পাঁচটি কবিতা : ডিসেম্বর আর ডিসেম্বর সংক্রান্ত | বেলায়েত মাছুম




ছবি সুত্র: অন্তর্জাল



মৃতদের দিক হতে উঠে আসি


মৃতদের দিক হতে উঠে আসি
গোটা দুই পায়রা হাতে
সন্ধি করব বলে,
ওগুলো মৃত কি না, তারা জিঙ্গেস করলেন?
পায়রা দুটোর চোখের দিকে থাকাতে বললাম
তারা খুব ভালবাসেন ওদের, জীবিত কিংবা মৃত
চোখগুলো সাদা,ঢেউ এর ফেনার মতো।
ইচ্ছে করে ডেকে তুলি,  চোখ মেলে দেখুক
এই সন্ধির সময়
কেমন ঘুর্ণি
বঙ্গোপসাগর হতে নদীর স্রোত
মৃতদের ডেকে আনে বুড়িগঙ্গার বৈঠকে।

মৃতরা পিছনে থাকায় না, পিছনেও মৃত
পল্টনে যাওয়ার সাহস নেই, তাই হাসপাতালের করিডোরে
মিছিল ভেঙ্গে জড় হই।

তবু মৃতদের দল থেকে হেটে  আসি
শহরের সোডিয়াম বাতির দিকে থাকাই
এগুলো নেভেনা কেন
আর একটা কাক এই রাতে
এই শহরে কোন পেঁচা নেই
ইদুর কিংবা দু'চারটে মানুষ?
জীবিত মানুষ, যারা জল কামানে স্নান করবে বলে
পল্টনের পথে হাটে।




তবুও আমরা বেঁচে আছি  এই শহরে

তবুও আমরা বেঁচে আছি  এই শহরে
বেঁচে আছি শরীর নিয়ে,শহরের প্রাণ হয়ে
কেবল মাংস আর রক্তে, কোন হাড় নেই।

আমাদের বেঁচে থাকা মানে দুধের সর
নাভীর নিচ কেবল আবরণে ঢাকা
নলকূপ থেকে জল পড়া দেখে
যেমন স্নান করে কৈতর পাখি।

আমাদের হাটতে হয়, কুকুরও হাটে
এই শহরে একই রাস্তায় বাদামী আলোয়
হাটা মানেই কি পায়ের ক্ষয়
রাস্তাও হাটে পায়ের তলে
তাই আমরা জনতা হয়ে উঠি!

প্রতিদিন চোখ মেলে দেখি একই আলো
ভাঙা আয়নায় মুখখানা দেখে
নিজেরে নিজেই ধর্ষণ করি।




মৃতবাস

এরা সকলেই ভাবল, এটা মৃত শরীর
যত দ্রুত সম্ভব স্নান দিয়ে,সুগন্ধি সাবানে
নিয়ে গেল বাড়ির উঠানে
শক্ত সামর্থ্যানুযায়ী কেউ কেউ এলো
কেউ ঘরে বসেই বউ-ঝির সাথে গল্প করে
যারা প্রার্থনা জানে,চলে গেল মসজিদে-মন্দিরে
যত পাপ ছিল, এইসব অপরাধের
ক্ষমা করে দিয়ে
কেউ শরীর নিয়ে গেল শ্বশানে
আর কেউ বয়ে চলে গোরস্থানে
অথচ তখনও বসেছিলাম
প্রেমিকার বুকে, মায়ের কোল জুড়ে।

তাদের কেউ জানেনা শরীরের ভেতর
একটা পোড়া রোগ এক বিকেলে আমায় ভীষণ কাঁদিয়েছিল,
জানি কাঁদতে নেই,
তবুও বেহুলার মতো কেঁদে
ঝুলে থেকেছি এই শহরের সরিসৃপ দ্বীপে।

এই দ্বীপ রাষ্ট্র আমায় ভুলে যেতে যায়
এই জলের কেউ নই আমি
এই শহরে কোন বাদুর জন্মেনি
ইদুরের হার বেড়ে যায় কেবল,
সুগন্ধী সাবানের দাম বেড়ে গেছে
এই সাবানে আর মোজা ধোয়া যায়না,
তেল আর জলের দিকে থাকালে নিজেকেই দেখি
খসখসে মুখ আর নাকের ছবি।

এখানে অনেকেই জেগে থাকে
শরীরের ভিতরে, নিজের লোম হয়ে
তাই দিন আসে মৃত্যুর
মরে যেতে হয় বাদুরের চোখ নিয়ে।




পথ

আমাকে তোমরা পথ দেখাতে পারো
নানাবিধ পথ, ডান কিংবা বামের
পাহাড়ের দিকে যে পথ চলে গেছে, সে দিকে-
সবুজ গাছগুলোর সতেজ পাতার উপর আঁকা বানরের ছবি
দেখিয়ে বলতো পারো,  ওটা একটা চাকমা মেয়ের
যে কিনা ফিরে আসে নি। আনারস বাগানে যারা মালি ছিল
তারা এই পথ দিয়েই যেত, লেবু ফুলের গন্ধ এখনো লেগে আছে হাওয়ায়।

ফেরার কথা উঠলেই পথ এসে যায়
সমুদ্রমুখি পথে কেউ দাড়িয়ে নেই, ভাবছিলাম
সে পথেই ফিরব, একদিন।

তোমরা আমায় বলেছিলে পথের কথা-
সেদিন মিছিল গেল, সরকারি দলের
বসে থাকলে অনেক্ষণ, অনেকগুলো বছর
ধুলোর সাথে কত কথা হল, ঘড়ির মুখোমুখি চোখ রেখে
চুমো খেলে কতবার নিজের ঠোঁটে-
সে হিসেব যতন করে রেখে দিলে
তারপর আরো মিছিল এলো- বিরোধীদল, বামদের
জাতীয় সম্পদ রক্ষার, রোড মার্চ আরো অনেকের
সামনে পুলিশ, পিছনে জল কামান নিয়ে-

তারপর কি হলো?

কবিকে জিগ্যেস করতে নেই। কবি পথের কথা লিখে রাখবেন
তার নরম খাতায়। প্রতি টান হবে পরম মমতার। ধুলোর শরীরে
খুঁজে পাবেন কোমল উষ্ণতা। শুধু একদিন যে পথে পথ শেষ হয়ে যায়
কবিকে দাড়িয়ে থাকতে হয়।

ফটোগ্রাফার ছবি তুলছেন পথের
সেই পথ, যার কথা বলেছিলে তোমরা
শুধু কোন দিকে চলে গেছে তা জানা নেই।




মানচিত্রে

আমাকে সমুদ্রের কথা ভাবতে দিন
কিংবা জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত প্রিয় কুকুরের স্মৃতি;
যার গান শুনে আমাকে কবিদের মতো উদাস হতে
দেখা যায়- তার ঠোঁটের কাছে জড়ো হই-

যে সকল পাহাড় হতে পাথরের ঝর্ণা ঝরে
মায়াবী সবুজ ঘাসের পরতে পরতে ঘুমিয়ে থাকে-
আদিবাসী নারী ও পুরুষেরা-
তাদের বুকের পলিতে আমায় পুড়ানো হোক;
হৃদয়ের ভস্ম মিশে যাক শ্রান্ত হাওয়ায়-

পাহাড়ে কোন দুপুর নেই, কেবল সকাল আর সন্ধ্যা
গাছের ছায়ার কাছে ওত পেতে থাকে সমুদ্র-ড্রাগন
জঙ্গলের হাওয়ার উড়ে বেড়ায় পরিযায়ী পাখির গান
বন বিড়ালের নখের আঁচরে অঙ্কিত হয় প্রিয় মানচিত্র-