পথিক নবী - এক হেরে যাওয়া ফুল


অচেনা পথিক- পথিক নবী


  গানের ভক্ত বলেই হয়তো, দোকানে প্রিয় শিল্পীর নতুন কোন ক্যাসেট আসলেই সংগ্রহ করতাম।বাজারে প্রতিদিন যাওয়া নিষেধ ছিল, শুধু বাজার বারেই যেতাম, স্কুল ছুটির পরও মাঝে মধ্যে যেতাম বই খাতা কেনার জন্য, এই সুযোগে ক্যাসেটের দোকানে যাওয়া হতই।

  ২০০২ সালে নতুন একটি ক্যাসেট আসলো দোকানে, একেবারে নতুন শিল্পীর। প্রচ্ছদে শিল্পীর কোন ছবি নাই, ভেতরে একটা আছে অস্পষ্ট। কিন্তু প্রচ্ছদটা আমায় আকৃষ্ট করেছিল। কেননা ছোট বেলা শিল্পীর নামের পরে ক্যাসেটের প্রচ্ছদ দেখেই ক্যাসেট কিনতাম। অ্যালবাম ও শিল্পীর নাম ছিল একেবারে ভিন্ন ধরনের, অচেনা পথিক- পথিক নবী। দোকানদারকে বললাম ক্যাসেটটা বাঁজাতে, কিন্তু রাজি হলেন না, পরে অনেক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে,ক্যাসেট বাম হাত-ডান ঘুরিয়ে কিনে ফেললাম, দাম পঁয়ত্রিশ টাকা।

  বাড়িতে ফিরে গান শুনে মুগ্ধ। গানের কথা, সুর একবারে ভিন্ন। এতদিন ধরে যে সব গান শুনছি তার সাথে এর কোন মিল নেই, মনে হলো এ এক অন্য জগৎ। রাখালরা যেমন মাঠে গান গেয়ে বেড়ায়, এই লোকটাও বেড়ালো। আর একদিন নেই হয়ে গেলো। নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। বাজারে হারিয়ে গেলো। প্রথম এবং হয়তো শেষ দেখেছিলাম ২০১২ সালে। সেই থেকে অনুমান করতে পারি হয়তো পথিক নবী পথের খুজে ঘুরছেন, হয়তো আবার শোনা যাবে তাকে।


এবার পথিক নবী'র অচেনা পথিক থেকে কিছু গান পড়া যাক। গান শুনার সময় লিখেছিলাম, ভুল থাকতে পারে। শুধু "ডাইরেক্ট ডাইরেক্ট" গান ঠিকঠাক বুঝতে পারিনা বলে লিখতে পারিনি।



নদী

আমার একটা নদী ছিল, জানলোনা তো কেউ
এই খানে এক নদী ছিল, জানলোনা তো কেউ
নদীর জল ছিলনা কূল ছিল না, ছিল শুধু ঢেউ

সেই ঢেউয়েতে ভেসে ভেসে
নৌকা হেথায় এলাম শেষে
এখন আমি সাঁতার কাটি
সাঁতার ভোলা কেউ-

বাঁক ছিল তার শাঁখে শাঁখে
শাঁখে শাঁখে বাঁকে বাঁকে
বাঁকে বাঁকে জমলো মেলা
মেলার ভীড়ে একলা একা
সুজন হারা কেউ-


অচেনা পথিক

তারা ভরা রাত
মন ছুয়ে জল
জোনাকির কোলাহলে
অচেনা পথিক কোথা যাবি চল

অনেক দূর, বহুদূর যাবার কথা
যেতে হবে যেন সব ভুলে, কোন দূ:খ নেই

অচেনা পথিক যাও যাও
পা পসকালেই শুধু হয়
গল্পের শেষ নেমে যাবে
সাবধানে প্রতি ধাপ বন্ধু

এ গানের আরো কিছু লাইন আছে বাকি
ওরা এক্ষুনি এসে যাবে
চল এগিয়ে চল্ চল্
চল এগিয়ে চল্ চল্
চল এগিয়ে চল


ভাঙ্গা পাড়ের

ভাঙ্গা পাড়ের উধলারে দেউরি
মেঘলা নীল অন্তর
বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে
দগ্ধ তেপান্তর-

অরূপ চাষি লাঙল চালাই
বুকের উপর
অনাবাদী বালুর বনে
তুলিব বাসর-

বীজ বুনেছি ঢেলেছি জল
মরুর উপর
হারায়েছি যে ধন তাহার
না রাখি খবর-


পথিক নবী
সুত্র: www.banglamail24.com 


পাখি উড়িয়া উড়িয়া

পাখি উড়িয়া উড়িয়া উড়িয়া উড়িয়া উড়িয়ারে যায়
একটা সাদা পাখি আমাকে ভাবায়-

পাখির ঠোঁটের ক্ষীণ তৃণ আমাকে জানায়
তোমার ঘরে ফেরার বেলা যায়-

ভাবি কোথায় ফিরিব, ঘরইতো বাঁধি নাই
আসলে কি ফেরা যায়
আসলে কি ফেরা হয়
নাকি শুধু শুধু পরে থাকা
ধুল আর ধুলার মায়ায়-

একটা সাদা পাখি আমাকে ভাবায়-


অসীম শুন্যতার মাঝে

অসীম শুন্যতার মাঝে
কে বাঁজাই আর কে বাঁজে
কেউ না কেউ না নিজে নিজে-

সাধের বনভূমি ছাই, 
ঝরণারা কেঁদে বলে কি যে
এই আর নেই তো সেই আমি
প্রিয় আগুনে ভিঁজে ভিঁজে-

হৃদয়ের কলিগুলো ফোটেনা
মেলিনাই সবটুকু চোখ
বেদনার ক্ষত আরো গাঢ় হয়
মধুর গভীর রাত ভাঙল সাঝে-

তাই তো কোথাও তোমায় খুজিনা
এইতো আমার কাছে তুমি
তুমি আমার, আমি তোমার
তোমাতেই আমি, তুমি আমার মাঝে-


মানুষ আমায় প্রশ্ন করে

মানুষ আমায় প্রশ্ন করে
কি পেলি পাগল
কি করে বলি তোমাদের-

কোথায় ছিলাম এখান থেকে দূরে, 
কি করে বলি তোমাদের-

এই যে একটা গান
কেউ কেউ তোমরাই যে সুরে, দূরে
কি করে বলি তোমাদের-

তোমাদের মুখ, মুখচ্ছবি
ব্যথা, কথা এই হৃদয় জুড়ে, দূরে
কি করে বলি তোমাদের-


কে আমাকে ভালবাসিবে

কে আমাকে ভালবাসিবে
কে জানাবে শেষ বিদায়
আমি কাউকে ডাকিনাই
আমিতো কাউকে শুধাই নাই

স্বপ্ন রেখে গল্প রেখে
আমি যাই চলে, আমি যাই
আমার ছিড়েছে পাল, ভেঙ্গেছে বৈঠা
খবর রাখি নাই
আমি তো আমাকে জানি নাই
আমি তো আমাকে বুঝি নাই

কে আমাকে পাড় করিবে
উতল দরিয়ায়
আমি তো সাঁতার শিখি নাই
আমি তো ভালবাসি নাই

অন্ধকারের বাসা-বাড়ি 
আমার ভিতরটাই
আমি আলো জ্বালি নাই
আমি পথ চিনি নাই
চক্ষু নিয়াও অন্ধ আমি
কিছুই দেখিনাই
আমি তো কিছুই জানি নাই
আমি তো কাউকে শুধাই নাই

সোনার জমিন পড়িয়া রইল
আবাদ করি নাই
আমি তো আমাকে চাষি নাই
আমি তো ভালবাসি নাই
আমি তো......


আমি তা আবার হারাই রে

ও তার চপল চাহনি যেন হাসির খনি
আমি তা হারায়ে পাই রে
ও সে গোলক ধাঁধা, ধাঁধার ফেড়ে পরে
আমি তা আবার হারাই রে

আমর চাতক কামনা অনাদরে শুকিয়ে
নৃত্যে নদী হয়ে ধায় রে
স্বপ্ন শিকলে

স্বপ্ন শিকলে আটকে ক্লান্ত পা
ঘুম রাতের ময়ুরী হারা হরিণী মন
তবু আশারা বড় হতে চায় রে