কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা'রা | বেলায়েত মাছুম

কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা, বেলায়েত মাছুম



আবার শব্দ, আবার গুলি


হয়তো গুলির শব্দ

হয়তো আবার মৃত
পাখির পালকে লেগে থাকে স্মৃতি বিভ্রম

কূপ জলে ভেসে উঠে অরণ্য
গহীন খাঁদের কিনারে বসে পান করি;
এক মাতাল গদ্যকার
প্রিয় বন্ধুর মতো

ডেকে তুলে অমাবস্যা রাতে

ডুবতে থাকি মৃতের চোখে
আবারো গুলির শব্দে
অরণ্য থেকে অরণ্যে


এবঝাক কবুতর
 সাদা আর খয়েরী
এক গ্লাস জল-ঘোলা, ভীষন লাল

পান করি ডুবতে ডুবতে শব্দের ঝাঁঝ
পাথর খসে পড়ে
উদ্বীগ্ন জল প্রপাত;
মেতে উঠি ঠোঁটের শব্দে

আরো, আরো বেশি গুলির শব্দে

পৃথিবীর শরীরে বুনতে থাকি নকশায় ক্ষত
আলোর মুখোমুখি অন্ধ চোখে



ওল্ডহাম
১৫/১২/২০১৫



শহরের কোন দেয়ালে


শহরের কোন দেয়ালে তার নাম লেখা নেই
অজস্র তারার সাথে সে জেগে আছে কি না, জানি না;
অদৃশ্য হাওয়ায় হয়তো ভেসে বেড়ায়
আমি তার চুলের ঘ্রান পাই— 
এই পথে যে চলে গেছে
একদিন তার ছবি জলের ভেতর দেখি


ঠোঁটের ভাঁজে কতদিন পুড়ে গেছে ফুল
হৃদয় শ্বশানে পড়ে থাকলাম পুড়বার আশায়
শালিক পাখির মতো গেয়ে চলে হাওয়া


শহরের কোন দেয়ালে তার নাম লিখিনি
কেবল পাথর আর জল ভাঙার শব্দে জেগে উঠি
কতদিন হেটে যাই বুকের পাড়ে
কতদিন ঘুরতে গেলাম ভীষন একা
দিন গুলো আর রাতের গন্ধ নিয়ে;
একদিন তার ছবি জমাট বাঁধে বরফ শহরে।



ওল্ডহাম
২৯.১০.২০১৫




রাত্রিরে ফোটা কোন ফুলের প্রতি


কেন এভাবে ঝরে যাও তুমি
আমায় একা রেখে অগোছালো বিছানায়


এভাবে আমিও যাই বিকেলে
প্রত্যেক দিন যেমন করে ডেকে উঠে
একটা শালিক পাখি
তোমাকে আর কোথাও খুঁজে পাইনা
কিংবা আমাকে তুমি যেমন করে বুঝো


এক সন্ধ্যায় তুমিও থাকবে জানি
যেমন করে বালিশ মিশে রয় চুলের ঘ্রানে মজে


কেন এভাবে আমাকেও যেতে হয়
জানালার থেকে অনেক বহুদূরে


তুমি আর আমি
অনেক দিন হলাম গত
গাছের থেকে ফুল, পাখির থেকে পালক
কত ঝরে গেল আমাদের এই নির্জন শহরে;


আরো কতকাল কেটে যাবে, এভাবে
রোদের ভেতর নিজেদের শুকাবো
তীব্র তাপদাহে পুড়তে পুড়তে একদিন
এমন দিনে তুমি আর আমি ঝরে যাবো।



ওল্ডহাম
০১.১০.২০১৫





কোন এক পাহাড়ি বর্ষায়


একরাতে আমি বৃষ্টি হবো, অন্ধকারে
একা একা ঘুরে বেড়াবো তোমার শহর;
হলুদ আলোয় ভিজে ভিজে ঘুরব
পাহাড়ি শহরের নগ্ন চুমোয়।


আমাকে ছুয়ে দেয়ার কোন হাত নেই,
কিংবা উষ্ণ অধরে আটকে রাখার
কোন মানবীয় কারণ-স্মরণ


আমি ফুল হাতে ঘুরে যাবো তোমার দুয়ারে
জানালায় আটকে রবে পাহাড়িয়া হাওয়া
কপালে কপাল ঘষে ঝুলে থাকবো হলুদ আলোয়;
আমি আবারো সংসারী হবো,
তোমার শহরে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
কোন এক পাহাড়ি বর্ষায়।



বার্সকপ, ওর্মস্ক্রিক
২০.০৭.২০১৫





একদিন যাবো ভ্রমণে


একবার সুন্দরবন ঘুরে আসি, চলো
সমুদ্রের কাছে মাঠ হয়ে শুয়ে থাকে
জল আর জল, নোনা শরীর নিয়ে।


আমরা ওদিকটায় যাবো, বাঘের গুহায়
চোখ বুজে দেখব কেমন খেলে ওরা,
বনের সন্তান, আমাদের মতো ঘুমিয়ে পড়ে
সরিসৃপ দ্বীপে নিজেদের ভেতর।
হরিণীর বেগে দৌড়ে পাড় হব
সবকটি সবুজ ঘাসের বিছানা,
আমাদেন পায়ে লেগে থাকবে হাওয়া
শামুকের চুমুর মত লেপ্টে থাকবো
আমরা আমাদের লবণ পানে।


সমুদ্রের স্বাদ নিয়ে সুন্দরবন বসে থাকে
আমাদের আশায় একদিন ভ্রমণে যাবো।



ওল্ডহাম
০৪.০৭.২০১৫




আমাদের খাওয়া-দাওয়া


আমরা ঘুড়ি, এখানে সেখানে শুয়ে পড়ি
ঘাসের মুখে চুমু খাই গাই গরুর মত
উড়তে উড়তে পাঠ করি আকাশী জল
আমাদের উড়ার সীমানা নাই, ডানা নাই।
জল এবং মাটির সাথে খেলা-খেলা করি
আমরা আমাদের চুষে মাতাল হই
ধুলোর শরীরে আঁচরে কত কি যে আঁকি
পাখির সুরে কেবল আমাদের গন্ধ পাই।
সাদা সাদা ভেঁড়ার পালের সাথে ঘুরি
বেড়াতে গিয়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলি
নদীর জলে নেমে, গেয়ে উঠি ডাহুকের মত
পলাতক আসামির রুপে আমরা পালাই।
আমরা ঘুড়ি, ইচ্ছে সোহাগে যত্রতত্র উড়ি
দুপুর রোদে ঘুমিয়ে থাকি নিজেদের ভেতর
সন্ধ্যায় পড়তে বসি আপন আপন বই
খিদে পেলে রাত্রিরে, আমরা আমাদের খাই।



ওল্ডহাম
০৪.০৭.২০১৫





সমস্ত কিছু ভুলে শুয়ে থাকি


সমস্ত কিছু ভুলে শুয়ে থাকি রাত্রির বুকে
জল সমান আকুতি নিয়ে
কাঁচের দেয়াল ছুয়ে নেমে আসে মেঘের শরীর
প্রেমিকার চোখের দিকে।


গোলাপী রঙের জামা পরে শহর প্রদক্ষিণ
হত্যার পুর্বে মেরে ফেলার কি প্রয়োজন।


জামার হাতা গুটিয়ে, বুকের কাছে রাখি
সর্ষে ফুলের গল্পটা, ঘোড়ায় টানা ঘানির ভেতর
দেখেছি মানুষও ঘুরে, ঘুরাঘুরি করে
ঝুলে থাকে ঘোড়ার লাগাম হয়ে
একদিন ফুলের কাছে প্রার্থনা দিয়ে পাখনা চাইবে বলে।


হয়তো এই সব সর্ষে ফুলে মৌমাছি বসেনি
সুরক্ষায় কোন মালিরও প্রয়োজন ছিলনা
এরা কোনদিন কোন বাগানে ফোটেনি
তবু যৌন বাতির সুরভী নিয়ে ঘুরে ফিরে, একদিন ঝরে যায়।


ভুলে থাকার তাবুতে ভোর নেমে আসে, আলো হাসেনা
প্রেমিকার বুকে চিকচিক ধোঁয়া, ঠোঁটের পাড়ে ঝলসানো জল
আহত সঙ্গম নিয়ে বিলাসী রাত, বুকের মরুতে হেটে
পৌছে যায়, যেখানে ঝুলে থাকে প্রেমের এপিটাফ।



ওল্ডহাম
১৪.০৬.২০১৫




উন্মাদ


শহরে এক উন্মাদ এসেছে
আজ শহরে এক বদ্ধ উন্মাদ এসেছে
তার খোচা খোচা দাড়ি, লাল সাদা চুল
ধূলোর কবলে পড়েছে
এই শহরে বেশ বেমানান লেগেছে
তারে কোন খেয়ালে ধরেছে।


শহুরে উন্মাদ
বিষন্ন হাসি খুশি উন্মাদ এক
তার জ্বলে উঠা চোখ নিভে যায়
নিভে যায় শহরের আলোয়
বাতিঘরে কোন ঘর নেই বলে
ঘুমিয়ে পড়ে তার বুকের কাছে।


তার দরপর করা বুকে
এই শহরের বেকুব হাওয়া লেগে থাকে।



ওল্ডহাম, 
০১.০৫.২০১৫





হয়তো


মনে হয় আবার সেদিনের মতো
খুড়াবো হিজল ফুল কুয়াশায় যত
হেটে যাবো বহুদূর সবুজের ভেতর
অপেক্ষায় থাকবে ততক্ষন ব্যস্ত শহর


না হয় আবার ডাকবে শালিকের দল
কিংবা একঝাক হাঁসের ভেঙে যাবে ঘুম
হয়তো পানকৌড়ি আবার দিবে ডুব
কেবল মনে পড়ে যাবে খুব
সূর্য কেমন দিয়েছিল জলের বুকে চুম


হয়তো সন্ধ্যা পার হয়ে যাবে
কিংবা লাল সূর্যটা তখনো জেগে রবে
ঘরে ফেরা হাঁসের দলের সাথে
লাল মোরগের আবার দেখা হবে


পেরেস্টন, ল্যাঙশায়ার
২৩.০১.২০১৪



চুক্তিনামা

এরকম আমারো একটা চুক্তি ছিল
নিঃশব্দতার।
জল ঘোলা নদীর মতন ঘুরে
একদিন পাথর
একদিন সর্ষে ফুল
আর তোমরা যেভাবে ভেবে থাকো
এমন ছায়ার।

রাতে কোন কিছু দিতে নেই
মা বকে ছিলেন
এমন দিন তারও ছিল
তার প্রমাতার মুখে।

কবি ছায়া শঙ্কায় ভুগেন
হয়তো ইশ্বরও
দিনকে আলোয়
সূর্য্য আর জড়তায় প্রচ্ছদ এঁকে।


একদিন শেষ হয় সকল শপথ
চুক্তিনামার
সড়ক পথে কোথাকার আলো
নিমেষে তলায়
আলেয়ার বাগান
দূপছায়া রাতে
মুছে দিতে হয়, যত ছিল
সব অঙ্গিকার।


ওল্ডহাম
০৩/০১/২০১৬