আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে | বেলায়েত মাছুম - বেলায়েত মাছুম আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে | বেলায়েত মাছুম

আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে | বেলায়েত মাছুম

About our long interview by Belayat Masum
ডিজিটাল আর্ট: বেলায়েত মাছুম


বইমেলা ২০১৯ এ আমার একমাত্র বই আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে প্রকাশ হয়। আর কোনো বই হয়তো প্রকাশ হবে না। হয়তো হবে। ঠিক জানি না। তাই বইয়ের সকল কবিতা একসাথে পোস্ট দিলাম।   



ফেরা না ফেরার ঘর

ঘর থেকে বের হলেই মনে হয় ফিরে যাই
ঘরে ঢুকলেই মনে হয় বেড়িয়ে পড়ি-

বের হলেই কোথাও না কোথাও ফিরব-
ঘরে কিংবা বাড়িতে,
অথচ ফিরলে আর কোথাও যাবার নেই।

ফিরে যেতে হবে বলেই বের হই
কিংবা কোথাও যাবার নেই বলেই ফিরি।

ওল্ডহাম
০৩/০৫/২০১৬



সময়

শোনা যায় ঘরে পোষা ডাহুকের গান, পতিত বিলের
পাড়ে বসে এক সন্ধ্যায়; নিয়ত ফেরার ঘোরে ডাহুক
বাঁজায় পুরাতন মন্দিরায় সেই মনলোভা আওয়াজ।
ঘরের দেয়াল জানে কত কাছাকাছি বুক পেতে রয়
পুরাতন ঘড়ির ভিতর এক কলের হৃদয়, শুনা যায় শুধু
দরিয়ায় গান, পলকে মুছে যায় মনোহরি কারুকাজ।

ওল্ডহাম
২০/১০/২০১৬



কোথাও কোন প্রতিচ্ছবি নেই

কোথাও কোন প্রতিচ্ছবি নেই, না আয়নায়, না জলে
তবু জানালার পর্দা ভেদ করে একটা অগোছালো বিম্ব
ঢুকে পড়ে। কোথাও যাবার নেই, তাই ঘুমিয়ে পড়ি আমাদের
ভেতর, ঠোঁটের কাছে বক্রাকার ঘুরি পৃথিবীর মতো একই জায়গায়।


সেই সব বিছানাপাতি আমাদের ছিল না,
আমরা আমাদের ছিলাম কি না জানিনা।
তবু জেগে উঠে দেখি, জেগে আছে চোখ,
এই অন্ধকারে নিজেদের উপর। নিজেরা গল্প করি নিজেদের।


আহা! এত সুর কোথা হতে এলো,
এই চুলগুলো এমন কেন
এমন ধূসর রঙ এই খয়েরী আলোয়?


এত অশ্লীল মুগ্ধতায় ভিঁজে নিজেদের গিলি
চিনব বলে আঙুলগুলো চিবিয়ে দেখি
জেগে আছি তাই চোখের উপর নেমে আসি।

ওল্ডহাম
০৯/০২/২০১৫




আয়না কিংবা আমরা

আমরা প্রতিদিন আয়নার কথা ভাবি, দাড়িয়ে মুখোমুখি
চোখের উপর চোখ রেখে ভাবতে থাকি- আমাদের কথা
কোনদিন সমুদ্রের পাড়ে বসে কথা হয়নি- হয়নি কোন গান
আমরা- আমাদের কথা ভাবতে গিয়ে আয়নার কথা ভাবি;


আরো একদিন আয়নায় চোখের উপর চোখ রেখে-
বেশ করে আঁকিয়ে আনলে আলো। ঠোঁটের রঙে গ্রস্ত
ছায়ায় ডুবালে অন্ধকার যত- ডুবতে ডুবতে একটা চাঁদ
আমাদের ছবি তুলতে গিয়ে আয়নায় দেখল তুমি আর আমি।


আমরা আবারো আয়নার কথা ভাবি, দু'জন দু'দিক হতে-
সমুদ্রে যেমন শৈবাল ঘুমিয়ে থাকে কোমল জলের বুকে
সেও আর কতকাল ঢেউয়ের চুমোয় আলসে রোগে ভুগে
জল আর ঢেউ জড়িয়ে পরস্পর সেই আয়নার কথা ভাবে।

ওল্ডহাম
০২/০৯/২০১৫




এই বুড়ো সকালে

এই বুড়ো সকালে রাতের গল্প থামে
মোরগের ঠোঁটে নেমে আসে অবাক সূর্য্য;
মৃত পাখির পালক ছড়াতে ছড়াতে আমাদের উঠোন
পেরিয়ে গেলে- এই বুড়ো সকালে
গাভীর ওলান হতে পবিত্র উষ্ণতা ডাকে।


আমাদের গ্রামে এখন তুমুল বর্ষা-
হিজল ফলের মতো মানুষ
আর মানুষের মত প্রেম করে বেড়ায়
রাতের গল্পে ডুবা অন্ধ বাদুর।


সারারাত গল্প শেষে জেগে উঠে চোখ
প্রেমিকার হাতের মতো মলিন ধূসর চোখ।

ওল্ডহাম
২৯/০৮/২০১৫



হত্যাংক

তোমাকে হত্যা করার আগেই আমার মৃত্যু হয়
মরার আগে বুঝেছিলে কি মৃত আমি
মৃতদের কথা বলতে নেই, তাই মরে যাই।


আমাকে হত্যা করার আগেই তোমার মৃত্যু হয়
মরার আগে জেনেছিলাম কি মৃত তুমি
মৃতদের চোখে দেখতে নেই, তাই এমন হয়।


আমাদের মরতে হয় বলে বেঁচে আছি
আর মৃতদের কোন প্রান নাই - মৃত্যু নাই।

ওল্ডহাম
১৬/০২/২০১৫




নৈশ সভা

নৈশ সভায় কোন গল্প হয় না
পরস্পরের খোঁজ-খবর কিংবা পাখির কথা;
নিশিতে যে ডেকে উঠে জানালার পাশে
ঘাস কাটা যন্ত্রের শব্দ নিয়ে-
তার কথা কোন দিন আমরা বলবনা।


সভার টেবিলে আঁকা ড্রাগন ট্যাটু
সূর্যের লালা নিয়ে নিবিষ্ট প্রার্থনায়;
সভা ঘরে জানালা ছিল না এবং কোন শব্দ।


রাত নেমে এলে বসে থাকি
শৈশব নিয়ে;
বারুদের গন্ধে
পিপাসা ও ক্ষুধায় মজে শুয়ে থাকি
সভা শেষে- ত্রাণের আশায়।

ওল্ডহাম
২৯/০৬/২০১৫


গ্রস্ত-দশা

আমাদের হাতে সময় ছিল
ঠোঁটের পাশে দাড়িয়ে কথা বলার
জোনাকিদের আড়াল করে গ্রীবার কাছে।
লাঠি খেলা ময়দানে আমরা ছিলাম না-
ধুলোর ভেতর হতে তার নাক উকি দিয়ে বলল
ও হে কুমার- জল ঢাল না কেন,
তুমি কারিগর হও চন্দ্র গৃহের
আর আমায় নিষ্পত্তি দাও
আমি ভিঁজতে চাই আরো পরিপাটি হয়ে।


আমার কথা বলা চোখ জেগে থাকে
সূর্যের দিকে নত হয়ে


নদীতে ঢেউ জাগে, সমুদ্রে
আমরা ভেসে বেড়াই
সন্ধ্যা যেমন নেমে আসে বিকেলের কোলে
বসি থাকি আঁধার হয়ে চন্দ্র গৃহে।

ওল্ডহাম
১৭/০৪/২০১৫



প্রাপ্তি

বাঁশিওয়লা শহরের ঘরে ফিরে আসেন, রোদ মাখা জানালায় চোখ
রেখে এঁটো বাসন পত্রের কথা ভুলে যান। এই রুপ তার গত দিন গেল- শহরের আস্তিনে লুকিয়ে পান করেন সমুদ্র ঝড়। আয়নায় চোখে চোখ রেখে ক্রমশ ডুবে যানসুন্দরী আলেয়ার ঠোঁটের খাঁদে।

বোতল ভর্তি পানিযাজীকার লাল চোখে সুপ্ত রমণীয় আভা
আধেক দিন যায় রোপন কাজে, সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা লবণ চাষির
গন্ধ মাখা শরীরের খুঁজে নেমে আসেন পাহাড়িকা ট্রেনে চড়ে।

জানালায় গলে পড়ে আঁধারসন্ধ্যার পাখিদের কাছে পৌছে যাযাবর চিঠি।প্রেরকের ঠিকানায় আঁকা থাকে বৃদ্ধা গণিকারকনিষ্ঠা আঙ্গুলের
অস্পষ্ট ছাপ। কেউ তার নাম জানেনা, যদিও বহুনামে অনেকেই চিনে।ক্রমশ নিজের ছায়ার ভেতর, ক্রমশ নিজের কাছে নতজানু হয়ে-একদিন মুখোমুখি প্রার্থনায় বসে।

ওল্ডহাম
০৮/০১/২০১৫




পতন সংক্রান্ত

আমাদের পাড়ায় কোন মদের দোকান নাই অথচ নিজেকে
সব সময় মাতাল ভাবি। দখিন জানালায় বসে গান গাই, সন্ধ্যায়
প্রার্থনায় বসি। বন্ধুর সাথে বান্ধবীর গল্প আর পরকিয়া প্রেমের
টানে ছুটে যাই আদি গৃহতলে। আমি সংসারী হয়ে উঠি, বোকা
বাক্সের পর্দায় চোখ রেখে- পিঙ্গল চুল ওয়ালা নায়িকা দর্শনে ডুবে যাই।

আমাদের ঘরের দেয়াল এত নরম যে প্রতিদিন খসে পড়ে রং
করা আস্তর। ঘুলঘুলি দিয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকে পড়ে গৃহত্যাগী
প্রবীন বায়ু। প্রকৌশলীর নোট থেকে জানতে পারি ইজা, জমার
প্রকৃত হিসাব, যদিও ঋণী বলে অনেক আগে থেকেই দেউলিয়া
খাতায় নাম উঠে গেছে। শুধু কোথাও কোন ছবি নাই বলে কেউ
চিনতে পারেনা।

পতনরত পাতারা কোন শব্দ করেনা - এমন মিথ্যে বয়ান করেছি
বহুকাল। শীত মৌসুমে শুকনো পাতার উপর পা রেখে জানতে
চেয়েছি পথের দূরত্ব। সন্ধ্যায় পাখিদের উড়াল দৃশ্যে দেখে কতবার
ভেসে গেছি সূর্য পানে। সুগন্ধি ফুলের সুবাসে মত্ত ভ্রমরের ডানায় চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি বঁইচি বাগান। ঝুলে থাকা হিজল ফলের মতন দুলতে থাকায় লোকেরা ভাবতো- নৌকায় বসিয়ে দিলে পৌছে যাবো
দরিয়ার পাড়ে।

ওল্ডহাম
২৯/০৬/২০১৬




একদিন

একদিন তারে ভালবেসে ফেলি- কতদিন গেল
কতদিন তারে নাম ধরে ডাকি, গোপন যত ফুলের নামে;
পাখির ঠোঁটের কাছে যত কথা হয়, যত আবৃত শামুক শরীর
হেটে যায় বুকের আলপথ দিয়ে- 
সে খবর কেউ রাখেনি, আমিও না জানি।
আমার গোধূলীতে বসে সে গেয়ে যায়
অনন্ত পথের ধুলোর মিছেলে কেবল হেটে যায়
এইখানে একদিন যে সুরে বেহুলা কাঁদে- লখিন্দর কাঁদে
গৌড় রাজার প্রাক্তন স্ত্রীর চুলের সিঁথি রেখা ধরে-
মনে হয়ে তারে নাম ধরি ডাকি- একদিন নদীর দিকে
হাওয়ার সুরে ভুলে যাই নগরী আলোর কোলাহল নিনাদ।

ওল্ডহাম
০৯/১১/২০১৫




সকালের কুয়াশায়

সকালের কুয়াশায় যেমন হেটে যেত হাসের দল
আমরাও হেটে গেলাম পথে- সমুদ্র আর হিজলের দিকে।
পথগুলো কার কথা ভাবে- আমাদের
নাকি সমুদ্রগামী যত হাস শীত মৌসুমের?


শহরে এখনো গ্রীষ্ম, বর্ষা কখনো-কখনো আসে
দেয়ালে বসে গান গায় নি:সঙ্গ দোয়েল
এরা আমাদের কথা বলতে চেয়ে উড়ে চলে যায়- হিজলের দিকে।
কার কথা ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে মাছরাঙা চোখ
যদিও সমুদ্রে নামেনি- জলের স্বাদে গিলে খায়
আস্ত একটা চাঁদ সারা রাত্রি ধরে।


আমাদের শহরে রাত্রি নামেনা
মাছের চোখের মতো জেগে থাকে নিশাচর যত।


আমাদের চোখে লেগে আছে হিজল- হিজল রেণু
কপালের ভাঁজে শুয়ে থাকে হরিৎ স্বপন,
ফুলের কাছে আমাদের কথা বলি
শীতের ফুল এই গ্রীষ্মে কিংবা বর্ষায় ফুটেনা
তবু ঝুলে থাকি আমাদের কথা নিয়ে-
ঠিক ঠিক একদিন সমুদ্র ভ্রমণে যাবো মাস্তুল হয়ে
আর দোলতে থাকবো হিজল ফলের মতো।

বার্সকপ, ওর্মসক্রিক
২৬.০৭.২০১৫




তাই আর বলতে হয়না

তাই আর বলতে হয়না নদীর কথা
গোপন সুড়ঙ্গ পথে কে বা কারা আসে যায়
শৈবাল শরীরে লেগে থাকা অচেনা গন্ধে-
মহুয়ার বন কেন দুলতে থাকে- কিসের আশায়


বনেলা পাখির সুরে কে কথা কয়
কার চোখের পাড়ে উতলা নদী
কোন জানালায় ভেঙ্গে পড়ে ঝড়ের হাওয়া
বলতে হয়না কেমন রং ছড়ায় রংধনু রেখা
কেন দিন নেমে আসে উড়াল দুপুর নিয়ে-


অচেনা সারস ঠোঁটে ঝুলে থাকে মাছের শরীর
অনাগত চুমোর আঁচে জেগে উঠে উদ্বিগ্ন ফুল
পাহাড়ি আলে শুয়ে কে কে অঘোর নিদ্রা যায়
আর দ্বীধায় পুড়ে কেন নিঝুম বিভাসী চুল-

২৬/০৫/২০১৬
ওল্ডহাম




ততোদিনে


ততোদিনে আমরা ডুবে গেছি- ডুবোচরেঃ
সন্ন্যাসে মাত্রাতিরিক্ত প্রার্থনায়
জবুথবু হৃদয় নিয়ে
কল্পিত সোপান ধরে ডুবতে থাকি-

প্রত্যেহ বিলাসী ভ্রমণে যাই
দুধরাজ সাপ পোষণের খেয়াল ধরি, আর
নাকের উনুনে ভাঁজতে থাকি হরিণের হাড়;
আমরা নিন্দা আর বিলাপের সৎকারে বসি
দূঃখী সারঙ্গীর আর্তনাদ গাইতে রই-


আমাদের আঁকতে থাকি দেয়ালিকা পাতায়
সোনালী মাছের চোখের মতন নিবোধ ঘুমে-
ভাসতে ভাসতে বেলা ফুরিয়ে এলে
সুগন্ধী বাগানের শায়িত পাথরে
নিজেদের নাম খুড়তে থাকি, ডুবতে থাকি-

ওল্ডহাম
১৯/০৯/২০১৬




ডুবছে

ডুবছে অন্ধকার, দরোজাও
শুন্যের দেয়াল ছুয়ে অপরাগ আলোয়;
অতিথি পাখির ঠোঁট গাইছেনা গান।


থান থান আলাপ জমে আছে
চায়ের কাপে, পরশে
উল্টো রথে ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্ভট গেলাস
ডুবছেনা চারপাশ আদৃত নিনাদে।


অহিংসায় তৎপর মৃদু হাওয়া
দূর সুরালয় জানছেনা তেমন কিছু।


ওল্ডহাম
২৫/০২/২০১৭




মাছ সম্পর্কে

ধরা যাক মাছগুলো ঘুমোয়নি কিংবা জলের
ভিতরে অথৈ শীত, নখগুলো ভিঁজে কাতর
গরম কাঁথার নিচে উষ্ণ গভীর তল।


ধরো গাই মাছেদের গান, জলের অসীমে বাঁধি এক ঘর
সারা শরীর নোনা স্বাদে ভরা আর চেয়ে আছে জলজ ভবিষ্যৎ।


ঢেউগুলো ইথার শব্দের মতো গায় ভ্রমণের গীত
আর মাছেরা ধামাইল নাচে মেতে রয়;
অলীক অসুখ হলে ছোঁয়াচে রোগের ভাবনায়
ডুবে যেতে হয়- ভেসে যেতে হয়।


ধরি মাছেরা খুঁজে আড়াল, আরো মাছেদের থেকে দূরে
আরো বেশি গভীর আরো বেশি জলের সিনার ভিতরে।

ওল্ডহাম
২৪/১০/২০১৬




চৈত্র বিষয়ে

আমরা তেমন কিছু আর বলছিনা চৈত্র বিষয়ে
গোপনে টুকানো শেষে বিকেল নেমে এলে আমাদের হয়ে
ফুলের পাপড়ি ভুলতে চায় পাখির সোহাগ;
আগত সন্ধ্যার কথা ভাবতে ভাবতে বর্ষা উড়ে এলো-
পিপড়ার চলন ধ্বনি শুনছেনা পুরনো দেয়াল।


একটা খাদক টিকটিকি সারা সন্ধ্যা আগলে রাখে
আমাদের চোখের পাতায় জড়ো হয় ঘুম
হাওয়ার ভরে ঘুরে বেড়ায় শোকার্ত দিন, শোকার্ত রাত।


কাচের আয়নায় বেঁজে উঠে ঠোঁট- ঝুনঝুন, ঝুনঝুন।


এবার আমরা সংসারী হবো, কাঠের আলনায় দোলাবো শরীর
ভীষন ইচ্ছায় লাল গোল গোল সারা রাত পর ফুলের কান্না পায়;
আবার চৈত্র এলে বৈশাখীও ফিরে আসে আমাদের ঘর।
এখন পুতুল বিয়ের দিন, চারিপাশে অকাল বর্ষা
পায়ের পাতায় আলতার ফুল; পানের বরজ আরো দীর্ঘায়ু হয়
জাহাজও ভ্রমণে আসে আমাদের শহর।

০৪/০৪/২০১৭
ওল্ডহাম




রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে


আহত পাখিরা সে রাতেই মারা গেলো
শোকবইয়ে দু'বাক্য লিখবেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি
এমন প্রতিশ্রুতির খবর জানালো আমাদের টিভিগুলো;


আমাদের জানালা ভেঙ্গে পড়লো শব্দের ভারে
আকাশে উড়তে দিলাম ঘরে পোষা পায়রার দল
সূর্যের উত্তাপে ভীষণ চিকচিকে হলো
বঙ্গ ভবনের সাদা দেয়াল।


রাষ্ট্রপতির মৃত্যু সংবাদে শোকার্ত বিদেশী দূতাবাসগুলো,
রঙিন মোড়কে ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে এলো সাঁজোয়া যান।


প্রতুশ্রুতি মোতাবেক আমরাও দাড়ালাম ম্লান মুখে
বঙ্গ ভবন হতে গাড়ির বহর ছুটে এলো
বিষন্ন হাওয়ায় পতপত উড়লো অর্ধ-নমিত পতাকা;
শুধু শোকবইয়ে রাষ্ট্রপতির স্থবির ছবির নিচে-
স্বাক্ষর দিতে উঠে দাড়ালেন না স্বয়ং রাষ্ট্রপতি।

ওল্ডহাম
০৭/০৬/২০১৭




আমাদের বসে থাকা

আমরা পৃথিবীর কোথাও বসে থাকি উদ্বাস্তু হৃদয় নিয়ে, ঘিরে থাকা চাঁদের আলোয় মুগ্ধ হতে চেয়ে আকাশের পানে থাকাই, সন্ধ্যা তারার দেয়াল জুড়ে চোখ রাখি, অন্ধকারের ইশারায় ডুব দিতে নেমে যাই বুকের জমিন হতে; অবকাশ যাপনের কোন দৃশ্যে আমাদের আর পাওয়া যায়না- যদিও প্রতি সন্ধ্যায় সূর্যকে ডুবে যেতে হয় নিরুদ্দেশ ইচ্ছায়।


ভেসে যাওয়ার নৌকায় চড়ে কোন দূরে যাই? অবগত কোন্ ফুলের সুরভী ঘিরে রাখে চারদিক?


এমন সন্ধ্যায় লবণ চাষীদেরও ফিরতে হয়, কোথাও ফেরার ঘর নেই জেনেও সূর্যাস্তগামী আলো রেখা ধরে- বহুদূরে আমাদের চলার শব্দ থামে; আমরা জল আর গোধূলি পানে মেতে রই। অন্ধকারে যে সকল দৃশ্য চোখ সয়ে উঠে- হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দেই অদৃশ্য কোমল পরশ; লালাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভাবনায় ডুবে যেতে হয় প্রতিনিয়ত নিজেদের ভেতর।


এইভাবে যদিও বসে থাকার গল্পে আমরা নেই- সূর্যাস্তের মুখোমুখি হওয়ার আশংকায় বিকেলটা পালিয়ে বেড়ায়; আমাদের আঙ্গুল গুলো ভ্রমণে গেলে ফিরে পেতে চাই। লোমকূপ হতে যে সকল ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয় তার রুপ আমাদের জানা নেই- আমরা কেবল ডুবে যাই- বসে রই।

ওল্ডহাম
০৫/১০/১৬



আমাদের উড়াউড়ি গল্প

আমাদের উড়াউড়ি নিয়ে কোন গল্প নেই কিংবা কোন চিত্রকর্ম; প্রাসাদের দেয়াল যত দীর্ঘ হয় অন্ধাকারে- তার চেয়ে প্রশস্ত বুকের মাপে কোন মানচিত্র আঁকা
হলোনা পাথর খুদে। ঘড়ির বয়স বেড়ে গেলো শুধু; তুমুল হাওয়া একদিন ছুয়ে দিলো আমাদের বিষন্ন চুলগুলো।


গাছের পাতা হতে ঝরে গেলো টুপটুপ জল, আমাদের চোখ, পায়ের পাতা ভিঁজলো আসন্ন শীতের ধুলোয়। আরো অনেক হেমন্তী সন্ধ্যার মতো, অপার অন্ধকারে ডুবে গেলো আলোক রশ্মি। আর দূর হিমলায় শান্ত কুহকের ছায়ায় চুপচাপ, চুপচাপ মেতে রইল নিজের ভেতর। তবু আমাদের জন্য কোন গান, নৃত্যে সম'গীত গাইলোনা ঝি ঝি পোকার দল।


গত হওয়া দিনের বাড়তি স্মৃতি সমুহ নিয়ে একদিন আমরা মুখোমুখি হলে- আবার হয়তো বলা যাবে কোন্ কোন্ দুপুর আমাদের ঘামিয়ে দিলো; যাযাবর পাখিদের ঠোঁট কেন ফিরে গেলো নিজেদের ডেরায়, ঘড়ির কাঁটার অগুনতি ঘুর্ণন শব্দে কেমন করে মাঝ রাত ঝিমুতে থাকে।


আমাদের উড়াউড়ির শব্দে তন্দ্রাসক্ত কুয়াশা ঝরে যায়- এমন গল্প আর চিত্রের আগাম কল্পনা নিয়ে ভ্রমণে যাই। জরাগ্রস্ত দুপুরে শোকগান গাইতে গাইতে যখন সন্ধ্যা নামে, যখন প্রজাপতি আর উড়তে চায়না নিজের ডানায়- মনে হয় সকল শব্দেরা উৎকন্ঠা নিয়ে ফিরে আসে ঘড়ির ভেতর।

ওল্ডহাম
২৪/০৬/২০১৭



তোমাকে ভালবাসি বলেই


তোমাকে ভালবাসি বলেই হাটি
তোমার শরীরে লেগে থাকে শরীর
গন্ধ রসে ডুবে রই মাতাল হাওয়ায়।


দেখি তুমি হেটে বেড়াও সুন্দরবন
হরিণীর চপল কোমর দুলিয়ে;
জেগে থাকো রাত নিঝুম দ্বীপে
প্রিয়তম চাঁদের সোহাগ এবং ধর্ষণে।


শীলং শহরের ভাঁজ খুলে নেমে এসো
জাগিয়ে তুলো অবাক শীতল চুমোয়;
যেখানে শুয়ে থাকে প্রিয়তমা পিয়াইন।


তোমার বীভৎস হৃদয়ে ধরে রাখো আমায়
চুমোয় চুমোয় জলকেলি করি প্রিয় নর্দমায়।


ওল্ডহাম
২২/০৫/২০১৫




দেবলীনা আর আমি

আবার ঘুমিয়ে পড়া যায় দেবলীনার ঘরে, মৃত্যুর মতো অবচেতন ঘুমে। পাহাড়ের গল্প সকল পুরিয়ে এলে, আর সকল নর ও নারীর মতো আমদেরও চলে যেতে হয় আমাদের ছেড়ে। শীতের পাতার মতোন ঝরে গেলে রাত, কুয়াশা ছুয়ে নেমে আসে আরেক আষাঢ়। দেবলীনা আর আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি আমাদের মতো করে।


শুনেছি মানুষ জানে, আরো কিছু মানুষের কথা। ঘরের ভেতরে দেয়াল দাড়ায়, হাতের ওপাড়ে হাত রেখে ছুটে চলে ভীরু জানালার প্রতি। শুনেছি মানুষের গান, কিছুদিন তারা ঘুরে আসে সমুদ্রে স্নান সেরে। তখন পাহাড়ের গল্প জমে, ওখানে নোনা পানির কূয়া হতে টুপটুপ জল- দেবলীনার ম্লান চোখের পাতা হতে ঝরে গেলে, আরো আরো সন্ধ্যার মতো গোপনে জেগে রয় এক অলীক স্বপন।


দেবলীনার হাত ছুয়ে ঝরে পড়ি আমি। আমার ঘরের সুভাস হয়ে দেবলীনা ঘুরে। বেশি রাত হয়ে গেলে আমাদের মাঝে- এক বেভুল দেয়াল আতঙ্কে জমে যায় পাহাড়ের পাশে। আর এক অচলা নদী ভ্রমণ শেষে ফিরে আসে উতাল সমুদ্রের গন্ধ নিয়ে এবং আমি আর দেবলীনা শুয়ে পড়ি একসাথে, নিজ নিজ ঘরে।


ওল্ডহাম
১৪/১২/২০১৬


মনোগ্রস্থ দিন

বিকেল আর সন্ধ্যায় মিলনের পর রাত্রি নামে
আকাশী আলোয় মগ্ন সন্তর রুপে,
সন্ধ্যাতারার দেহের ভাজে ফুঠে রয়
বিষন্ন মালতীর সুগন্ধী বায়ু।


হাওয়ার আলিঙ্গনে মেতে রয় ফুল-
কাঠঠোকরার ঠোঁটের চুমোয় ফালি ফালি আদর মেখে
একরাত্রে প্রিয় মালতী জেগে উঠে উদ্বাস্তু নাগরিকের মতো।


তারপর একদিন নেমে আসে ভোর, আলোর কাছে
দরজার গারদে লেপ্টে রয় প্রত্যেকটি ঝরে পড়া চুল
কাগজের ভাঁজে মাতাল হাওয়া শুয়ে থাকে আর
পাতা ভ্রমণ শেষে ফিরে আসে পিপড়ার দল।


আকুল হয়ে ডাকতে থাকে রাত্রির গোপন দ্বার
পৃথিবীর যাবতীয় ফুলের ঠোঁট;
আরো বেশী নির্মম, আরো বেশী অহিংস রাতে ডুবে যায়
লালা-বাহিত রোগের সংক্রামক আয়ু।

ওল্ডহাম
১৫/১০/২০১৫




ঘাসের অসুখ

একদিন ঘাসের শরীরে হবে জ্বর, শুন্যে নেমে যাবে শিশিরের তাপ
উত্তর মেরু ভ্রমণের ঘোরে- দক্ষিণ মেরু ভ্রমণের ঘোরে
এক পাল ঘাস ফড়িঙের দল- রোদ চশমা লাগিয়ে ঘুরে
বেড়াবে, ঘাসের ওপারে ঝাউবনের ভেতর।


অহিংসার কিছু আগুন হবে
অগুণতি রোদেল ঢেউ ছুয়ে যাবে ঘাসের ঠোঁট
ক্ষয়ে যাওয়া লবণ দানায় আটকে রবে ছুপ ছুপ জল।


এমন একদিন পলাতক হাওয়া ঘুরে বেড়াবে আমাদের শহর
ধুলোর টগবগ শিখা- তরুণ ঘাসের ঠোঁটে পোহাবে উপোস রাত।


দুধাল ঘাস অসংকোচে পুড়ে হবে ছাই, ফুলের বাগান হতে
ফুলের রেণু-পাতা ঝরার শব্দে উন্মুখ আরো কিছু ঘাস
বেহাল কর্তাল ধ্বনি, বায়ুবাহি অন্য ঘাসের ঘ্রাণ সহ
মেরু ভ্রমণ শেষে ফিরে এলে-
ঘাসের অসুখ আলপথ ধরে বহুদূর- কতদূর ভেসে যায়?

ওল্ডহাম
২৪/০৩/২০১৭




About our long inteview by Belayat Masum
মূল প্রচ্ছদ: এনায়েত হোসেন



আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার বিষয়ে

আমাদের দীর্ঘ সাক্ষাতকার পর্ব বলতে শীতকালটা ছিল
পৌষের আগে আগে যে রকম সন্ধ্যা নামে
ভেঁজা কুয়াশা ঠোঁটে মেখে ঘর ফেরত পাতি হাসের দল;
শুকনো ধুলো উড়তে উড়তে আমাদের জানালায় উল্টে যেত
ঘরের পর্দা আরো বেশি ভারি হয়ে উঠলে-
আকাশের রঙটা একটু একটু করে অন্ধকার হয়ে গেলে
আমাদের সাক্ষাত বলতে ঐ সময়টাই ছিল।


দরজার বাইরে ঘুমিয়ে পড়তো মেটো আলো
খরচার ভয় ছিল
তবু সঙ্গম মুখর হাওয়া আরো বেশি ব্যাকুল হয়ে উঠলে
দেয়ালে লেপ্টে থাকা হাস্নাহেনার গন্ধ শুকে শুকে ভ্রমণে যাওয়া যেত
আমাদের সাক্ষাত পর্ব বলতে ঐ সময়টুকুই ছিল।


গতবার যখন আলোটা নিভে গেল ভোরের আগে
দেয়াল ঘামতে ঘামতে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো,
সূর্যটা এত আলসে ছিল যে জোনাকিরা গাইল নাদাইর গীত
আমরাও জড়তা ভেঙে শুনতে থাকলাম শিশির ঝরার শব্দ;
এইভাবে আমাদের সাক্ষাত শেষ হয়ে এল বলে
দারুণ শীতকালটা জমে গেলো।

ওল্ডহাম
১১/০২/২০১৭




চোখের ভেতরেই চোখ রাখি

চোখের ভেতরেই চোখ রাখি
স্বর্ণ লতিকার মত ঝুলে থাকা চোখ, কুয়াশা দিনে
ঝরে পড়ে দূর্বা সবুজে সূর্য কণা,
ভাববার সময় হয়একদিন এই মীন শরীর নিয়ে জেগেছিলা
মবস্তির পাশে, কেউ চোখ তুলে স্বপ্ন দেখিনি
চোখের ভেতরে চোখ রেখে
কুয়াশায় ভেঁজা দরপর বুকের উপর নেমে এসে
পুচ্ করে একটা দাগ টেনে, সরল কিংবা বক্র
কেউ বলেনি এখানে, এই দুধর্ষ রাতে
চোখের ভিতরে চোখ রেখে জেগে থাকা নিষেধ।

ওল্ডহাম
০৩/০৩/২০১৫



পাহাড়ে সমুদ্র নাই

পাহাড়ে সমুদ্র নাই, আকাশ আছে
ধুলো আর মেঘের রং নিয়ে ঘুরে
ফিরে আসে মানুষ ও মানুষের ঘরে।
মানুষ প্রার্থনা জানে
পৌষের কুয়াশায় ভিঁজে ফালি করে
অনাবাদী শামুকের বুক।
প্রার্থনায় ডেকে আনে ফুল
ঢেউ যত সমুদ্রমুখী, আপেল ও আঙ্গুর;
যৌবনে দাড়িয়ে মুখোশ আঁকে
নবান্নের উৎসবে এঁরা খোলস ছেড়ে
কেড়ে নেয় কৃষাণীর চোখ।
তাই মানুষ ও মানুষ ফিরে আসে
প্রার্থনা নিয়ে সমুদ্রের দিকে,
সমুদ্রে আকাশ আছে পাহাড়ের উপর
পাহাড়ে কোন সমুদ্র নাই আকাশ আছে।

ওল্ডহাম
২১/০৬/২০১৫




অবকাশ

আমরা ঘুরি, সমুদ্রে যাই পাহাড়ে উঠি
লতা পেঁচিয়ে ঝুলে থাকি, গান গাই
শহরের দিকে ফিরে মুখে মুখ রাখি
আমাদের মাঝে কোন প্রেম-ভালবাসা নাই।
জেগে উঠে ভোর দেখিনা, আয়নায় দেখি
সফেদ জলের ভেতর বেতার বাণী
আমরা শুনতে শুনতে শুনতে থাকি।


আমরা ঘুরি আমাদের মাঝে, ঘরে বাইরে
আমাদের কোন সীমানা নাই, আকাশ নাই
দেয়ালে কান পেতে শুনি বাদুরের গান
সুরের কোন ভাষা নাই, মাতুলালয় নাই।


আমাদের ঘুরাফিরা মানে ঘরেই ফেরা
একলা একা নিজেদের ভেতর শুয়ে পড়া।

ওল্ডহাম
০১/০৭/২০১৫




একটি স্বপ্নের বর্ণনা কিংবা অপ-বর্ণনা


কোথাও যাবার নেই বলে ঘুমাই
একটা হাসের চোখের ভেতর চোখ রাখি
বানের জলে ভেসে যাওয়া হাস
যার কোন নাম ছিলনা অথচ ডেকে ডেকে সে
ঘুমের ভেতর হতে জাগিয়ে তুলে একজোড়া চোখ


ওটা পুরুষ কিংবা স্ত্রী হাস
আমার জানতে ইচ্ছে হয় না সে কিভাবে বেঁচে আছে
চোখ দুটো ঘুমায় বলেই তারে দেখি
কেমন রং তার, ধূসর কালো আর সাদা
আমি দেখি তারে, ঠোঁটের কাছে একজোড়া নাক
অন্য হাস গুলোর মত পালকে জল লাগেনা
প্রতি সন্ধ্যায় ফিরে আসে
উঠোনের কোণে অপেক্ষায় থাকে একটা লাল মোরগ
এরা সকলেই দৌড়ায় শিয়ালের পিঠে চেপে
দু'চারটে কাক কেন ঘরে ফিরেনা, জানা নেই
তারা বসেই আছে জানালার পাশে
কথা বলা পাখিদের মত গান গায়


এসব আমি জেগে জেগেও দেখি
অথচ চোখ দুটো একটা হাসের স্বপ্ন দেখবে বলে
বানের জলের উপর হামাগুরি দিয়ে হাটে।

ওল্ডহাম
২০/০৩/২০১৫



মৃতবাস

এরা সকলেই ভাবল, এটা মৃত শরীর। যত দ্রুত সম্ভব স্নান দিয়ে, সুগন্ধি সাবানে- নিয়ে গেল বাড়ির উঠানে।
শক্ত সামর্থ্যানুযায়ী কেউ কেউ এলো, কেউ ঘরে বসেই বউ-ঝির সাথে গল্প করে। যারা প্রার্থনা জানে, লে গেল মসজিদে-মন্দিরে
যত পাপ ছিল, এইসব অপরাধের ক্ষমা করে দিয়ে- কেউ শরীর নিয়ে গেল শ্বশানে আর কেউ বয়ে চলে গোরস্থানে, অথচ তখনও
বসেছিলাম প্রেমিকার বুকে, মায়ের কোল জুড়ে।


তাদের কেউ জানেনা শরীরের ভেতর একটা পোড়া রোগ এক বিকেলে আমায় ভীষণ কাঁদিয়েছিল,
জানি কাঁদতে নেই, তবুও বেহুলার মতো কেঁদে ঝুলে থেকেছি এই শহরের সরিসৃপ দ্বীপে।


এই দ্বীপ রাষ্ট্র আমায় ভুলে যেতে যায়- এই জলের কেউ নই আমি। এই শহরে কোন বাদুর জন্মেনি,
ইদুরের হার বেড়ে যায় কেবল। সুগন্ধী সাবানের দাম বেড়ে গেছে, এই সাবানে আর মোজা ধোয়া যায়না,
তেল আর জলের দিকে থাকালে নিজেকেই দেখিখসখসে মুখ আর নাকের ছবি।


এখানে অনেকেই জেগে থাকে শরীরের ভিতরে,
নিজের লোম হয়েতাই দিন আসে মৃত্যুরমরে যেতে হয় বাদুরের চোখ নিয়ে।

ওল্ডহাম
২৫/০৩/২০১৫




আমাদের শহরে কোন হাসের খামার নাই

আমাদের শহরে কোন হাসের খামার নেই, কোন হাস বেড়াতে আসেনি কোনদিন। তবুও কারো কারো সাথে দেখা হয়, বাজারে অহিংসার বাণী নিয়ে কেউ আসে নি, এমন কি স্বয়ং বুদ্ধও। আমার  জঙ্গল ভীষন প্রিয়, এ কথা কেউ জানে না। পাহাড়ে একবার গিয়েছিলাম, গল্পটা কাউকে কোনদিন বলিনি, ওখানে কোন মুদি দোকান নেই, পতিতালয় কিংবা উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য মসৃণধুলোর পলেস্তার।


শহরে হাস থাকেনা, কোন এক শীতে ভ্রমণে গেলে আর ফিরে আসে নি। তবুও আসে। হারিয়ে যাওয়ার কোন এক বিকেলে হাত ধরে বসে থাকে বাজারী মলাটে। শহরে কোন গৃহস্থ নেই, নেই যেমন ঘরে পোষা হাসের দল আর ভোর রাতে চমকে উঠার ঘুম।


আমাদের আর সাঁতার শেখা হয়না। যারা জানে ভুলবার চায়।
হাসের মত ডানা জাপটায়, পারেনা, এরাও হাস।


হাসের কি কোন স্বপ্ন আছে? বেঁচে থাকা কিংবা মরবার। পাখনায় বাতাস লাগিয়ে একদিন ইস্তাম্বুল হয়ে প্যারিস অথবা কায়রো থেকে ইয়াঙ্গুন ভ্রমণের। জানি আছে,কেবল হাসগুলো জানেনা, শীতের রাতে ঘুমিয়ে থাকেআমাদের শহরের রাস্তায়। কোন এক বর্ষায় হারিয়ে যাবে বলে।

ওল্ডহাম
১৯/০৬/২০১৫




ক্যামেলিয়া

তোমাকে নিয়ে কোন গল্প নেই - ক্যামেলিয়া
তোমার সাথে কোন গল্প নেই
তোমাকে বসিয়ে রেখে কোন গল্প হয়না
কবিতা কিংবা বাৎসায়ন পাঠ - ক্যামেলিয়া।


ক্যামেলিয়া- তুমি প্রার্থনা জানো? মানুষ যে করে
তোমার প্রার্থনায় কারে ডাকো? সে কি জানে?


শহরে বাতি নিভে আসে আলোয় আলোয়
সূর্যের মুখে চুমো দিয়ে জাগো ক্যামেলিয়া,
হাতের নখে, পায়ের নখে এঁকে দাও
এঁকে দাও নদী ও ঢেউ
মানুষের শরীর, শহরের মানুষ
এঁকে দাও যৌবনে ঝুলে থাকা রাত
প্রেমিকের বুক, এঁকে দাও পৃথিবীর পাঁজর
যেখানে ঘুমাতে চাও কোটি কোটি চুমোয়
প্রেমের বারন্দায় বসে গেয়ে উঠো- ক্যামেলিয়া।

ওল্ডহাম
২২/০৬/২০১৫



দ্বীধা

আমায় কখন ছুয়ে গেলে- হাওয়া
হিজলের বনে কখন তুমি ঝরে গেলে
সন্ধ্যায় একদিন মগ্ন ছিলাম- মনে পড়ে?
পথের কোন দিক ছিল না
আমাদের মত- ডুবে থাকার
নিজেদের ভেতর পতঙ্গ হয়ে।


আমায় ছুয়ে যায় হাওয়ার শরীর আর আমরা আমাদের
নিয়ে জেগে থাকি, কোন একদিন ভ্রমণে যাবো- হিজল বনে।


সন্ধ্যার কথা মনে পড়ে?
হাওয়া আর জল?
যেদিন ঠোঁটের ভাঁজে পুড়ে গেল ফুল
লবণ বাগানে ঝুলে থাকলাম চাষীর স্বরুপ।


ওল্ডহাম
২৮/০৬/২০১৫



এক ধরনের আসক্তি

আমি ফুলের কাছে যাই এবং আসক্ত হয়ে পড়িসকালে ও সন্ধ্যায় ধরে রাখি। আমি যাই, তারে কোনদিন পাইনাতবু আসক্ত হয়ে পড়ে থাকি ফুলের ভেতরে বাহিরে।


কোন গন্ধ কিংবা ঘ্রানে নয়রঙ অথবা পাপড়ির কোমলতায় নয়ছড়িয়ে পড়ি গ্রীষ্মের রোদের মত। ঝড় আর হাওয়ার শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠি- শির শির বাঁশির সুরে ভেসে যাই- ভেসে যাই, যেতে হয় কেবল ফুলের কাছে।ফুল জেগে থাকে, সবরাতে অন্ধকারে-জোসনায়।


শরীরে শরীর নিয়ে জেগে থাকে চোখের কাছে, বুকের পাশে- ওখানে কোন শরীর থাকেনা, ফুল থাকে; আমাকে যেতে হয় রাতের আলোয়, চাঁদ আর মেঘ যখন মিশে যায়- যেসব অন্ধকারে ভূতের শরীর ওত পেতে রয়- আমাকে যেতে হয় ফুল আর ফুলেল মোহনায়।


সবরাতে গৃহপালিত জোনাকিরা নিভে যায়, গাই গরুর ওলান যেমন ভারি হয়ে উঠে ফুলের শরীরও ঝরে যেতে চায়- কেবল ঝরে যেতে চায় আমার কাছে- সকাল আর বিকেল আমি সন্ধ্যা হই- আলো আর আঁধার; নির্জন দুপুরে ঘুরে বেড়াই ঘুঘুর ডানায়। আমাকে ফিরতে হয় ফুলের কাছে- ফিরতে হয় অবাক প্রেম এবং অনুশোচনা নিয়ে।


ওল্ডহাম
২৪/০৬/২০১৫



ভাঙ্গার প্রেম

পাড় ভাঙ্গা নদী পাড়ে বসে থাকি
জলের কাছে কিছু চাইব বলে।


এরা সমুদ্রের মাতা
পাহাড়ের ফুল;
রমণীর মত কেঁদে উঠে বুকের পাশে।


আমরা নদী দেখতে যাই মধ্যরাতে
বাতাসের শব্দে কেঁপে উঠি আচমকা
রুপালী জলের উপর নেমে আসে চাঁদ
দেখতে থাকি তাদের অপলক চোখে।


আমরা বসে থাকি সূর্য ডুবা দৃশ্যে
দেখতে পাও?
জলের উপর ছায়া
ছুতে পারো?
ভাঙ্গা পাড়ের মতো শুয়ে পড়ি যখন তখন।

ওল্ডহাম
০৪/০৭/২০১৫



বাকি রাত


বাকি রাতটুকু কেটে যাক নার্সারি বাগানে, চোখের পাতার কাছে
এক লাশকাটা ঘরে, অধল হয়ে গেলে পুরনো রুপার চামচ
পুকুর পাড়ের ঘাসে শুয়ে পড়া যাক-
এই রাতে ফুটে উঠুক দুধেল ফুল, সোনার দেরাজ খুলে
জুতোজোড়া পায়ে- পৌছার পথ ধরে কিছু আলো নিভুক;
ভাড়াটে ঘুমের বহর পুরিয়ে এলে, নিজেও পৌছে যাই ভ্রুণের শহর।


দখিন দুয়ার খুলে এক আলতার বরজ, আর সহজিয়া সুরভী মাখা
খুনের করাত। ভুলে ভরা দেয়ালিকায় রঙ কিছু লেপে-
হারানো গানের সুরে আমরাও মাতি।


বাকি রাত শুয়ে থাকি চাষার ঘরে, ফসল কাটার দিন
গনিয়ে এলে- কিছু বীজ বপন করি নদীর ধারে
আর কিছু পাকা ফুলের কুসুম শুকিয়ে রোদে-
নিজের দোকানেই সদাই সারি;
কুহুকাল ডুবে থাকি সিঁথি রেখা ধরে, নরম জাজিম ছুয়ে
ভেসে উঠা ভোরে, কেটে যাক আরো কিছু আবাদ সময়।


ওল্ডহাম
১৪/১০/২০১৬






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ