দিনলিপি | বেলায়েত মাছুম

দিনলিপি - বেলায়েত মাছুম



১.
এইভাবে একদিন লিখে রাখি জানালার কথা, দক্ষিণের হাওয়ায়
ভাসা ফুলের রেণু,পাখির পালক হতে গুনগুন আওয়াজ; শব্দের
ভেতর কাঁপা শোভন আলো, পাতার শরীর থেকে জোনাকীর বাণী,
লেখা হয় পাথর ঘষে সমুদ্র ভ্রমণ- শৈবাল শরীরে আঁচর মেখে।


২.
তার ভাল লাগা বলতে ছিল হৃদয়ের অসুখ। বিপন্ন আলোয় চোখ
ঢলতে ঢলতে যোগ দিত সন্ন্যাস যাপনের প্রাথমিক ভোজ সভায়।
ওখানে পাথর আর ফুল পরস্পর মুখোমুখি বসে। সে তার হৃদয়ের
ভাঁজ খুলে দেখায়- একটা বিষন্ন দেবদারু গাছ, কোনমতে বেঁচে থাকা
একটা পানকৌড়ি কেমন করে ছটফট করে জলের টানে।

নোনা জলে ঠোঁট ডুবিয়ে কোন পাখি চুমো খায়নি মাছের চোখে,যদিও
সকল নদীই সমুদ্রগামি। সে তার হৃদয় নিয়ে ভ্রমণে যায়, জলপথে।


এক ভোরে খবর পেলাম, সে চলে গেছে হৃদয়ের অসুখ নিয়ে।


৩.
এই গ্রীষ্মে গাছের পাতারা আবার জেগে উঠবে যদিও আমি শহর
ছেড়ে চলে যাবো অসুখ নিয়ে, কেউ মনে রাখবে না, হয়তো হাওয়ার
কাছে কিছু কথা- কিছু শব্দের প্রতিধ্বনি দেয়াল হতে দেয়ালে
অশরীর স্পর্শে কোন দিঘির স্ফটিক আয়নায় - ঝরে যাবো।


৪.
সমুদ্র স্নানে যেদিন যাই,  আকাশী গাছের  মতো দুলতে থাকি।


৫.
দারুণ এক টিভি পর্দা। ওখানে রান্না হয়, চেয়ার, দোর, বাগান বেড়ে
উঠে। জলোচ্ছাসে ভেসে আসা গল্পের জন্য অনুদান প্রাপ্ত নবিশের
চিতায় আগুন পোড়ানো হয়। চোখের ভেতরে যে সময়ের কাটা ঘুরে
তার নাম আমরা কোন নায়িকার নামে জানি, নায়কের নাকের কাছে
জমা রাখা ফুলের পাপড়িতে ঝুলে থাকা পিপড়ার চলন চিত্র দেখে ভ্রমণে
যাই -  এক  মৎসকন্যার কান্না মুছে দিতে।

৬.
শব্দটা জলজ। জলে জল পড়ার শব্দ। শব্দে দুলে উঠে দেয়াল। রাতে
অন্ধকার নামে। চাঁদ হাসিমুখে থাকায় । হাসের চোখের পাতায় ঘুম।
শালিক ডেকে উঠে। শেষ রাতে বাড়ি ফিরে চোর। শব্দটা জলের। পুকুর
পাড়ে মৌ দের ঘর। আমার নাকে ব্যথা। শ্মশানের চোখ নেই কোনো। ঘুম
পায় শুধু। সুপ্রভাত আমায়।

৭.
আয়নায় যারে দেখি, তার প্রসন্ন চোখ। পায়ের নকের কাছে স্হায়ী
মার্কারি দেয়া। লবণে স্নান শেষে বসে আছে আয়নার ভেতর। সুগন্ধী
আগরে অচেনা ভ্রমর ঘুরঘুর করে। জানালার ছায়ার পরতে জড়িয়ে
রাখা নিজস্ব খেতাব- চেনা যায় তারে।

যেভাবে ঘুমিয়ে পড়ার ভান করি, ঘুমের শব্দে জেগে উঠে ভাবি- ঘুমাই।

৮.
জানালায় দাড়ালেই দৃষ্টি পুড়ে, ছাই দানা ফিরে যেতে যেতে ফিরে
থাকায়। কবুতর শরীর হতে যে পালক মাটি ছুয়ে ঘুমোয়, মনে হয়
ঘুমায়, আমার দৃষ্টি কেবল দ্বীধায় পুড়ে।

৯.
ঘুমন্ত ঘড়ির ভেতর শুনা যায় রাখালিয়া বাঁশি। যাযাবর কোন এক
নিশাচর ডানায় মেতে উঠে উড্ডীন শহর। 

১০.
ঘাসের শরীরে জ্বর, তার কপাল নেই। মাপন যন্ত্র আবিষ্কারের গল্প
সে জানেনা। রোদকে এতদিন বন্ধু ভেবেছে, তাপদহে পুড়ার আগে
কোন হিসাব জমা-খরচের খাতায় লিখে রাখেনি।

১১.
ইদানিং চোখের রোগে ভোগী। ভ্রমণে গেলে সবুজের দিকে থাকাই।
যদিও ডাক্তার বলেছেন চিকিৎসা প্রয়োজন, বিদেশী হাসপাতালে।

১২.
শীত। ঝরা পাতার শরীর হয়ে নেমে আসে। এই শীত শহরকে ভালবাসে।
গ্রামের ভেতর দিয়ে হেটে যায় এক গ্লাস উষ্ণ চায়ের চুমু পেতে। 

১৩.
বৃষ্টির শব্দে মেতে আছে ফুল। আর কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে নাকি? 

১৪.
এখন ঘুমের আকাল। তবু ঘুম ঘুম চোখ, ভাঙার শব্দে মেতে থাকে।

১৫.
মৃত্যু দৃশ্যটা কল্পনা করা যাক- চারপাশে প্রতারিত হাওয়া
আর ভিতর বাহির শব্দ ভাঙার গুন্জন। 



     ২০১৫ - ২০১৭