স্ক্রলিং | বেলায়েত মাছুম - বেলায়েত মাছুম স্ক্রলিং | বেলায়েত মাছুম

স্ক্রলিং | বেলায়েত মাছুম

অবশেষে লিসবন শহরে উপস্থিত। গ্রীষ্মের তীব্র রোদে ঘামতে ঘামতে দুপুর শেষ হয়। সন্ধ্যায় সমুদ্রের হাওয়া শীতল পরশ দিয়ে যায়। সময়ের সাথে আমি বদলে যাচ্ছি। আমার কবিতাও বদলে যায় এবং যাচ্ছেই। কোন কিছুই আর তীব্রভাবে আকর্ষণ করছে না। তবু সময়কে উপভোগ করছি। 

হ্যাপি স্ক্রলিং।


১.

আমি সমুদ্র দেখতে গেলাম।
সাথে পরিচিত এক লোক
নাম জানি না।
কখনো জিগ্যেসও করিনি


নাম জেনে কী হবে?
জানা থাকলে সুবিধা হতো
ডেকে বলতাম সিগারেট দেন।
নাম না জেনেও সিগারেট ভাগ করে টানছি।

লোকটা ফোনে কথা বলছে
তার বউয়ের সাথে।
আমার প্রেমিকা নাই
সমুদ্রের অনেকগুলো ঢেউ
কী বলে গেল শুনতে পারিনি।


২.
লিসবন শহরে অনেক হাওয়া
মাছের গন্ধ।

দুপুরের প্লেটে মাছের মাথা
চোখ দুটি তাকিয়ে আছে অপলক।
পাতা ও ভ্রু কোনটাই নাই
আমি খেতে থাকি।

ঘড়ির দিকে থাকাই
কোথায় যাবো এই তপ্তদুপুর শেষে।


৩.
শহর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হলুদ হলুদ বাস।
কোন শব্দ নাই
না কি আমিই বধির?
চোখ জ্বালা করছে
চশমাটা খুজে পাচ্ছি না।

লোকেরা ঘুরতে এসেছে।
পাহাড় ঘুরে
সমুদ্রের পাড়ে দাড়ায়।

একটা লোক দাড়িয়ে প্রস্রাব করছে
সামান্য দূরে কয়েকজন পাহারায়।
একজনের ছাতা উড়ে গেছে বাতাসে
আমি ইতস্তত রাস্তা পাড় হচ্ছি।


৪.
মাছিটাকে কেউ বিদায় জানাচ্ছে না
আমার পায়ের উপর বসে আছে।
পাশের বাসা থেকে তরকারির ঘ্রাণ
পেঠে ক্ষিধে নাই।
মাথার ভিতর ভনভন শব্দ বাঁজছে।

এখন রাত ১.৪৫
ঘরের ছাদে আটকে আছে তড়িৎ পাখা।
শহরের লোকজন এখনো ঘুমায়নি।
অনেক অনেক কথা ভেসে বেড়াচ্ছে।
দুপুরের আগে আগে সকালটা ফিরে আসুক
বের হয়ে মাছি ধরতে যাবো হলুদ বনে।

মাছিটা পোষ মানছে না
ঘর থেকে পালিয়ে কোথায় আর যাবে।


৫.
আমার রুম মেট
মোবাইলে থাকিয়ে আছে।
স্ক্রলিং
স্ক্রলিং
স্ক্রলিং
অপলক থাকিয়ে আছে।

তারে কেউ কিছু বলুক
আমি বলছি না।

স্ক্রলিং
স্ক্রলিং
স্ক্রলিং
আমার আঙ্গুলও বাঁধা মানছে না।


৬.
পাশের রুমের লোকটা কি কাঁদছে
না কি হাসছে?
বুঝতে পারছি না।

আমি ঘুমাবো
কিন্তু আমার রুম মেট স্ক্রলিং।
মাথার উপর হলুদ বাল্ব
থাকিয়ে আছে।

ঘুমাবো, আমিও স্ক্রলিং।


৭.
বের হয়ে কোথায় যাবো?
মেট্রো ধরে একেকটা স্টেশনে নামি।
সবখানেই একই রকম গরম
ঘামতে ঘামতে আরেকটা মেট্রোতে উঠি।

মানুষের চোখে চোখে রোদচশমা
হাতে মোবাইল।
পরিযায়ী পাখির মত ঘুরছে।

নামতে গিয়ে উল্টে পড়ে যাচ্ছি
ধরার হাত নাই।
নিজের হাত ধরে দাড়িয়ে থাকি
অভ্যস্ত কুমিরের মত উষ্ণ রোদে।


৮.
টেলিফোন তারে বাঁধা দিন শেষ
গোলমেলে আটকা পড়ে গেছে জুতা।
সন্ন্যাস হবে এমন লোক
এ শহরের এককোণে রাত জেগে থাকে।

সরিসৃপ দুই পা
সমুদ্র পাড় হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।

ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।
বাতি জ্বলে উঠে।
রাতকানা রোগীর মত হাটতে থাকি
আলো নাই
আলো আছে
টেলিফোন জুড়ে তার চেয়ে গেছে।


৯.
হাটতে হাটতে মোবাইলে কথা বলছে।
কথা বলতে বলতে লোকেরা চলে যাচ্ছে।
একজন পথ হারিয়ে পথ খুজে পাচ্ছে না
মুরারি মার্কেটের বারন্দায় আমরা বসে আছি।

সমুদ্র ভ্রমণ করা বাতাস আসে
নাকে উপচে পড়ছে পেশাবের তীব্র গন্ধ
আমরা চারজন নাক চেপে বসে থাকি
দেশ উদ্ধার করবো এমন আলাপ চলছেই।

আমরাও হেটে এলাম পথ থেকে।
ময়লা ডাস্টবিনের পাশ কেটে
এই সাততলা মার্কেটের সিড়ি
আমাদের মত আরো আরো লোক
বসে আছে পেশাবের তীব্র গন্ধ নিয়ে।


১০.
খবর পৌছে দেয়া হলো
তরকারিতে একটা মাছি পাওয়া গেছে।
আমি রেস্তোরার দিকেই যাচ্ছি
মাছিটা চোখের সামনেই উড়ছে।

সিগারেট নিভে যাচ্ছে, যাচ্ছেই
একটা পানপরাগ পান
একধলা পিক ফেলে গেছে কেউ
হাটতে হাটতে পায়ে ব্যথা করছে।

আমি রেস্তোরায় পৌছে যাই
রাতের খাবার খাবো কি খাবো না।
সংশয় যেন মাথায় উঠে আছে
ঘর ফিরে যাব।
পায়ের ব্যথা মরা মাছির মতো ভেসে আছে।




©বেলায়েত মাছুম
আগস্ট/২০২৪/লিসবন


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ