জন্য ছিল দারুণ সময়। প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখতাম আর সামহয়্যার ইন  ব্লগে প্রকাশ করতাম। আমার কবিতার পাঠক তেমন ছিলনা, হাতে গোনা মাত্র। তবুও আমার খারপ লাগত না। কারণ আমি সব সময় চেয়েছি আমার কবিতার পাঠক কম হোক এবং এখনো আমি তেমনই চাই। এমনকি আমার বনধুরাও আমার লেখার পাঠক নয়। অনেক বনধুই জানেনা যে আমি লিখি। আমার ভাল লাগে এই রকম আড়াল থাকা। 

সেই সময়ের কিছু কবিতা এখানে, যেগুলো আমার কাছে খারাপ লাগেনা। ভাবছিলাম সম্পাদন করব কিনতু সেই সময়ের ভাষা ও শব্দের খেই আর পাচ্ছিনা। এখন যা লিখছি সম্পূর্ণ আলাদা।


শব্দে জাগেনা পাথর

শব্দে জাগেনা পাথর
তবু ঝর্ণার পানি ছল ছল করে
ডেকে যায় নিরবধী।
জাগায় উষ্ণতা সূর্যের উত্তাপ
উর্বর ঠোটের মতো ।
নেমে আসে পাহাড়ী ঢল
তার এলোচুল,আভায়িত মুখ
প্লাবিত করে বক্ষ সমতল।
প্রাচীন কবির মত বিভোর
ঘাস ফুল শিশিরের সাথে কথা বলা
নির্জলা নদী বয়ে চলে অবিরাম
পাহাড়ের ধার ঘেসে।



বিভাজিত শব্দে

বিভাজিত শব্দে কান পেতে রই
যদি শুনি আবার,
আমার যে শুনতে ইচ্ছে হয়।
নির্জন কোথাও কথা বলা
দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়,
স্তব্ধ পাথরে আগলে বুক
শাসন করি দীর্ঘশ্বাস।
কোথাও কোন শব্দে চমকে উঠে
বাতাসে জানালার পর্দা নড়ে,
বুঝি ছায়া মুখ আসবে হঠাৎ
কাঁপিয়ে দিবে বুকটা পাষাণ।
শব্দের ভিতর শব্দ খুজি
শব্দ দিয়ে তোমার কথা
আমি কি আর তেমন বুঝি।



হঠাৎ কোথাও হতে

হঠাৎ কোথাও হতে আসি আমরা
জোনাকি পোকার মত কিংবা
তারার দেশ হতে রূপালী রাতের উপর
পা রাখি নির্বার উচ্ছাসে।
যখনই প্রশ্ন জাগে,রাতের নির্জনতা ভেঙ্গে
জানালার পর্দা তুলে দাড়াবো আমরা
দেখবো একটা চাঁদ,
কয়েকটা জোনাকি পোকা,
বিচ্ছিন্ন তারা গুলো আর কুয়াশা ভেঁজা ঘাস।
হয়তো আবার আমরা ভাববো-
স্মৃতির পিঠে চড়ে কৈশোর ঘুরে
কখনো বুঝিনি যার মানে,
হঠাৎ স্পর্শে জেগে উঠা এবং
রাত পাড় করে দেয়া।




হয়তো আরো একদিন 

হয়তো আরো একদিন গাইবো পাহাড়ী গান
বেসে যাবো জোয়ারে
ঝরা ফুলের মতো।
নি:সঙ্গ পাথরের সাথে হবে মিতালী
বলব কথা ঢেউয়ের সাথে,
শ্যাওলা কান পেতে রবে বন্ধুর মতো।
কারো জন্য অপেক্ষা নয়
নেই কোন প্রশ্ন- হুংকার
নেই ভয়,নেই প্রশ্রয়
আছে শুধু একধরনের অহংকার।



বিমুগ্ধ সোডিয়াম বাতির পাশে

বিমুগ্ধ সোডিয়াম বাতির পাশে
চমকানো চোখ, বুজে যায় এক সময়
মনে হয় ভোর হলো নির্লজ্জ রাতের।
ফিরবো বলে পথে
কতক্ষণ হাটলে ফেরা হয় জানি নে-
হয়তো ফুল গুলো সব ধ্রুব
কিংবা ঝরে শুকিয়ে হয়ে গেছে কঙ্কাল।
ফিরবো জানি-
ফেরার পথেই হাটছি,বহুপথ বন্ধুর
ঘাসফুল জঙ্গল,কান্তিহীন নির্ঘুম
জোনাকি পোকার মতোই।
হয়তো দু’একটা গাঙচিল জানাবে অভ্যর্থনা
কিংবা কোকিল উড়ে যাবে কাঁঠাল পাতায়,
নির্বোধ একা হেটে কতক্ষণ
পৌছে যাবো ফেরার ভিতর।



আমার বক্ষ সমতলে 

আমার বক্ষ সমতলে যে প্লাবন-
অনাবৃষ্টি যে ছিল কতকাল
কত পার্বণ বৈশাখ পেরিয়ে এসেছে এক আষাঢ়,
যখন ভিজব বলে বাড়িয়ে দেই হাত
ছুয়ে দেয় কোমল শীতলতা।
অবাক অপলক চোখ
খুজে ফিরে প্রার্থনা-
বাম পাশে যেখানে হৃদয় আছে
যেখানে স্পর্শে কাঁপন জাগে
হঠাৎ মনে হয় আর কিছু নেই
খুজে পায় অচিন জড়তা।
প্রাচীন কোন দেয়ালে পিঠ ঠেকে
শ্যাওলা বাড়িয়ে দেয় হাত,
ইটের ভাঁজগুলো কথা কয়
বাতাসে বাতাসে করে মাতামাতি
শুধু আমার মাঝে কোন্ এক নীরবতা।





অত:পর নির্লজ্জের মতো

অত:পর নির্লজ্জের মতো ডুবে থাকি
জানালার ফাঁক দিয়ে কুয়াশার ভিতর।
হেটে হেটে অনেক্ষণ কথা হয়
কুমারী রাতের সাথে,
যে এখনো হাসেনি চাঁদের আলোয়।
দূর্বার ঘাতকের বেশে
কিংবা কাঁটা ফুল দু’হাতে নিয়ে
অনেক্ষণ ধরে বসে থাকা,
বসে থাকা কথার ভিতর
মূহুর্তের কথায়,ব্যাথা বিলাসের কথায়,
তবুও নির্লজ্জের মতো ডুবতে থাকি
অহম ও বিভবের ভিতর।



বিচ্যুত পাথরের জলে 

বিচ্যুত পাথরের জলে পড়া শব্দ
নিখুত দেয়াল গাথুনির মতো
উতলে জেগে উঠা জোয়ার পানি
মনে হয় এক্ষুনি নামবে বৃষ্টি-
কিংবা জোছনা-জোনাকি আলোয়
করবো আরো একবার স্নান।
সূর্যের উত্তাপে বরফ গলেনা
তবু গলে,ঝরে,বেড়ে যায় পৃথিবীর তাপ।
হয়তো পৃথিবীতে গল্প হবে
এখানে একদিন ছিল সবুজ-পাখী
হতো গান,উল্লাস সংঘাত,প্রতিঘাত।



বয়সী পিতার চোখ

এ এমন এক গোধূলি
সূর্য অস্ত যাবে বলে বসে থাকি,
কেবল এক দূরন্ত মনের ভিতর হেটে
অবস বসে থাকা ইট গাথুনির উপর,
সেই কবে শেষ উর্বর জমির বুকে চাষ
কিংবা জোড়া বলদ ডেকে যাওয়া নিরন্তর,
আজ আর কিছুই করার নেই
বুকে পাথরের মতো চাপা স্বর কথা কয়
সময় দিয়েছে অবসর,
দু’হাত ভরে গোধূলী আলো
ঝাপসা চোখে করে খেলা,
সুদীর্ঘ পথ বালুময়
একটু পরেই নামবে সূর্য
আর ধরতে যাবেনা কেউ
শব্দের ভিতর একা বসে থেকে
প্রহর গুণে বয়সী পিতার চোখ।







এবং যাপন করি বিলাস আর অহম সহ

আমার সমাজ অন্য পৃথিবীর
এখানে বিশ্বাস মর্মর পাতা,
আর আমি অথিতি ডাকাত
দরজা দিয়ে ঢুকে, জানালায় পালাই।
সমুদ্রে নামি খেলতে ডুব সাঁতার
আর চাঁদের বুকে কলঙ্ক আঁকি প্রতিদিন।
স্বপ্নে আনতে চাই অথৈ বিভব
কল্পনা পালিয়ে বেড়ায় চশমার ফাঁকে,
প্রতিনিয়ত আমরা দংশিত হই
লাল-নীল আলো খেলা করে আমাদের চোখে,
সে চোখ গাঁথা থাকে আকাশ নীলে
এবং যাপন করি বিলাস আর অহম সহ।



অত:পর আমরা ফিরে আসি

অত:পর আমরা ফিরে আসি কথোপোকথনে
নিজেদের মধ্যে, যেখানে ছিল
সমুদ্র নীল জলরাশি, একঝাক চিল।
স্বপ্নের ভিতর হেটে ক্লান্ত হইনা
মগ্ন থাকি মাছরাঙার মতো,
তবুও আমরা গল্প থেকে গল্পে
বেড়িয়ে আসি অনাহুত জীবনের দেশে।
আমাদের চোখ সতেজ সরল
ভাবনা গুলো সূর্যের প্রখরতা ধরে
চাঁদের আলোয় অন্ধকার ভাঙ্গি,
জোনাক ধরি হাতের মুঠোয়
ফুলের সুভাসে আমরা বিমুগ্ধ কবি
এবং নির্জনতাকে হারিয়ে ফেলি যাপিত শব্দে।




ছবি:  @carasometimes