মানুষ অথবা পাখি অথবা পিঁপড়া এবং আরো কিছু কবিতা | বেলায়েত মাছুম


মানুষ অথবা পাখি অথবা পিঁপড়া এবং আরো কিছু কবিতা


ভ্রমণ আর বিভ্রম


যদিও বহুকাল হাটিনা তবু ভ্রমণে যাই- পাখির চোখ নিয়ে। দেখি সকালের আলোয় একটি মাত্র শিয়াল হাটতে থাকে নিজের ছায়া সহ। আমি উড়তে থাকি, স্তন্যপায়ী পাখির ডানা নিয়ে। 

দূরে সন্ধ্যা নামে। আমার চোখের সীমারেখায় বাদুরের চলাচল। ঘুমন্ত ফসলের উপর ঘুমিয়ে পড়ি। অগণিত রাত-পোকা চন্দন কাঠ পুড়াতে থাকে- মানুষের গন্ধ পেতে আমার সনাতন নাক হাওয়ার ভাঁজে ওৎ পেতে রয়। 

যেন বহুকাল ধরে আমার জানলায় কোন পাখি বসেনা। পালক ঝরার শব্দে আর সব রাতের মত অন্ধকার যদি পলাতক হয়- এই ভেবে আমি বহুবার ভ্রমণে যাই। কোথাও পৌছার আগে ঘোষণা হয়- মৃত পাখির চোখ অন্ধ হতে পারেনা। 

তবুও আমি ভ্রমণের স্মৃতি পুন্জীবিত করি। 



০৩/০২/১৯
সুইন্টন


হয়তো যাবো, হয়তো যাবোনা


পবিত্র দরজা ভুলে হাটতে থাকি, যদিও গাভীর ওলানের উষ্ণতা আমায় প্রতারিত করেনা; আমি হাটতে থাকি পানে মগ্ন এক সারঙ্গী বাদকের দিকে।

এমন দুঃখ পোষা বুক নিয়ে পৃথিবীতে কেউ আসেনি। 

গুন্জনরত জোনাকির গান যে আমি শুনতে পাইনা, এ জন্য কারে তুমি অভিশাপ দিবে?

বরফের চাতাল জুড়ে মেতে থাকে দুপুরের ক্ষয়া রোদ। আমার ছায়ার উপর ভনভন ঘুরে বেড়ায় আমার শরীর। দূর জাহাজের প্রতি আমি পত্র লিখি।

ঝড়ের উষ্ণ হাওয়া যখন ছুয়ে যায় গুল্ম শাখা আর তুষার ঝরতে থাকে পায়ের কাছে- মনে হয় হাওয়ার শব্দের সাথে শবগীত গাইতে গাইতে কে যেন আমায় নিরলে চাইছে।

আমি হাটতে থাকি পাখির পথরেখা ধরে, পোষা কলরবে বারবার পেরিয়ে যাই পরিচিত উঠোন। মৃদুগন্ধী জবা ফুল নিয়ে আমি আর কোথায় যাবো? 

সংসারী হবো বলে প্রেমিকার কাছে যাই। গোপনে তারে নাম ধরে ডাকি। নদী পার ঘিরে যে সকল সবজী ক্ষেত শুয়ে থাকে- যে সকল আনন্দ নিয়ে মেঘরাজি আছড়ে পড়ে- তার মতো করে একদিন বিষাদ গীতিকা গাইতে গাইতে প্রেয়সীর বিন্যস্ত বুকে চুমো খাই।

যাবো বলে হাটতে থাকি। হয়তো যাবো, হয়তো যাবোনা। 


৫/০১/২০১৯
সুইন্টন 


দূর ও আমি

আমি কেন দূরে চলে যাই? কাগজের ফুলগুলো বাতাসে উড়ে। পৃথিবীর সীমানা দিয়ে এক ঝাক কালো পাখি- হরিৎ চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি কেন আরো দূর ভালবাসি? পুকুরের জলে ডুব দেয়া ভুলে গিয়ে হাটতে থাকি পাখিদের পিছে। অসুখে যারা আমায় ভাবতে থাকে- মনে হয়- আমার মন নিয়ে তারা লুকোচুরি খেলে। মাছেদের ভ্রমণে কে কে যায়? জলের গভীরে এক পৃথিবী আছে। চলার স্রোতে যে সকল নাবিকের সখ্য হয়- তারা পরস্পর আমার থেকে দূরে চলে যায়।


দূর থেকে দেখা যায় দূরের পাহাড়। মেঘেদের নিকট তলে এক সন্ন্যাস হাওয়া- যে জাদুকর তার হাত ভুলে গেছে। আমার পুলক নিয়ে রুপসী রাত- ভাসতে ভাসতে তবু সন্ধ্যার দিকে যায়। দূর থেকে দূর সীমার ভিতর এক আমি জেগে রই। পলকের আবরণ নিয়ে পৃথিবীর তলে দু'টি পা পাশাপাশি- দু'টি চোখ পাশাপাশি- কেবল ধীরগতি হয়ে আমার দিকে ধাবিত হয়। 

দূর থেকে আমি মেঘদের দেখি। পাখীর পালকের শব্দে তন্দ্রা আসে। অন্ধকার ছুয়ে ছুয়ে এক নীল অবতার- সকলের গোপন হয়ে নদীগামী হয়। জলের গভীর তলে এক পৃথিবী আছ। ফুলের চাষ ভুলে মাছেরা সংসারী হয়। 

 দূরের হাওয়া নিয়ে আমি ঘরে ফিরে যাই। এমন দেয়াল বুনি আমার চারপাশে- যেন কিছু পুতুল মাটির আসবাব নিয়ে তৈরি থাকে যাযাবার হওয়ার। কাল যেমন গত হতে হতে- আমার থেকে আমায় দূরে নিয়ে যায়। দূরে শহর আছে- গ্রাম আছে। জলের উপরে যে পৃথিবী থাকে-আমি তারে- তোমাদের সংসার বলি।



১২/০৫/১৯
সুইন্টন

আরো একটি স্বপ্নের বর্ণনা কিংবা অপবর্ণনা


আমি কোথাও যাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়ি
স্বপ্নে একটা হাঁস দেখি
সাদা হাঁস ভায়োলিন বাঁজাতে বাঁজাতে
কাছের বনের দিকে হাটতে থাকে

আমার পোষা কোন শিয়াল নেই
তবুও একটা শিয়াল মাছরাঙা পাখির মতন
মাথার কাছে সারারাত ধরে গান গায়

স্বপ্নে একটা বাদামী প্রজাপতি উড়ে
আয়নার কাছে আমার মতো এক অপরিচিত লোক বসে থাকে
আমি তারে দেখতে থাকি

আমি কোথাও যাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়ি


১৬/০৯/২০১৮
সুইন্টন



মানুষ অথবা পাখি অথবা পিঁপড়া


মানুষদের কাছে আবার পাখির মৃত্যু বিষয়ক গল্পটা বলতে হয়। তারা কিছু শোক বার্তা পৌছে দিতে চান মৃত পাখির আত্মীয়ের কাছে। পাখির স্মৃতি বিষয়ে তারা জিগ্যেস করেন- আমার সে সম্পর্কে কোন ধারণা নাই। 

একটা কালো পাখি কথা বলতে থাকে। আর সকল পাখিদের মতো সেও জানতে পেরেছে- পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রপতি এক অমাবস্যা রাতে মৃতপাখির জন্য বেদনা নিয়ে হাজির হবেন। শোকবইয়ে দুই বাক্য প্রাচীন শ্লোক লিখতে লিখতে তারা ক্লান্ত হয়ে গেলে আবার পাখির মৃত্য বিষয়ক গল্পটা শুনতে থাকবেন।

প্রথম পিঁপড়া। দ্বিতীয় পিঁপড়া। তৃতীয় পিঁপড়া। অসংখ্য পিঁপড়া মৃত পাখির গল্পটা বলতে বলতে ঘড়ির দিকে থাকায়। মানুষের জন্য যে সবচেয়ে বেশি বেদনা পোষে সে হলো ঘড়ি। মানুষ গল্পটা শুনতে থাকে। 


১৬/১১/১৮
ওল্ডহাম