উৎসব প্রায় শেষ | বেলায়েত মাছুম





১.

নদী যায় বয়ে, আমি বসে থাকি পাড়ে
দেখি জলে ছায়া
দেখি আমায় আমি, পুরনো সেই গল্প
যেন ভাঙছে আয়না
কেউ জানে না, কেউ চেনে না সেই রূপ
কোথায় চলে যাব, উৎসব শেষে।


কত রং মুছে গেছে
আমার হৃদয় তবু ডাকছে
কে তুমি অচেনা ফুল হাতে,
পাই না পথের দিশা
রং নিয়ে চলে গেছে কে সেই পথে
আমার হৃদয় তারে ভাবছে
কোথায় চলে যাব উৎসব শেষে।


ঝড় আমার দুয়ারে থামে
পা নেই, পথও জানা নেই
উড়বার ডানা যদি পাই
একদিন আমার হৃদয় সেই পথ ধরে
কোথায় চলে যাবে।



২.

গাছের পাতাগুলো ঝরছে
ঝড়ের হাওয়ায় পাই না তোমার সংবাদ
দিন ফুরিয়ে যায়
আমার বেলা মাঝ দুপুরে থামে।

তোমায় ভাবার চমক শেষ হয় না
বিজলির মত ঝলসে উঠছে
বধির কানে আর কোন শব্দ নেই
খিল-খিল হাসি রোজ বাঁজছে।

আমি যেন নিরালায় কত দৃশ্যে ডুবি
হৃদয় ঘিরে বর্ষার তুমুল ঢেউ
সন্ন্যাসে যাবে গত ফাগুনের হাওয়া
তুমি ছাড়া জানে কী তা কেউ।


৩.

মৃত পাখিরা আবার গান ফিরে পেল
সমুদ্রের ঢেউয়ে নাইতে নামছে কেউ
আমার জানালায় মুগ্ধ রোদ
ইশারায় ফুলেরা বারবার ডাকছে?

আমি কি ডুব দিতে যাব?
সহজ জলের ভেতর
অসংখ্য মাছের সংসার
আমার নেই যে নিমন্ত্রণ।

নদী ভুলে যাচ্ছে পথ, সমুদ্রের
অনিদ্রায় জাগে অন্ধ চোখ, ততদিন
তোমার হওয়ার আশংকা ফুরিয়ে গেছে
পৃথিবীর হাওয়ায় সেই সুবাস পাই।


৪.

অন্ধ রাত গুলো আমায় ডাকছে না আর
পথের ধুলোরা উড়ে উড়ে হাওয়ায়
তোমার লেখা গান হয়তো গাইছে কোন কোন পাখি
হয়তো কোন রাতে জোনাকির দল
নৃত্য করতে করতে দাড়াবে দুয়ারে কান পেতে

আমার হৃদয়ের শব্দাবলী ফুরিয়ে গেছে ততদিনে
সকালের কুয়াশার মতো দূরের গ্রামের দিকে
অন্ধ হতে হতে হয়ে যাবো পুরনো দূরবীন
পুরনো আয়নায় যেমন মুখছবি ভাসে
ঠিক তেমন করে ফুলেরা জলের উপর
মেঘেরা মেঘের উপর
ভাসতে ভাসতে অন্ধ হয়ে যাবে।


৫.

পুরনো কাঁথার মতন তুমিও আছো ভাবি
সন্ধ্যার কাকলি থামে, আর
গোলাপের বাগান হতে পিঁপড়া যায় উড়ে।

সহজ কত গল্পের মত তুমি ছিলে
হাওয়ায় গন্ধ হয়ে আমারই চারিপাশে;
নিথর অন্ধকারে যেমন জ্বলতে আছে জোনাকিরা
এমন রাত আমার হয় না আর।

ফুরিয়ে যাচ্ছি প্রতি রাত
জানালায় শব্দের কাকলি শেষ হয়ে এলো
এমন আশংকা আমার হৃদয় খুঁড়ে খায় বুঝি,
চোখের পাতায় ঘুমের কানাগলি
তুমি মাড়িয়ে গেলে আর আমি
সেই বসন্ত সকালের মতন পড়ে রইলাম
এই করুণ শীতের রাতে।


৬.

মরুতে বৃষ্টি এলে গাছেরা নাচতে থাকে
কিন্তু প্রেমিকের হৃদয় হায়
যেন পোড়া কয়লা,
একটু বাতাস পেয়ে জ্বলে ওঠে
আবার একটু জলের স্পর্শে নিভে যেতে চায়।

আমি যেন সেই মরুতে হাটতে আছি
দুপুরের রোদে
হাটতে হাটতে ফুরিয়ে যাচ্ছে কথা
বাগানের ফুল
অনিশ্চিত মেঘেরা কোথায় চলে যায়
মরু আকাশে
ঝুলে আছে আজ হৃদয়ের মত কিছু।



৭.

শব্দের অর্থ খুজতে খুজতে
তলিয়ে যাচ্ছি আমি
জানালা ভেঙে থাকাই
একটা আকাশ নীল
কিছু সবুজ পাতা আকড়ে থাকা ডাল
ঝরে যাওয়া মেঘের শেষ স্মৃতিটুকো
আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেনা কেউ।

তোমার কথা বলতে চাই না আমি
তবু সেই শব্দের ঝাঁঝ, ফুরিয়ে যাচ্ছে বুঝি,
দখিনের হাওয়া তোমার ঠিকানা হয়তো জানে
হয়তো আমি ঘুরতে ঘুরতে তোমার দুয়ারেই দাড়াই।


৮.

মনে হয় কত দিন হলো গত
কত বিষন্ন সন্ধ্যা আমাদের ছিল,
ফুলের কলির মতো ঝরে গেলাম শুধু।

রোজ রোজ মুখ দেখাদেখি
থেমে গেছে
থেমে গেছে দুপুরের হাওয়া
ভীরুপায় পৌছার জোর তাগিদ।

মনে হয় শীত নামে এই পৃথিবীতে
তুষার নামার রাতে
কত গীত গাইতে গাইতে
ছুঠে গিয়েছি গোপন আবদারে।


৯.

শহর থেকে শহরে ছুঠে চলি
হাওয়ার শব্দের ভেতর বসে থাকি রোজ,
আমাকে মাতিয়ে রাখে
এমন কোলাহল কোথাও নাই আজ।

তবু ছুঠে যাই
মাঠের প্রান্তর রেখে,
দূর দূর দেশের সীমান্ত পেরিয়ে
যদি তোমার দেখা পাই।

ডাক দিলেই বুঝি
শোনা যাবে।
কান পেতে রাখি
বধির শব্দ যদি
আমার পাশ কেটে যায়।


১০.

ব্যথার ফুল হয়ে ফুটে থাকি
বাগানে বাগানে,
বিছানা ছেড়ে কোথায় যাব আর
যদি স্বপ্ন ভেঙে যায়।

উৎসব প্রায় শেষ
তবু মেতে থাকি,
লোকেদের থেকে দূরে
বাঁধতে চাই এক ঘর।
একা, তোমার থেকে দূর
বিপন্ন পাখিটির মতো
উড়তে উড়তে
চলে যাব লোকালয় ছেড়ে।

গান থেমে গেছে
সকল গান
যে সকল সুর
আমাদের চেনা ছিল
উৎসব প্রায় শেষ।





০৬/০৬/২২ – ০৯/০১/২৪
ওল্ডহাম – প্যারিস