![]() |
মায়া, মাছি ও বেনফরমসো |
আজ ১লা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। আরেকটি বৈশাখ পৃথিবীর কোথাও কেটে যাচ্ছে আমার। শহরের ব্যস্ত ঘড়িদের মতো আমিও দৌড়াচ্ছি।
ধুরুম ধুরুম, মেট্রো চলছে।
নানা রঙের মানুষ
নানা রঙের কাপড়।
কেউ এসেছে বাকু থেকে
কেউ আমস্টারডাম,
কেউ কোথাও যাচ্ছে না
থাকিয়ে আছে পুরনো মেট্রোর দিকে।
আমার পথ চলে গেছে ঘরের দিকে।
২.
ব্যথা ভুলে যেতে পারি।
কিন্তু দাঁত-
ব্যথা ভুলে যেতে দিচ্ছে না।
এদিক ওদিক তাকাই
মানুষের সংগ দেখি-
বাড়ি ফিরে যেতে যেতে।
কথার ফাঁকে কথা কোথায় চলে যায়
কিন্তু ব্যথা
দাতের সাথে সংসার পেতে আছে।
ব্যথা ভুলে যেতে পারি
কিন্তু ভুলে গেলে মনে পড়বে কেমনে?
৩.
সেলুনে চুল কাটা গেল
এখন মাথায় ছোট ছোট চুল।
ঘরে ফিরে যাবো
উষ্ণ পানিতে গোছল করা হবে।
৫ ইউরো পকেট থেকে কাটা
হিসেবের গড়মিল নাই।
অংকে বরাবরই কাঁচা।
প্রতিদিনই কোথাও যাবো ভাবি
গন্তব্য উধাও হয়ে আছে।
নুরেন ক্যাফেতে বসে চা পান করি
এদিক ওদিক হেটে ঘরে ফিরে আসি।
৪.
ফোনে নেট নাই আর পকেটে টাকা।
মেট্রোর টিকেট করা আছে
উঠে বসে থাকি।
তাজমহল রেস্তোরায় দুইবেলা খাওয়া
খাওয়া ধাওয়া শেষে বিড়ি ধরাই।
আমাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না
এমন সংবাদ টিভিতে নাই।
হারানোর পরও ঘরে ফিরে আসি
উৎসবে নিজেকে আগলে রাখি।
৫.
আমি বসে আছি।
রাস্তায় দু'টো কুকুর গলাগলি করে হাটছে।
গলির ভিতর পানের দোকান।
পান খেতে খেতে পিক ছুড়ে মারছে কেউ।
ট্রাফিক জ্যামের মতো লোকজন জড়ো হয়ে আছে
কার বাড়ি কোথায়?
কেউ সিলেট থেকে
কেউ কুমিল্লা, মাদারীপুর থেকে।
কেউ হয়তো চট্টগ্রাম
পান্জাব, করাচি, কাবুলের গন্ধ নিয়ে
এই বেনফরমসো
এই লিসবন শহরের ভাঙ্গা ইঠের রাস্তায় হাটছে।
সার্বিয়ার জঙ্গল বেশি দূরে নাই
কথার স্মৃতি হয়ে হাওয়া ছুটে যাচ্ছে।
৬.
হাটতে হাটতে গলি থেকে
বের হয়ে আসি
সিগারেট হাতে জ্বলতে
থাকে।
আমি যেন পরিযায়ি পাখি
পথ হারিয়ে ফেলে পথেই
হাটছি।
সিগারেট হাতে জ্বলতে থাকে।
আমি যেন পরিযায়ি পাখি
পথ হারিয়ে ফেলে পথেই হাটছি।
পাশের মানুষেরা হাটতে হাটতে কোথায় যায়?
তারাও কি আমার মতো কোথাও যায়
কোন ঘর?
কোন পানশালার দিকে?
হাসির শব্দ শুনি
আর কাউকে কাঁদতে দেখলে
কান্না এড়াতে পালিয়ে বেড়াই।
৭.
কমলারা যেন আমার দিকেই তাকিয়ে আছে
আমিও তাকিয়ে আছি,
হলুদ হলুদ কমলা
আমাদের মধ্যে কোন কথা হচ্ছে না।
শব্দের বিলাস ঘিরে আছে ঠোঁট
আমি কোথায় যাবো?
এই বেনফরমসো
এই রোয়া মৌরারিয়া ঘুরে
এই কমলা গাছের নিছে দাড়াই।
আমার দিকে তাকিয়ে আছে কমলারা
সকল সংশয় দূরে রেখে
চোখের উপর ঘুমিয়ে পড়ছে চোখ।
৮.
আবার সমুদ্র দেখতে এলাম একা।
রোদের ভেতর বসে থাকলাম
আর ঠান্ডা হাওয়া আমার কান ছুঁয়ে গেল।
যদিও সমুদ্রের দিকে থাকিয়ে আছি চশমা পরে
জলের গভীরে মাছের সংসার দেখি।
চারপাশে অসংখ্য মানুষ
পৃথিবী ঘুরতে এসে আমার সামনে দাড়ায়।
দেখছি কয়েকটা পুতুল
হাত নাড়তে নাড়তে উড়ে যাচ্ছে হাওয়ায়।
পথ থেকে পথে ছুঠে যাই,
ছোট ছোট জাহাজে চড়ে বসি,
গোপনে কত কত নদী ভ্রমণ করি
আর নিজের আস্তিন ছিড়ে
নিজের গৃহ পথ ভুলে
আবার সমুদ্র দেখতে আসি।
একা একা সমুদ্র ফুরিয়ে যাচ্ছে
আমার ভেতর।
৯.
বাতাসে লুঙ্গিগুলো উড়ছে
বেনফরমসো জুড়ে মনোরম রোদ,
আজ শুক্রবার
আর আকশটা সাদা মেঘে সেঁজে আছে।
জু'মার জন্য কয়েকশো পুরুষের কাতার
বকবক আওয়াজ হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে।
আমার নতুন চুলকাটা মাথা
রোদের তেজে ঘেমে উঠছি।
নামাজ শেষে আবার ফিরে যাবো কারসাজিতে
বানোয়াট যাপনে ডুবে যেতে থাকবো।
মুখগুলো বন্ধ হচ্ছে না শুধু
একটা কালো ট্যাক্সি চলে গেল আমায় না নিয়ে।
বেনফরমসোর বেলকনিতে মেতে আছে লুঙ্গি
আমিই কেবল উড়তে চেয়ে
দাড়িয়ে আছি রাস্তায়।
১০.
আরেকটা মাছির সাথে দেখা হলো
চিনতে পারলাম না,
কোন কথাও হলো না।
তবু আমার হাত ছুঠে গেল তার দিকে
অনেক চেষ্টা করে একবার ছুতে পারলাম শুধু।
আমার চারদিকে মাছিটি উড়ছে
ভনভন ভনভন
এই সুরে আমি মুগ্ধ হতে পারছি না
গানটি শুনতে থাকলাম,
মাছিটা ক্লান্ত হচ্ছে না।
দুপুরে উষ্ণ রোদ শেষ হয়ে যাচ্ছে
মাছি ও আমি যার যার পথে চলে যাব,
আমার একটি ঘর আছে
ফেরার তাড়া নাই মাছিটির মতো
তবু কেন এত ছটফট করছি।
লিসবন
0 মন্তব্যসমূহ