এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে?

কয়েক দিন আগে ভারতের চেন্নাইয়ে বন্যায় কবলিত এলাকার একটা ছবি ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় চেন্নাইয়ের রাস্তায় কোন বাঁধা ছাড়াই মুসলিমরা নামাজ আদায় করছে এবং অন্যরা দাড়িয় দেখছে। এই ছবিতে মানবতা বা মানবিক গুণের প্রকাশ হয়েছে কারণ মুসলিমরা কোন অসুবিধা ছাড়াই তাদের ধর্ম পালন করছে। এমন দৃশ্য বাংলাদেশেও দেখা যায় নিশ্চয়- যেখানে অন্য ধর্মের লোকেরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে এবং মুসলিমরা বলছে এটাই মানবতা কারণ অন্য ধর্ম পালনে তারা তো বাঁধা দিচ্ছেনা।

এই রকম মানবিকতার কোন দৃশ্য যখন আমার চোখের সামনে আসে তখনই মনে হয় এইসব জায়গায় আসলে নাগরিক অধিকার, সমান বিচার ব্যবস্থা বলতে কিছু আর অবশিষ্ট নাই। যারা দূর্বল, সংখ্যায় কম, তারা প্রসাশনিক তাচ্ছিল্যতার সাথে রাজনৈতিক অত্যাচারেরও শিকার হন। অথচ যারা সংখ্যায় কম, তারাও রাষ্ট্রর নাগরিক এবং সমান অধিকার, সমান বিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পায় সংখ্যায় বেশি সবলদের কাছ থেকে অদ্ভুৎ মানবিকতা।

এখন আমার প্রায়ই মনে হয় মানবিক ভাব প্রকাশ কিংবা মানবতা রক্ষা করার প্রবণতা হলো সংখ্যায় যারা বেশি বা সবল, তাদের সৌখিন একটা গুণ। পৃথিবীর যত জায়গায় মানবতা রক্ষা করা হচ্ছে,  সব সব জায়গায় দূর্বল আর সংখ্যায় কমেরা মার খাচ্ছে এবং মরছে। কারা মারছে? অবশ্যই সবল এবং সংখ্যায় বেশিরা। যাদের কাছে অত্যাধুনিক মানুষ মারার যন্ত্র আছে, রাজনৈতিক শক্তি আছে। সেটা হোক বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা কিংবা রাশিয়া বা সোমালিয়া।

আমার কাছে সবচেয়ে জঘন্য শব্দের একটি হলো সংখ্যাগুরু। এই শব্দ যেখানেই উচ্চারণ হোক না কেন মনে হয় সেখানে সমান অধিকার, সমান বিচার পাওয়ার অবস্থা নেই কিংবা তা পাওয়ার ব্যবস্থাও নেই। বিশেষ করে আমাদের মতো রাষ্ট্রে। অথচ কথা ছিল সংখ্যাগুরুরা জন্ম নিয়ে যে অধিকারে তার রাষ্ট্রে হাটে, ধর্ম পালন করে, সে অধিকারেই সংখ্যালঘুরাও হাটবে, ধর্ম পালন করবে কারণ এটাও তার রাষ্ট্র- জন্মভূমি।

সংখ্যাগুরু- সংখ্যালঘু, এই দুটো শব্দ মনে রাখতে চাইনা। মুছে দিতে পারলে- দিতাম। এই দুটো শব্দ যখনই উচ্চারিত হয় চোখের সামনে ভেসে উঠে অত্যাচার আর অবিচারের দৃশ্য, পাহাড় এবং সমতলের। যতদিন পর্যন্ত প্রসাশনিক কাঠামো ঠিক না হচ্ছে এবং সমান বিচার ব্যবস্থা কায়েম না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এরকম অত্যাচার, অবিচার এবং প্রহসনের মানবতা থাকবেই।

আমি ঠিক জানিনা কবে এমন দিন আসবে, যেদিন আমাদের রাষ্ট্র আমাদের হয়ে যাবে, আমরা সকলেই যার যার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকব পাশাপাশি। আমরা মানুষ হয়ে যাব, অন্য কোন শব্দ দিয়ে আমরা আর বিভাজিত হবনা। আমাদের মানবিক গুণ প্রকাশ করব অন্য কিছুর প্রতি। এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে?



ওল্ডহাম
১৭/১২/২০১৫