প্রপিতামহের স্বরবর্ণ পরিচিতি

আমার প্রপিতামহের কথা ভাবি, যিনি বেঁচে নেই। থাকলেও আমায়
চিনতেন কিনা জানি না। উনার নাবালিকা স্ত্রীর কান্নার শব্দ আমার
কানে না পৌছলেও তাঁর গাওয়া গুনগুন সুরের আওয়াজ এই বাতাস
এখনও বয়ে বেড়ায়। এই খবর কে আর রাখে? গ্রাম্য সব সন্ধ্যায় তিনি
অলস বসে থাকতেন, হুকা টানতেন আর বৌ-ঝির সাথে নানান গল্পে
ভরিয়ে তুলতেন- এই রকম আরো অনেক কিছুই লেখা যায় তাকে
নিয়ে।কিন্তু যাকে আমি চিনিনা, জানিনা, তাকে নিয়ে কি আর লিখব?

আমি যেহেতু লেখক হতে চাই, তাই কোন না কোন কিছু লিখতে হয়।
যদিও প্রতিদিন লিখিনা, যখন তখন লেখার অভ্যাস আছে। যাচ্ছেতাই
লিখে ভরে ফেলি পাতা। এখন কলমের কালি ও পাতা অপচয় হওয়ার
সুযোগ না থাকলেও খাতার পাতায় লেখার লোভ সামলাতে পারিনা।

আমার প্রপিতামহের কথা লিখছিলাম। তিনি কৃষক ছিলেন, পুত্রদের
মতো। হাল-চাষের শিক্ষা হয়তো উনার পিতার কাছ থেকে শিখেছেলেন।
কখন ধান বুনতে হয় তার জানাছিল। পৌষের আগে বলদগুলোকে তৈরী
করতেন। ভাঠি জমির নরম পলিতে লাঙল চালাতেন আর বৈশাখের পাঁকা
ধানের গন্ধে নিজেকে সুখি কুমির ভাবতেন।

আমি প্রথম যে স্বরবর্ণ শিখি, ওটা কোন অক্ষর ছিলনা। ওটা মায়ের
দুগ্ধ পানের শব্দ ছিল যা কোন অক্ষরে লেখা যায় না। আমি শিখতে
থাকলাম, অক্ষরে অক্ষরে ভরে উঠল মাটির ভাঙা শ্লেট। মুছি আর
লিখি। না মুছা দাগে আকঁতে থাকি মানচিত্র, এভাবে একদিন
আমার রাষ্ট্র ভাষাকে জানতে থাকি মাতৃভাষা রুপে, যদিও আমার
মা রাষ্ট্র ভাষা জানেন না।




ওল্ডহাম/২০১৫