১. ২০১৩ সালে রমজানে, ব্রাডফোর্ডের একজন আমায় জিগ্যেস করেছিলেন মুসলিম রা কেন এক হতে পারে না, এক মতে পৌছতে হলে কি করা প্রয়োজন? আমি কোন ভাল উত্তর দিতে পারিনি আমার দূর্বল ইংরেজী ভাষার জন্য। আমার মনে হয় সকলেই জানেন কেন মুসলিমরা এক হয় না, এক হতে পারেনা এবং এক হবেও না। একবার এই বিষয় নিয়ে আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম, সে আমাকে একটা ছোট্ট ঘটনা বলল যেখানে সেও ছিল। সে একটা দোকানে কাজ করে এবং একজন সহকর্মী মুসলিম। রমজানে ইফতারের সময় হলে দেখা যায় তারা দুই জন ২০-২৫ মিনিট ব্যবধানে ইফতার করে, তা দেখে অন্য ধর্মের এক সহকর্মী বলল- " তোমরা দু'জন মুসলিম, একই দেশ এ থাক, একই ভাবে রোজা রাখ অথচ দুই সময়ে খাও এটা কেন?" তারা দু'জন জানালো যে তাদের দেশীয়দের অনুসরণ করে বলে এমন হচ্ছে। তখন ঐ সহকর্মী আবার বলল "যেখানে তোমরা দু'জন এক হতে পারছোনা সেখানে পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলিম কেমন করে এক হবে।" তারা কোন উত্তর দিতে পারে নি। শুরু থেকেই মুসলিমরা ভিন্ন ভিন্ন মতে বিভক্ত কিন্তু কেন?
২. আমি যে এলাকায় থাকি সেখানে ভিন্ন ভিন্ন রঙের, ধর্মের মানুষ বাস করেন।কালো, বাদামী, সাদা মানুষ সকলেই থাকেন। এদের কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ খৃষ্টান, কেউ শিখ আবার কারো কোন ধর্মই নেই। দেখা হলে কথা বলেন, কুশল বিনিময় করেন। যার যার মত করে যাপন করেন। কারো কোন অসুবিধা হচ্ছেনা। এখানে বলতে পারি কোন সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ নেই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি এমন ছিলাম, উত্তর না। আমাদের দেশের সাথে মিলালে অনেক পার্থক্য চোখে পড়ে। কেন এমন হলো? আমার মনে হয় এখানে রাষ্ট্রের আইন আমাদেরকে বাধ্য করেছে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী আচরণ না করতে। আর তা একদিনে হয়ে উঠেনি, ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে এসেছে। রাষ্ট্রের আইনগত দুর্বলতা নাগরিকদের সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী হয়ে উঠতে সাহয্য করে। আর এর সাথে ধর্মে বা অধর্মে অন্ধ অনুসরণ যুক্ত হলে তা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠে। প্রয়োজন নাগরিক অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ, যা মানুষকে আরো মানুষ হয়ে উঠতে সহযোগিতা করবে।
৩. আমার একজন পরিচিত আছে যে কোন ধর্ম পালন করেনা। তারে একবার জিগ্যেস করলাম - এই যে আমরা যারা ধর্ম পালন করি সে সম্পর্কে তার মত কি। সে বলল "এটা যার যার ব্যাপার, কারো ইচ্ছে হলে ধর্ম পালন করবে, না হলে নাই। তোমার ধর্ম ভাল কি মন্দ সেটা তোমার দেখার, বুঝার বিষয়। এখানে আমার কিচ্ছু ভাবার নেই, আমার ধর্ম ভাল লাগেনা তাই ধর্ম মুক্ত।" কিন্তু আমাদের দেশের দিকে থাকালে দেখা যায় এখানে ধর্মে অধর্মে বিদ্বেষ, মারামারি খুনোখুনি লেগেই আছে। এরা সকলেই মানুষ অথচ এদের চিন্তা ভাবনা অমানুষের মত, যখন কথা বলে বিপক্ষকে আঘাত করে কথা বলে, একে অপরকে সহিংস হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আঘাতপ্রাপ্ত হলে একে অন্যকে দোষারোপ করে। আর আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতাধারীরা বসে বসে আঙ্গুল চুষে। ধর্মী অধর্মী দুই পক্ষই সম্মানিত নাগরিক হলেও রাষ্ট্র তাদের অধিকার রক্ষায় কোন ভূমিকা রাখেনা।
আমরা সকলেই মানুষ রুপে জন্মিয়া আরো বেশি মানুষ হওয়ার চেষ্টায় ব্রতি হই। একমাত্র মানুষকেই মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হয়, নাহলে তার অমানুষে রুপান্তর ঘটে। প্রচেষ্টা থাক আরো বেশি মানুষ হওয়ার।
0 মন্তব্যসমূহ